চট্টগ্রাম নগরের পাহাড়তলীতে মাকে খুনের ঘটনায় এক কিশোরী কলেজছাত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। খুনের ঘটনার পর শুক্রবার (২৪ মে) মেয়েকে হেফাজতে নেয় পুলিশ। এরপর জবানবন্দিতে দেন খুনের বর্ণনা। এ ঘটনায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
শনিবার (২৫ মে) ওই কিশোরীকে সংশোধনাগারে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, খুন হওয়া নারীর পালিত সন্তান ওই কিশোরী। ভারতীয় অভিনেত্রী ও শাস্ত্রীয় নৃত্যশিল্পী মালবিকা সেনের নৃত্য ও ইয়োগা অনুশীলনের কারণে কিশোরীর ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন মা। এ নিয়ে ঝগড়ার একপর্যায়ে মাকে কাঠের টুকরা দিয়ে মাথায় উপর্যুপরি আঘাত করে খুন করেন ওই কিশোরী।
নিহত আনোয়ারা বেগম (৫৭) নগরীর পাহাড়তলী থানার দক্ষিণ কাট্টলী ছদু চৌধুরী রোডে চৌধুরী আবাসিক এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় পালিত মেয়েকে নিয়ে থাকতেন। তাদের বাড়ি চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলায়। পালিত মেয়ে ১৭ বছর বয়সী কিশোরী স্থানীয় একটি কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।
পাহাড়তলী জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মঈনুর রহমান জানান, মেয়েটি ছিল আনোয়ারা বেগমের অত্যন্ত আদরের। সবসময় তাকে চোখে চোখে রাখতেন। মেয়ে সম্প্রতি ইউটিউবের ভিডিও দেখে বাসায় ইয়োগা, যোগাসনসহ বিভিন্ন ধরনের যোগব্যায়াম শুরু করেন। একইসঙ্গে ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্যশিল্পী মালবিকা সেনের ভিডিও দেখে তার নাচের মুদ্রা অনুশীলন করতেন। আনোয়ারা বেগম এসব পছন্দ করছিলেন না। তার মনে আরও সন্দেহ হয় যে মেয়ে অমুসলিম কোনো ছেলের সঙ্গে প্রেমে জড়িয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, এ নিয়ে তাদের মধ্যে কয়েকদিন ধরে মনোমালিন্য চলছিল। ২০ মে বিকেলে মেয়ে প্রাইভেট কোচিং শেষে বাসায় ফেরার পর নাচের মুদ্রা অনুশীলন শুরু করেন। তখন আনোয়ারা বেগম বাধা দিলে উভয়ের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়। এর একপর্যায়ে মেয়ে কাঠের টুকরা দিয়ে মায়ের মাথায় উপর্যুপরি আঘাত করেন। এতে গুরুতর জখম হয়ে অজ্ঞান হয়ে যান তিনি। ঘটনার পর ওই মেয়ে কাঠের টুকরাটি রান্নাঘরের পাশে একটি পরিত্যক্ত ডোবায় ফেলে দেয়। আমরা সেটিও উদ্ধার করেছি।
সহকারী কমিশনার মো. মঈনুর রহমান জানান, আনোয়ারা বেগমের প্রথম সংসারে তিন ছেলে আছে। প্রথম স্বামী মারা যাওয়ার পর তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সেই সংসারে কোনো সন্তান না হওয়ায় মেয়েটিকে দত্তক নিয়েছিলেন। বছরখানেক আগে দ্বিতীয় স্বামীও মারা যান। দ্বিতীয় স্বামীর বোনের লন্ডন থেকে পাঠানো টাকা এবং আগের সংসারের তিন ছেলের সাহায্য নিয়ে তিনি পালিত মেয়েকে নিয়ে থাকতেন।
গত ২০ মে রাত সাড়ে ১০টার দিকে পালিত মেয়ে আনোয়ারার আগের সংসারের বড় ছেলে আরিফুল হক মাসুমকে ফোন করে জানান, তার মাকে কে বা কারা মাথায় কাঠের টুকরা দিয়ে আঘাত করে গুরুতর জখম করেছে। মাসুম দ্রুত ওই বাসায় গিয়ে মাকে প্রথমে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। এরপর সেখান থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে নেওয়া হয়। কিন্তু আইসিইউতে শয্যা খালি না পেয়ে আরেকটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২১ মে রাত সাড়ে ১০টার দিকে তাকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় আরিফুল হক মাসুম বাদী হয়ে পাহাড়তলী থানায় মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় শুক্রবার (২৪ মে) সন্ধ্যায় আনোয়ারা বেগমের পালিত মেয়েকে হেফাজতে নেয় পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে মাকে খুনের বিস্তারিত বর্ণনা দেয় কিশোরী মেয়েটি।
জেএন/এমআর