চট্টগ্রামের অধিকাংশ উপজেলা ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সকাল থেকেই বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন। শক্তিশালী এ ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রাম নগরেও । নগরীর বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এতে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে চট্টগ্রামের বাসিন্দারা। কবে নাগাদ বিদ্যুৎ সরবরাহ ঠিক হবে সেটিও নিশ্চিত করে বলতে পারছে না সংশ্লিষ্টরা।
উত্তর চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড, হাটহাজারী, রাউজান, সন্দ্বীপ, ফটিকছড়ি, মিরসরাই, রাঙ্গুনিয়া ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের বোয়ালখালী, লোহাগড়া, সাতকানিয়া, আনোয়ারা, বাঁশখালী, পটিয়া, কর্ণফুলী ও চন্দনাইশে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক নেই।
এসব উপজেলার বাসিন্দারা বলছে, সোমবার সকাল থেকেই বিদ্যুৎ নেই। এরপর আর বিদ্যুতের দেখা মেলেনি। তবে কিছু কিছু উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকলেও সেটি একেবারে কম সময়ের জন্য।
দক্ষিণ চট্টগ্রামের ৮ উপজেলা নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১। এই ৮ উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ একেবারে নেই বললেই চলে। তীব্র ঝড়ের কারণ বিভিন্ন জায়গায় ভেঙে গেছে বৈদ্যুতিক খুঁটি, গাছ পড়ে তার ছিঁড়ে গেছে। এসব কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্ন ঘটেছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
এই ৮ উপজেলা নিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি এক হিসেবে দেখা গেছে, ঝড়ের কারণে ৭১টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে গেছে, ৯৫টি খুঁটি হেলে পড়েছে, ৩৪৯ জায়গায় তার ছিঁড়ে গেছে, ২৫টি ট্রান্সফরমার ও ৩৩০টি মিটার নষ্ট হয়ে গেছে।
চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর সভাপতি চৌধুরী হাছান মাহমুদ আকবরী বলেন, তীব্র ঝড়ের কারণে আমাদের অধিকাংশ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।ঝড়ের প্রভাবে অসংখ্য জায়গায় গাছ পড়ে, তার ছিড়ে, খুটি ভেঙ্গে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল করার জন্য সকল জনবলসহ কারিগরি টিম কাজ করছে। কিন্তু দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে কাজের অগ্রগতি মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্পুর্ন স্বাভাবিক করতে বেশ কিছু সময় লাগতে পারে। এজন্য আপনাদের সহযোগিতা ও ধৈর্য্য কামনা করছি।
বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ চট্টগ্রাম দক্ষিণের প্রধান প্রকৌশলী প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমাল ও ভারী বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম নগরীর বেশকিছু এলাকা সকাল থেকে বিদ্যুতহীন রয়েছে। অতিবৃষ্টিতে বিভিন্ন ভবনের নিচতলা এবং মিটার ইউনিট পানিতে ডুবে যাওয়ায় এসব এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে রাতে দুর্যোগের কারণে আমাদের লোড ৩৫০ মেগাওয়াটে নেমে এসেছিল। এখন সেটি ৬০০ মেগাওয়াটে উত্তীর্ণ হয়েছে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম নগরের হালিশহরে বিদ্যুৎ অফিস ও সাব-স্টেশনে পানি ঢুকে পড়ায় সকাল থেকে হালিশহর, রঙ্গিপাড়া, শান্তিবাগ, রমনা ও শ্যামলী আবাসিক এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করা হয়েছে। একইভাবে গাছ উপড়ে পড়ায় ও পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় নগরীর বেশকিছু এলাকায় সকাল থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে।
হাটহাজারীর ছিপাতলী এলাকার বাসিন্দা আরিফা সুলতানা সাইমা বলেন, ‘সকালে গেছে, এখনো আসেনি। মোবাইলে চার্জ থেকে শুরু করে নিত্যদিনের কাজ করতে বিদ্যুতের ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু বিদ্যুৎ না থাকায় বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে।’
রাউজানের বাসিন্দা মোহাম্মদ রিদুয়ান বলেন, ‘সকাল ৬টার দিকে গেছে বিদ্যুৎ। এরপর আর আসেনি।’
সীতাকুণ্ডে ভাটিয়ারী এলাকার বাসিন্দা ফাতেমা আনোয়ার ঊষা বলেন, ‘সকাল ৭টায় কারেন্ট গেছে। এখনও আসেনি।’
নগরে দিনভর ভুগিয়েছে জলাবদ্ধতা রাতে বিদ্যুৎ
সোমবার সকাল থেকে ভারি বৃষ্টির কারণে দিনভর ডুবেছিল নগরীর অধিকাংশ এলাকা। কোনো কোনো জায়গায় বুক থেকে হাঁটু সমান পানি দেখা গেছে। এতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় নগরবাসীকে। বিকেলের দিকে পানি কিছুটা কমলেও শুরু হয় বিদ্যুতের ভোগান্তি।
নগরীর দুই নম্বর গেইট, চকবাজার, ওয়াসা, হালিশহর, অক্সিজেন, মাদারবাড়ি, বাকলিয়া, চন্দনপুরা, সররঘাট এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সকাল থেকে বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর বিদ্যুৎ আসা-যাওয়ার মধ্যে ছিল। কিন্তু সন্ধ্যা থেকে বিদ্যুৎ একেবারেই নেই। বিদ্যুৎ আসার দুই মিনিটের মধ্যে আবার নাই হয়ে যাচ্ছে। এতে বাসাবাড়িতে পানির সংকট দেখা দিয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকার কারণে খাবার ও ব্যবহারের পানি তোলা যাচ্ছে না।
নগরীর ওয়াসার মোড় এলাকার বাসিন্দা মালিহা তাবাসসুম বলেন, ‘কারেন্ট নাই বললেই চলে। ৫ মিনিট থাকার পর ঘণ্টার পর ঘণ্টা কারেন্ট নাই।’
খুলশী এলাকার বাসিন্দা আনোয়ারা শিরীন বলেন, ‘বিদ্যুৎ নেই। শহরে এভাবে বিদ্যুৎ সমস্যা করলে বসবাস করা কঠিন হয়ে যাবে।’
জেএন/এমআর
