কলকাতায় খুন হওয়া ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যার তদন্তে ঘুরেফিরেই আসছে নেপালের নাম। বলা হচ্ছে, হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড আখতারুজ্জামান শাহীন নেপালে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে তিনি দুবাই হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়েছেন। কিন্তু মামলার আরেক আসামি সিয়াম এখনো নেপালেই রয়েছেন। এ কারণে, অভিযুক্তদের খোঁজে প্রতিবেশী দেশটিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের অপরাধ তদন্তকারী বিভাগ সিআইডি। শিগগির সিআইডির একটি বিশেষ দল নেপালে যাবে বলে জানা গেছে।
এমপি আনার হত্যা মামলার তদন্তে গত সপ্তাহে কলকাতায় গিয়েছিল ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান হারুন অর রশীদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল। বৃহস্পতিবার (৩০ মে) দেশে ফেরার আগে ডিবিপ্রধান সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
এসময় তিনি জানান, এমপি আনার হত্যা মামলার প্রধান আসামি আখতারুজ্জামান শাহীন গা ঢাকা দিয়েছেন। অনুমান করা হচ্ছে, তিনি নেপাল হয়ে দুবাই, তারপর যুক্তরাষ্ট্রে চলে যেতে পারেন। মামলার আরেক অভিযুক্ত সিয়াম বর্তমানে নেপালে অবস্থান করছেন। তাদের উভয়কে ফিরে পেতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের সিআইডি-ও বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে।
হারুন অর রশীদ আরও বলেন, একজন আসামি কাঠমাণ্ডুতে রয়েছেন, আরেকজন আমেরিকায়। আমার এরই মধ্যে কলকাতার পুলিশ কমিশনার, সিআইডি প্রধানের সঙ্গে কথা হয়েছে। কাঠমাণ্ডুতে সিয়ামের অবস্থানের বিষয়টি সিআইডির তদন্তকারী কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। নেপাল কর্তৃপক্ষকেও বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে অবগত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের ধারণা, এই হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড আখতারুজ্জামান শাহীন বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। বিষয়টি নিয়ে আমরা সিআইডি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। যেহেতু ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যার্পণ চুক্তি রয়েছে,আর তার বিরুদ্ধে কলকাতায় একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে, তাই শাহীনকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরিয়ে আনতে যেন তারা কথা বলে।
আসামিদের ফেরাতে বাংলাদেশ সরকারের পদক্ষেপের বিষয়ে ডিবিপ্রধান বলেন, আমরা বাংলাদেশ পুলিশের আইজির সঙ্গে কথা বলেছি। তাকে (শাহীন) ফেরত পেতে ইন্টারপোলকে চিঠি দিয়ে অবহিত করা হবে। আবার, বাংলাদেশে যে মার্কিন দূতাবাস রয়েছে, সেখানেও চিঠি দিয়ে অবগত করার পাশাপাশি সরাসরি গিয়ে কথা বলে আখতারুজ্জামান শাহীনের বিষয়টি জানানো হবে।
তিনি বলেন, অন্যদিকে, কাঠমাণ্ডুতে সিয়ামের অবস্থানের বিষয়ে আমরা জানতে পেরেছি। বাংলাদেশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আমরা এরই মধ্যে নেপালে একটি চিঠি পাঠিয়েছি এবং নেপালের সব সংস্থাকে অবগত করেছি। আমরা মনে করছি, খুব শিগগির একটি ভালো খবর আসবে।
এদিকে, সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, এমপি আনার হত্যা মামলায় হারুন অর রশীদের দেওয়া নেপাল-যোগের সূত্র ধরে সিআইডির একটি বিশেষ দল নেপাল যাচ্ছে।
এছাড়া, এই হত্যা মামলায় সিআইডির পক্ষ থেকে একটি স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম (এসআইটি) গঠন করা হয়েছে। সেখানে দু’জন ডিআইজি পদমর্যাদার কর্মকর্তাসহ ১০ জন সদস্য রয়েছেন।
তদন্তকারীদের অনুমান, অভিযুক্ত আখতারুজ্জামান শাহীন সম্ভবত দুবাই কিংবা যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন। তবে অন্য অভিযুক্ত সিয়াম এখনো নেপালেই রয়েছেন।
সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুব শিগগির নেপালের উদ্দেশে রওয়ানা দেবে সিআইডির বিশেষ দলটি।
জেএন/এমআর