অধিকাংশ নিত্যপণ্য নিম্নবিত্তের নাগালের বাইরে,অসহায় মধ্যবিত্ত

অর্থনীতি ডেস্ক :

কোরবানির ঈদের বাকি এখনো অনেকদিন বাকি। তার আগেই নিত্যপণ্যের বাজার নিম্নবিত্তের নাগালের বাইরে চলে গেছে। চড়া মূল্যের এ বাজারে অসহায়ত্ব ঘিরে ধরেছে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোতেও।

- Advertisement -

বাজারে মাছ, মাংস, ডিম এমনকি সবজিতেও দামের আগুন। ঈদকে কেন্দ্র করে এখন বাজারে পণ্যদ্রব্যের দাম ওঠানামা করছে। রোজার ঈদের আগে থেকেই সব ধরনের মুরগির মাংসের দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও শুক্রবার কিছুটা কমেছে।

- Advertisement -google news follower

এদিকে তেলাপিয়া কিংবা পাঙাশ, কার্ফু কিংবা ব্রিগেড সব মাছের দামই বাড়ন্ত। এরপরও মধ্যবিত্তের বাজারের ব্যাগে কম-বেশি মাছ উঠলেও নিম্ন মধ্যবিত্তের দীর্ঘশ্বাস মাছ বাজারে হাঁক-ডাকেই মিলিয়ে যাচ্ছে।

শুক্রবার বিকেলে এবং শনিবার সকালে চট্টগ্রামের বিভিন্ন বাজারের তথ্য অনুযায়ী, ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে দুই শ’র নিচে। একই সঙ্গে কমেছে কক মুরগি ও লেয়ার মুরগির দামও। বিক্রেতারা বলছেন, কোরবানি ঈদ আসছে বলেই এখন মুরগির দাম কমেছে।

- Advertisement -islamibank

বাজারে একটু বড় সাইজের পাঙাশ মাছ কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ২০০-২৫০ টাকায়, তেলাপিয়া বিক্রি হচ্ছে ১৮০-২২০ টাকায়। এই দামে মধ্যবিত্ত শ্রেণি মাছের স্বাদ নিতে পারলেও নিম্নবিত্ত কিংবা শ্রমজীবী মানুষজন কেনার কথা চিন্তাও করতে পারছেন না।

চট্টগ্রাম নগরীরর রেয়াজউদ্দিন বাজার ও তার আশেপাশের এলাকা ঘুরে দেখা যায়, হরেক রকমের এবং ভিন্ন-ভিন্ন প্রজাতির ছোট-বড় মাছের ব্যাপক সমাহার।

রুই, কাতলা, ইলিশ, গলদা চিংড়ি, বাগদা চিংড়ি, হরিণা চিংড়ি, কার্ফু, নলা, কই (দেশি), কই (থাই), শিং, মাগুর, শৈল, টেংরা, পাঙাশ, তেলাপিয়া, কাচকি, মলা, পাবদা, রূপচাঁদা, আইড়, শিং, টাকি, বোয়ালসহ বাজারজুড়ে অসংখ্য মাছ উঠেছে। তবে এসব মাছ একদামের ঘরে আটকে আছে।

বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুক্রবারের বাজারে ইলিশ মাছ ওজন অনুযায়ী ১৪০০-১৮০০ টাকা, প্রতি কেজি বড় রুই মাছ ৩০০-৩৫০ টাকা, মাঝারি রুই ২৬০-২৯০ টাকা, রুই মাছের পোনা ২০০-২৫০ টাকা, কাতলা ৩০০-৩৫০ টাকা, বড় পাঙাশ ২০০-২৫০, ছোট পাঙাশ ১৫০-২০০ টাকা, পাবদা (আকারভেদে) ৪০০-৬০০ টাকা, গলদা চিংড়ি (আকারভেদে) ৬৫০-৭৫০ টাকা ও শিং মাছ (দেশি ও থাই) ৩০০-৫৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

আবার ছোট, মাঝারি, বড় ইলিশ যথাক্রমে ৭০০-৮০০, ১০০০-১৩০০ টাকা কেজি দামে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ছোট মাছও বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে। কাঁচকি মাছ ৩০০ টাকা, মলা মাছ ৩০০-৪০০ টাকা, কৈ মাছ ৩৬০ টাকা কেজি দামে বিক্রি হচ্ছে।

অন্যদিকে সামুদ্রিক মাছের মধ্যে সুরমা, রূপচাঁদা, লাল কোরাল এবং বাটা মাছ ২০০-১২০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। তবে বাজারভেদে এসব মাছের দাম ১০-৩০ টাকা পর্যন্ত কম-বেশি হতে দেখা গেছে।

সাগর জলদাস নামে এক মাছ বিক্রেতা বলেন, মাছের দাম আগে যেমন ছিল আজও তেমন আছে। হয়তো ছুটির দিন হিসেবে পাঁচ-দশ টাকা এদিক-সেদিকে হচ্ছে।

ইসলাম আহমেদ নামে আরেক বিক্রেতা বলেন, ‘শুক্রবার দিন আমরা বেশি করেই মাছ রাখি। কারণ সবাই ছুটির দিন হিসেবে একটু বেশি কেনাকাটা করে। অনেকেই পুরো সপ্তাহের কেনাকাটা করে রাখে। বিক্রিও ভালোই হয়। আর দামও আগের মতোই আছে।

মাছ চাষেও এখন অনেক বেশি খরচ। তারপর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে চট্টগ্রামে আনার পরিবহণ খরচও বেশি। সব মিলিয়ে খুচরা বাজারগুলোতেই বাড়তি দামের প্রভাব একটু রয়েছে।

এদিকে ক্রেতারা বলছেন, একটু ভালো এবং বড় সাইজের মাছ নিতে হলে দেড় হাজার টাকার নিচে নেওয়া যাচ্ছে না। সেটা রুই হোক আর কাতলা হোক। আর পাঙাশ মাছ একটি নিতে গেলেও ৫০০-৭০০ টাকার ওপর দাম পড়ে যায়। সেজন্য এখন মাছ ভাগ হিসেবে কেনার সুযোগ থাকা দরকার।

চবির শিক্ষার্থী রোমেল বলেন, ‘মেসের জন্য বাজার করতে এসেছি। এখন মাথা ঘুরে যাচ্ছে। এক মাছ কিনেই মনে হচ্ছে সব টাকা শেষ হয়ে যাবে।

তেলাপিয়া আর পাঙাশ ছাড়া অন্য কোনো মাছ কেনার সাহস করতে পারছি না। দাম এমন বেশি হলে আমাদের মতো শিক্ষার্থী বা মেসের বাসিন্দাদের মাছ খাওয়া ছেড়ে দিতে হবে।

আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র করে মুরগির মাংসের দাম কমলেও বেড়ে চলেছে আলু, পেঁয়াজ, রসুনের মতো পণ্যের দাম। কোরবানির ঈদে এসব পণ্যের চাহিদা বেশি থাকায় দাম বাড়ছে। আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন বিক্রেতারা।

শুক্রবার কাজির দেউরি কাঁচা বাজারের তথ্যমতে, কয়েকটি সবজির দাম ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে আবার কমেছেও কয়েকটির। তবে বেশিরভাগ সবজির দাম রয়েছে অপরিবর্তিত।

বাজারে টমেটো ৮০ টাকা, দেশি গাজর ৮০ টাকা, চায়না গাজর ১২০ টাকা, লম্বা বেগুন ৬০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ৫০ টাকা, কালো গোল বেগুন ৬০ টাকা, শসা ৫০-৬০ টাকা, করল্লা ৬০ টাকা, কাঁকরোল ৭০ টাকা, পেঁপে ৪০-৫০ টাকা, ঢেঁড়শ ৪০ টাকা, পটোল ৫০-৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, ধুন্দল ৫০ টাকা, ঝিঙা ৬০ টাকা, বরবটি ৫০ টাকা, কচুর লতি ৬০ টাকা, কচুরমুখী ৮০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, সজনে ১২০ টাকা, কাঁচা মরিচ ২শ টাকা, ধনেপাতা ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর মানভেদে প্রতিটি লাউ ৫০-৬০ টাকা, চাল কুমড়া ৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতি হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা করে।

এদিকে সবজির দাম প্রায় অপরিবর্তিত থাকলেও বেড়েছে আলু, পেঁয়াজ, রসুনের দাম। শুক্রবার মানভেদে ক্রস জাতের পেঁয়াজ ৮০ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৮৫ টাকা, লাল আলু ৫৫ টাকা, সাদা আলু ৬০ টাকা, বগুড়ার আলু ৭০ টাকা, নতুন দেশি রসুন ২২০ টাকা, চায়না রসুন ২২০-২৩০ টাকা, চায়না আদা ২৬০ টাকা, ভারতীয় আদা ২৬০ দরে বিক্রি হচ্ছে।

এক্ষেত্রে দেখা যায় সপ্তাহের ব্যবধানেই ক্রস জাতের পেঁয়াজের দাম ১০ টাকা, দেশি পেঁয়াজের দাম ৫ টাকা, সাদা আলুর দাম ৫ টাকা, দেশি রসুনের দাম ২০ টাকা এবং চায়না রসুনের দাম ১০ টাকা হারে বেড়েছে।

এখন আর দাম কমার কোনো সুযোগ নেই উল্লেখ করে বিক্রেতারা বলছেন, এখন আর কমবে না, শুধু বাড়বে। ঈদের আগে পর্যন্ত এমন দামই থাকবে।

অন্যদিকে, মুরগির দাম কিছুটা কমলেও বেড়েছে গরুর মাংস ও ডিমের দাম। গরুর মাংস ৭৮০-৮০০ থাকলেও আজ তা ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১১৫০ টাকা কেজি দরে। আর মুরগির লাল ডিম ১৫০ টাকা এবং সাদা ডিম ১৪০ টাকা প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে। এক্ষেত্রে লাল ডিমের দাম প্রতি ডজনে বেড়েছে ৫ টাকা করে।

এদিকে সবকিছুর দাম বাড়তে থাকলেও মুদি দোকানের পণ্যের দাম রয়েছে অপরিবর্তিত। শুক্রবার প্যাকেট পোলাওয়ের চাল ১৫৫ টাকা, খোলা পোলাওয়ের চাল মানভেদে ১১০-১৪০ টাকা, ছোট মসুরের ডাল ১৪০ টাকা, মোটা মসুরের ডাল ১১০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৬০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৮০ টাকা, খেসারি ডাল ১২০ টাকা, বুটের ডাল ১১৫ টাকা, ডাবলি ৮০ টাকা, ছোলা ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

আর প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৭ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৪৭ টাকা, কৌটাজাত ঘি ১৩৫০ টাকা, খোলা ঘি ১২৫০ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১৪৫ টাকা, খোলা চিনি ১৩০ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১৩০ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ১৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

নগরের চকবাজার, অক্সিজেন, বহদ্দারহাট, আতুরার ডিপো, কাজীর দেউড়ি, কর্ণফুলী কমপ্লেক্স, খাতুনগঞ্জ, রিয়াজউদ্দিন বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে একই চিত্র ছিল শুক্র ও শনিবার।

জেএন/পিআর

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM