টাঙ্গাইলের এক জুট ব্যবসায়ীকে মুঠোফোনে কথার জালে ফাঁসিয়েছেন চট্টগ্রামের কর্ণফুলীর শিকলবাহা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের এস আলম গলির ভাড়াটিয়া মোহাম্মদ হোসেনের স্ত্রী পারভীন আক্তার ববি (৩৪)।
কিছুদিনের মধ্যেই ব্যবসায়ীর সাথে ভাল বন্ধুত্ব হয়। সে সুবাধে বিভিন্ন সময় ফোন করে নানা সমস্যার কথা উল্লেখ করে ওই ব্যবসায়ীর কাছে সাহায্য চাওয়া শুরু করে পারভীন আক্তার ববি। ব্যবসায়ীও সরল বিশ্বাসে তার সাধ্যমতো সহযোগীতা করার চেষ্টা করতেন।
এভাবেই একদিন ওই ব্যবসায়ীকে চট্টগ্রামে পারভীনের বাসায় ডেকে নেন। তখনই ববির আসল রুপ প্রকাশ পায়। সে প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য।
কৌশলে ফাঁদে ফেলে বাসায় ডেকে নগ্ন ভিডিও ধারণের পর নেটে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করাই মূলত পারভীন সিন্ডিকেটের পেশা।
আর গত ৩১ মে রাত সাড়ে ৮টা থেকে পরদিন রাত ১টা পর্যন্ত সেই চক্রের খপ্পড়ে পড়েছিলেন টাঙ্গাইলের ওই জুট ব্যবসায়ী। নগ্ন ভিডিও টর্চার করে লাখ টাকা দাবি করে বসে পারভীনের টিম।
তবে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী এ ঘটনায় কর্ণফুলী থানায় চারজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করলে পুলিশ শনিবার সকালে কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহা এলাকা থেকে পারভীনসহ পুরো টিমকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
গ্রেফতার পারভীনের অন্যান্য সহযোগীরা হলেন, শিকলবাহা ৪ নম্বর ওয়ার্ডের হিরার বাড়ীর মো. ওসমান গণির ছেলে মো. সাইফুল ইসলাম প্রকাশ সানি (২৪), শিকলবাহা ৩ নম্বর ওয়ার্ড আমশা পাড়ার মৃত আব্দুস সালামের ছেলে মোহাম্মদ জসিম প্রকাশ আব্দুল কাদের প্রকাশ আদিল (২৭) ও শিকলবাহা বিল্লা পাড়ার মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে মো. ইমরান (২৭)।
ভুক্তভোগীর অভিযোগে জানা গেছে, পারভীনের নিজ বাড়ি নগরীর ফিরিঙ্গিবাজার এলাকায়। সে কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের এস আলম গলিতে একটি ভাড়া বাসা নিয়ে থাকেন।
গত ৩১ মে ছেলের অসুস্থতার কথা বলে তাকে বাসায় এসে দেখে যাবার অনুরোধ করেন পারভীন। রাতে তার কথামতো ছেলেকে দেখতে মইজ্জ্যারটেকে যায়।
সেখান থেকে পারভীন ওই ব্যবসায়ীকে রিসিভ করে তার বাসায় নিয়ে যায়। রাত সাড়ে ৮টার দিকে ওই বাসায় প্রবেশ করে অকথ্য ভাষায় গালাগালি শুরু করে আদিল, ইমরান ও সানি।
এক পর্যায়ে তাকে আটকে সবাই মারধর করে শরীরের সকল জামা কাপড় খুলে ফেলেন। পরে পারভীনও নগ্ন হয়ে ছবি তুলতে শুরু করেন। শেষে ছবিগুলো পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দেবার হুমকি দিয়ে এক লাখ টাকা দাবি করেন।
টাকা দিতে অস্বীকার করলে লাঠি দিয়ে পিঠিয়ে জখম করেন এবং তার কাছে থাকা নগদ ৭ হাজার ৫শ ২০ টাকা, ইনফিনিক্স মোবাইল, ব্র্যাক ব্যাংকের এটিএম কার্ড ছিনিয়ে নেন।
পরে ব্যবসায়ীকে একটি সিএনজিতে তুলে শিকলবাহা ইউনিয়নের বলফুল ফ্যাক্টরির সামনে বিলের মাঝে হাত-পা বেঁধে রেখে পালিয়ে যান পারভীনের টিম।
সেখান থেকে স্থানীয়দের সহায়তায় মুক্ত হয়ে থানায় এসে পুলিশকে বিস্তারিত জানায়। শনিবার সকালে কর্ণফুলী থানা পুলিশের টিম অভিযান পরিচালনা করে পারভীনের পুরো টিমকে গ্রেফতার করে।
এসব তথ্য নিশ্চিত করে কর্ণফুলী থানার ওসি মো. জহির হোসেন বলেন, ‘ভিকটিমের সুনিদিষ্ট অভিযোগে অভিযুক্ত প্রতারক চক্রের ৪ জনকে গ্রেফতার করে টিম কর্নফুলী। এসময়ে ব্যবসায়ীর কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া নগদ টাকা, চেক, স্ট্যাম্প, মোবাইল এবং একটি ছুরি উদ্ধার করা হয়।
শনিবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে তাদের জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে বলে জানান কর্ণফুলী থানার ওসি মো. জহির হোসেন।
জেএন/পিআর