বাটাবাটির ঝামেলা থেকে বাঁচতে এবং খাটনি কমাতে গিয়ে বেশিরভাগ গৃহিনীই এখন প্যাকেটজাত গুঁড়ো মসলা ব্যবহার করে থাকেন। সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা বেশি লাভের আশায় ভেজাল মসলা তৈরি শুরু করছে।
দীর্ঘদিন ধরে তা চলমান থাকলেও কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে সম্প্রতি তা আরও বেড়েছে। ঠেকাতে মাঠে নেমেছে প্রশাসন।
এরপরও চট্টগ্রামে ভেজাল মসলার উৎপাদন ও বিকিকিনি যেন কোনভাবেই রোধ করা যাচ্ছে না। নগরীর একাধিক মিলে রাতের আঁধারে ভাঙানো হচ্ছে মানহীন হলুদ-মরিচ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চট্টগ্রাম নগরীর একাধিক মিলে মসলার সাইনবোর্ডে তৈরি হচ্ছে মরণ ফাঁদ। আমাদের খাওয়ানো হচ্ছে কাঠের ভুসি, ইটের গুড়া, চালের ক্ষুদ, সুজিসহ আরো বেশকিছু অখাদ্য।
ভেজাল মসলার হুমকিটা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে এতে কেমিক্যাল ও রঙের প্রয়োগ। কাপড়ে দেওয়া লাল রঙ্গের সাথে কাউন বা ইটের গুঁড়া মিশিয়ে বানিয়ে ফেলা হচ্ছে মরিচের গুড়া, ঝালভাব আনতে তাতে যুক্ত করা হচ্ছে পচা ও নিম্নমানের মরিচ।
হলুদ রঙ ব্যবহার করা হচ্ছে হলুদ গুড়ো তৈরিতে আর চোখে ধুলো দেবার জন্য দেওয়া হচ্ছে কিছুটা আসল হলুদ গুড়া।
এমন কয়েকটি ভেজাল মসলা তৈরির কারখানার সন্ধান পেয়ে অভিযান চালিয়েছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ।
বুধবার (৫ জুন) দুপুরে নগরীর খাতুনগঞ্জের সেবা গলিতে অবস্থিত বেশ কয়েকটি কারখানায় গিয়ে মেলে ভেজালের সত্যতা। দেখা যায়, কারখানাগুলোতে করাতকলের কাঠের ভূষি, ক্ষতিকর রং মিশিয়ে মরিচের গুঁড়া, হলুদের গুঁড়া তৈরি হচ্ছিল।
তাৎক্ষনিক তিনটি কারখানা সিলগালা করে দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আব্দুস সোবহান। তবে অভিযানের খবর আগে থেকে বুঝতে পেরে তিনটি কারখানার মালিক কৌশলে পালিয়ে যায়। ফলে তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।
অভিযানে সহায়তা করেন মহানগর পুলিশের একটি টিম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ বশির আহম্মেদ।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আব্দুস সোবহান জানান, সিলগালা করে দেওয়া তিনটি কারখানা থেকেই মরিচ ও হলুদের গুড়ার নমুনা সংগ্রহ করেছি। পলাতক মালিকদের খোঁজ করা হচ্ছে এবং মামলাসহ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে, বললেন এ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
সূত্র জানায়, প্রতিবছর কোরবানির আগে চট্টগ্রামের পাইকারি মসলার বাজার লাগামহীন হয়ে পড়ে। চাহিদার বিপরীতে দ্বিগুণ আমদানির পরও ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট মসলার দাম বাড়িয়ে দেয়। আর এ সুযোগে মরিচ, হলুদ, চিকন জিরা, মিষ্টি জিরা, ধনিয়ার গুঁড়া-সবকিছু ভেজাল করা হয়।
কর্ণফুলী নদীর তীরসংলগ্ন এলাকায় এ ধরনের অসংখ্য ভেজাল কারখানা গড়ে উঠেছে। নগরীর কোতোয়ালি ও বাকলিয়া থানার খাতুনগঞ্জ-চাক্তাই এলাকায় এমন ২০-২৫টি মিল রয়েছে বলে জানা গেছে।
বিভিন্ন সময় জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও র্যাবের পক্ষ থেকে এসব ভেজাল কারখানায় অভিযান চালিয়ে জড়িতদের গ্রেফতার করা হলেও অদৃশ্য ভেজালের এ কারবার কোনভাবেই থামছে না।
প্রশাসনের চোঁখ ফাঁকি দিয়ে সরু গলিতে পুনরায় শুরু করে কারবার। এসব কারখানায় তৈরি ভেজাল মেশানো হলুদ-মরিচের গুঁড়াগুলো একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীরা পাইকারিভাবে কিনে নিয়ে জেলাসদরসহ বিভিন্ন উপজেলার হাট-বাজারের মুদি দোকানগুলোতে খুচরায় বিক্রি করছে।
এসব মসলা রান্নায় ব্যবহার করে খাওয়ার পর অনেকেই বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। অপরদিকে পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এলাকার কৃষকরা।
এলাকাবাসীর অভিযোগ নজরদারীর অভাবে হলুদ মরিচ গুঁড়ার নামে বিষ খাওয়ানোর মতো এমন গুরুতর অপরাধ করেও পার পেয়ে যায় অসাধু ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণেই স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে সাধারণ জনগন।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান জানান, ভেজাল মসলা কারবারিদের বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। শীঘ্রই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান চালানো হবে।
জেএন/পিআর