আর মাত্র ক’দিন পরেই ঈদ। তার আগেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে চট্টগ্রামে আরও আড়াইশ পরিবার পাচ্ছেন মাথাগোঁজার ঠাঁই।
প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় মুজিববর্ষ উপলক্ষে নতুন ঘরগুলো দেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর ‘ঈদ উপহার’ হিসেবে হাসি ফুটবে সুবিধাভোগী এ সব পরিবারের মাঝে।
আগে থাকতেন রাস্তা,ফুটপাত কিংবা বস্তিতে। এখন থেকে থাকবেন নিজের ঘরে, নিজের জমিতে। এ যেন এক অন্যরকম অনুভূতি। এ তৃপ্তির শেষ নেই বলে মনে করছেন সুবিধাভোগীরা।
আগামী মঙ্গলবার (১১ জুন) মঙ্গলবার বেলা ১১টায় গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ঘরগুলো হস্তান্তর করবেন। এতে চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশ, মিরসরাই, সীতাকুণ্ড এবং সন্দ্বীপ উপজেলা সংযুক্ত থাকবে।
আজ সোমবার জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের পঞ্চম পর্যায়ের দ্বিতীয় ধাপে বিনামূল্যে দুই শতক জমিসহ সেমিপাকা ঘরগুলো আগামীকাল পরিবারগুলোর কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
আড়াইশ ঘরের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ভূমিহীন ও গৃহহীন ২৩৪টি এবং জরাজীর্ণ ব্যারাক প্রতিস্থাপন করে একক গৃহ নির্মাণ ১৬টি।
সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপ্ন দেখেছিলেন ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত অসাম্প্রদায়িক একটি বাংলাদেশের। যুদ্ধ বিধ্বস্ত নবীন দেশে ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারিতে নোয়াখালী সফরে গিয়ে আশ্রয়হীনদের প্রথম পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেন তিনি।
তাঁর বড় কন্যা শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে ১ম বার সরকার গঠনের পর ১৯৯৭ সালে আশ্রয়হীনদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারি অর্থায়নে প্রথম উদ্যোগ হিসেবে গ্রহণ করেন “আশ্রয়ণ প্রকল্প”।
জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীতে তাঁর কন্যা দেশের সকল ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে বাসস্থান নিশ্চিতের ঘোষণা দেন। সরকারি উদ্যোগে দেশের সকল ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ভূমি ও গৃহ প্রদানের এ নজির পৃথিবীর বুকে অনন্য।
“মুজিব শতবর্ষে একজন লোকও গৃহহীন থাকবে না”-প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তত্ত্বাবধায়নে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের মাধ্যমে সারাদেশে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ২ শতাংশ জমিসহ সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে ঘর প্রদানের কার্যক্রম গ্রহণ করেন।
তারই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম জেলায় ১ম পর্যায়ে ১৪৪৪টি ঘরের বরাদ্দ প্রদান করা হয় এবং ১৪৪৪টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।
২য় পর্যায়ে ৬৪৯টি ঘরের বরাদ্দ প্রদান করা হয় এবং ৬৪৯টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে, ৩য় পর্যায়ে ১৯৬২টি ঘরের বরাদ্দ প্রদান করা হয় এবং ১৯৬২টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে, ৪র্থ পর্যায়ে ১২২৩টি ঘরের বরাদ্দ প্রদান করা হয় এবং ১২২৩টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।
বরাদ্দপ্রাপ্ত ঘরসমূহ ইতোমধ্যে উপকারভোগীদের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে এবং উপকারভোগী পরিবারসমূহ উক্ত ঘরসমূহে বসবাস করছেন।
সন্দ্বীপ উপজেলায় নির্মাণাধীন ৪টি আশ্রয়ণ প্রকল্পের মধ্যে ৩টি আশ্রয়ণ প্রকল্প বাংলাদেশ নৌবাহিনী কর্তৃক হস্তান্তর করা হয়েছে। অবশিষ্ট ১টি আশ্রয়ণ প্রকল্প হস্তান্তর প্রক্রিয়াধীন। উক্ত প্রকল্পসমূহে ৯২৩ টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে।
৫ম পর্যায়ে এ পর্যন্ত ৩৮৮ ঘরের বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এরমধ্যে গত বছরের ১৪ নভেম্বর ৮১টি পরিবারকে গৃহ হস্তান্তর কার্যক্রম প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক উদ্বোধন করা হয় এবং উক্ত পরিবারসমূহকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।
২৩৪টি (চন্দনাইশ-১৫৫টি, মিরসরাই-৩৪টি, সীতাকুন্ড-৪৫টি) পরিবারকে গৃহ হস্তান্তর কার্যক্রম প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক আগামী ১১ জুন উদ্বোধন করা হবে। মিরসরাই উপজেলার জন্য নতুনভাবে ৭৩টি ঘরের বরাদ্দ পাওয়া গিয়েছে। যার নির্মাণ কাজ সমাপ্তির পর্যায়ে।
এছাড়াও জরাজীর্ণ ব্যারাকের স্থলে একক গৃহ নির্মাণের জন্য ১১৬ টি ঘরের বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এরমধ্যে বিগত ১৪ নভেম্বর একশ পরিবারকে গৃহ হস্তান্তর কার্যক্রম প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক উদ্বোধন করা হয়। আগামীকাল মঙ্গলবার বাকি ১৬টি পরিবারকে গৃহ হস্তান্তর করা হবে।
ইতোপূর্বে চট্টগ্রাম জেলার ১৫ টি উপজেলার মধ্যে ১২টি উপজেলা যথাক্রমে পটিয়া, কর্ণফুলী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, রাউজান, বোয়ালখালী, আনোয়ারা, ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, রাঙ্গুনিয়া, বাঁশখালী, মিরসরাই উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড, চন্দনাইশ ও সন্দ্বীপ উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করার জন্য আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প কার্যালয়ে প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছে। তিনটি উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করা হবে এবং একই সাথে চট্টগ্রাম জেলাকেও ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করা হবে।
ছিন্নমূল মানুষদের পুনর্বাসনের মাধ্যমে অন্তর্ভূক্তিমূলক উন্নয়নে শেখ হাসিনা মডেল তথা আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প বাস্তবায়নে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন বদ্ধ পরিকর।
জেএন/পিআর