মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মো. আবদুর রহমানের বাসার লিফটে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) মলয় কুমার শূরকে মারধর করে রক্তাক্ত করার ঘটনায় অভিযুক্ত জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (লিড, ডেপুটেশন অ্যান্ড ট্রেনিং রিজার্ভ) মো. আজিজুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে মামলার পাঁচদিন পরও আজিজুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ।
বুধবার মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার সাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮-এর বিধি ১২ (১) মোতাবেক ১৯ জুন চাকরি থেকে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
১৩ জুন রাজধানীর পরীবাগ এলাকার দিগন্ত টাওয়ারে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মো. আবদুর রহমানের বাসার লিফটে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তাকে আজিজুল ইসলাম মারধর করেন। এ ঘটনার পর হামলাকারী কর্মকর্তার নতুন পদায়ন বাতিল করা হয়। ভুক্তভোগী কর্মকর্তা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) মলয় কুমার শূর শাহবাগ থানায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা তথ্য অনুযায়ী, প্রশাসনিক বিষয়ে দিকনির্দেশনার জন্য প্রাণিসম্পদমন্ত্রী তাঁর বাসভবন দিগন্ত টাওয়ারে মলয় কুমারকে আসতে বলেছিলেন। ১৩২ জুন রাত সোয়া আটটার সময় মন্ত্রীর বাসায় যান তিনি। কাজ শেষে সোয়া নয়টার দিকে টাওয়ারের লিফটে নিচতলায় নামেন।
এজাহারে বলা হয়, আজিজুল লিফটের সামনে আগে থেকেই ভারী কোনো বস্তু নিয়ে অবস্থান করছিলেন। লিফটের দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে মলয় শূরকে ধাক্কা দিয়ে লিফটের ভেতর ফেলে দেন তিনি। হত্যার উদ্দেশ্যে মাথা ও নাকে আঘাত করে জখম করেন। মলয় চিৎকার করলে নিরাপত্তা প্রহরীরা এগিয়ে আসেন। তখন ভয়ভীতি দেখিয়ে ও জীবননাশের হুমকি দিয়ে পালিয়ে যান আজিজুল। এরপর মলয়কে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। তাঁর মুখমণ্ডল ফেটে যাওয়ায় সেলাই দিতে হয়েছে এবং স্থায়ী ক্ষত হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। এ ছাড়া বুক ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হয়েছে।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাজিরুর রহমান বলেন, আসামি আজিজুলকে গ্রেপ্তার করার চেষ্টা চলছে। তিনি পলাতক আছেন।
আজিজুল ইসলামকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাঁর মোবাইল বন্ধ পাওয়া গেছে।
অভিযোগ রয়েছে, ডা. আজিজকে মন্ত্রীর পিএস ড. আবু নঈম মুহাম্মদ আবদুছ ছবুর এবং প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা পরিচালক (বাজেট) ডা. বরুন কুমার দত্ত বিভিন্নভাবে মদদ দিয়ে যাচ্ছেন। তবে এই দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
আজিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে মন্ত্রণালয়কে ১৫ জুন চিঠি দিয়েছিল অধিদপ্তর। সেই চিঠিতে বিষয়টিকে ‘ভয়াবহ হামলা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, মন্ত্রীর বাসার লিফট থেকে নামার পর আজিজুলের ভয়াবহ হামলার শিকার হয়ে মারাত্মকভাবে রক্তাক্ত জখম হয়েছেন মলয় কুমার শূর। তাঁর চোখ, কপাল, মাথা, নাকসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে পরিকল্পিতভাবে আঘাত করা হয়েছে। মলয় কুমার শূর অল্পের জন্য প্রাণে বাঁচলেও হামলার উদ্দেশ্য ও ধরন ভয়াবহ।
আজিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক মো. এমদাদুল হক তালুকদারকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা, সিরাজগঞ্জ ভেটেরিনারি কলেজ স্থাপন প্রকল্পে প্রকল্প পরিচালক হিসেবে দুর্নীতির অভিযোগ এবং দুর্নীতি ও অসদাচরণের অভিযোগে বর্তমানে দুটি বিভাগীয় মামলা চলমান থাকার বিষয়ও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
আজিজুল ইসলাম বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ধারাবাহিকভাবে করে যাচ্ছেন বলেও চিঠিতে বলা হয়েছে। এই কর্মকর্তা সরকার, মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের ভাবমূর্তি দারুণভাবে ক্ষুণ্ন করছেন বলেও তাতে উল্লেখ রয়েছে।
জেএন/এমআর