মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডুতে নতুন করে জান্তা বাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যকার যুদ্ধের তীব্রতা বেড়েছে। মঙ্গলবার রাত থেকে গতকাল বুধবার বিকেল পর্যন্ত মংডুর সংঘর্ষে কেঁপে ওঠে কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত।
এমন পরিস্থিতিতে প্রাণ বাঁচাতে মংডুর রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছে। তবে নতুন করে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্ত ও নাফ নদে অবস্থান জোরদার করেছে বিজিবি ও কোস্টগার্ড।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আরাকান আর্মি সম্প্রতি মংডু শহরের নিয়ন্ত্রণ নিতে সামরিক বাহিনীর ওপর তুমুল হামলা চালায়। শহর রক্ষায় তারাও পাল্টা জবাব দেয়। বিদ্রোহীদের হটাতে জান্তা বাহিনী আকাশপথে হামলা জোরদার করেছে।
ফলে মংডু শহরের সুদাপাড়া, হাদিবিল, নুরুল্লাপাড়া, হাইরপাড়া, মুন্নীপাড়া, সাইরাপাড়া, ফাতনজা, ফেরানপ্রু, সিকদারপাড়া, হাঁড়িপাড়া ও হেতিল্লাপাড়ার বাসিন্দারা গ্রাম ছেড়ে পালাচ্ছেন। তাদের অনেকে বাংলাদেশ সীমান্তে জড়ো হয়েছেন।
ফলে টেকনাফে রোহিঙ্গার পাশাপাশি মিয়ানমার বিজিপি সদস্যদের অনুপ্রবেশের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর বলেছে, রাখাইনে যুদ্ধের জেরে মংডু ও বুথিডংয়ে ৭০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা আটকা পড়েছে। গতকাল ভোরে টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গাদের একটি দল অনুপ্রবেশের চেষ্টা করলে বিজিবি তাদের প্রতিহত করে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
৮ এপিবিএনের অধিনায়ক অ্যাডিশনাল ডিআইজি মোহাম্মদ আমির জাফর বলেন, কয়েক মাস ধরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে যুদ্ধ চলছে। সাধারণ রোহিঙ্গারা টিকতে না পেরে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন। আমাদের দিকেও আসার চেষ্টা করছে। তবে আমরা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কঠোর অবস্থান নিয়েছি।
সীমান্তের বাসিন্দারা জানান, টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়া থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এবং সাবরাংয়ের পূর্বে নাফ নদের ওপারে মংডু শহরের অবস্থান।
মংডু শহরের নাফ নদ দিয়ে প্রবেশপথ খায়েনখালী খালের মোহনায় অনেক রোহিঙ্গা জড়ো হয়েছেন। টেকনাফ পৌরসভার চৌধুরীপাড়ার নবী হোসেন বলেন, শুনেছি, বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে।
মঙ্গলবার রাতভর ওপারে গোলাগুলি হয়েছে। বুধবার সকাল থেকেও থেমে থেমে গোলাগুলি হচ্ছে। ফলে বিজিবি বাংলাদেশ-মিয়ানমার ট্রানজিট জেটিঘাটে সাধারণ মানুষের চলাচল বন্ধ রেখেছে।
রাখাইনে বিকট বিস্ফোরণের ফলে টেকনাফ সীমান্তের মানুষ ভয়ে আছে বলে জানিয়েছেন পৌরসভার প্যানেল মেয়র মুজিবুর রহমান।
টেকনাফ ক্যাম্পের কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, দু’পক্ষের গোলাগুলিতে অনেক রোহিঙ্গা মারা যাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ ছাড়া তাদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ সীমান্তে আসছে। এপারে আসার জন্য আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। আমরা তাদের নিরুৎসাহিত করছি।
আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, রাখাইন থেকে রোহিঙ্গাদের নিশ্চিহ্ন করতে জান্তা ও বিদ্রোহীরা যুদ্ধের নামে নাটক করছে।
আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান রাখছি, মিয়ানমারে সেফজোন গড়ে তুলে রোহিঙ্গাদের সেখানে বসবাসের সুযোগ দেওয়া হোক।
বিজিবি টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, সীমান্ত অনুপ্রবেশ ঠেকানোর পাশাপাশি যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা প্রস্তুত রয়েছেন।
টেকনাফের ইউএনও আদনান চৌধুরী বলেন, ‘সীমান্তে গোলার বিকট শব্দ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে মানুষকে আতঙ্কিত না হতে অনুরোধ করা হচ্ছে।
জেএন/পিআর