দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছি। দুর্নীতি করলে কারও রক্ষা নেই। যারাই দুর্নীতি করবে, আমরা ধরব।
শনিবার জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়।
২০০৯ সাল থেকে ধারাবাহিক রাষ্ট্র পরিচালনার বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ কখনও পিছিয়ে পড়েনি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। দেশ পিছিয়ে যাবে না। যে যতই চেষ্টা করুক, দেশকে ধ্বংস করতে পারবে না। এই স্বপ্নযাত্রার আকাঙ্ক্ষা পূরণ করবে এ দেশের মানুষ। বাংলাদেশের জনগণ কর্মঠ, সৃজনশীল। তবে কিছু কিছু দুষ্টু প্রকৃতির থাকে। ওগুলোকে ধর্তব্যে নিই না।
বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখার বিষয়ে সংসদ সদস্যদের বক্তব্যের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ সুযোগ খালেদা জিয়া নিয়েছিল, ড. কামাল হোসেনসহ আরও অনেকেই নিয়েছিল। জেনারেল এরশাদ সাহেবও মনে হয় করেছে। আমাদের বিরোধীদলীয় নেতা করছেন কিনা সেটা দেখতে হবে।
বিরোধীদলীয় নেতা জি এম কাদেরের বক্তব্যের জবাবে সরকারপ্রধান বলেন, টেন্ডারের শুভঙ্করের ফাঁকির কথা তিনি বলেছেন। টেন্ডার না দিয়ে কাজ দেওয়ার কথা বলেছেন। তিনিও তো মন্ত্রী ছিলেন; টেন্ডার না দিয়ে কাজের মাধ্যমে কিছু উপার্জন করার বিষয় মনে হয় তিনি নিজেই রপ্ত করেছেন।
মেট্রোরেল নির্মাণের বিরোধিতাকারীদের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চলছে। এই মেট্রোরেলে ২ লাখ ৪০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন। কিছু অর্থনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, মানে আঁতেল বলেছিলেন, মেট্রোরেলের কী প্রয়োজন ছিল? ৩০ হাজার কোটি টাকা খরচ করে মেট্রোরেল না করলেই চলত। এটা তো অপচয়। তিন হাজার কোটি টাকা দিয়ে বাস কিনলেই তো যানজটমুক্ত হবে। এই হলো বুদ্ধিজীবীদের বুদ্ধি! এখন মেট্রোরেল মানুষের জীবন, বিশেষ করে নারীদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদে চলাচলের সুযোগ করে দিয়েছে। বুদ্ধিজীবীরা এখন কী বলবেন, সেটা আমার একটু জানতে ইচ্ছে করে। তাদের সঙ্গে দেখা হলে একটু জিজ্ঞাসা করতে পারতাম।
তিনি বলেন, এমআরটি লাইন-১, লাইন-২, লাইন-৪ ও লাইন ৫-এর কাজ পর্যায়ক্রমে ২০৩০ সালের মধ্যে সম্পন্ন করলে ঢাকা শহরে আর যানজট বলে কিছু থাকবে না। মানুষ খুব আরামে চলাচল করতে পারবে। তাদের জীবনমান উন্নত হবে। বিভাগীয় সব শহরে মেট্রোরেল চালুর পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।
ফেনী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ তৈরির পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এটা হলে সাগরপাড় দিয়ে গাড়িতে করে একেবারে কক্সবাজার পৌঁছানো যাবে। এতে মীরসরাই থেকে টেকনাফ পর্যন্ত শিল্প-বাণিজ্য ও পর্যটন বিকশিত হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বর্তমানে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। এই ভর্তুকি ধীরে ধীরে কমাতে হবে। এ খাতে আমরা কেন ভর্তুকি দেব? বেশি বেশি এয়ারকন্ডিশনার, ফ্রিজ, লিফট চলার জন্য দেব? তা তো দেব না। উৎপাদনের খরচটা অবশ্যই দিতে হবে। তবে আমরা হঠাৎ করে এটা করছি না। সহনশীল করে ধীরে ধীরে এটা করা হচ্ছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ব্যবস্থা আমরা করছি। আমরা এলএনজিতে ভর্তুকি দিই। ভবিষ্যতে সেই ভর্তুকি দেওয়া হবে না।
২০২৫ সালের ১ জুলাই থেকে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে শ্রেণি-পেশা নির্বিশেষে বাংলাদেশের সব নাগরিকের জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি হবে। ভবিষ্যৎ আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। এখানে রাজনীতিবিদ, চিকিৎসক, শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী, ব্যবসায়ী, কৃষক-শ্রমিক সবাই যুক্ত হতে পারেন।
আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ইশতেহার ভুলে যায়নি
আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ইশতেহার ভুলে যায়নি বলে মন্তব্য করেছেন দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমরা যে ওয়াদা দিয়ে থাকি, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় এসেছি, তা আমরা পালন করি। বাজেটে আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার এবং মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনের দিকনির্দেশনা উঠে এসেছে।
তিনি বলেন, কেউ কেউ বাজেটকে উচ্চাভিলাষী বলেছেন। তবে এ বাজেটকে মোটেই উচ্চাভিলাষী মনে করি না। আমাদের ইচ্ছা দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন। সে জন্যই উন্নয়ন বাজেট। দেশের মানুষের যে উন্নয়ন করেছি, সেই গতিধারাটা অব্যাহত থাকুক, সে লক্ষ্য নিয়েই বাজেট প্রণয়ন করেছি। এখানে কমানোর কিছুই নেই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঋণের চাহিদা, অর্থের জোগান, ব্যাংক আর গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে সুদের নির্ধারণ পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে। এসব পদক্ষেপকে ফলপ্রসূ করতে সংকোচন নীতি অবলম্বন করা হয়েছে। যার প্রতিফলন এ বাজেটে রয়েছে। এ ছাড়া কম গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন খাতে ব্যয় কমানোর পদক্ষেপ নিয়েছি। এসব পদক্ষেপের কারণে ২০২৪-২৫ অর্থবছর নাগাদ মূল্যস্ফীতি আরও নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হবো।
বেকারত্বের হার তিন ভাগ দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেটাও যদি সবাই চায় কাজ করতে পারে। সেই সুযোগ সৃষ্টি করেছি। শিক্ষা ব্যবস্থা যুগোপযোগী করে প্রযুক্তি শিক্ষায় জোর দিয়েছি।
তিনি বলেন, দেশে কিছু আঁতেল আছেন, তারা সবকিছুতেই সমালোচনা করেন। ঋণখেলাপি নিয়ে অনেক কথা, মন্দ ঋণ নিয়ে অনেক কথা। ২০০৯ সালে জিডিপির আকার ছিল ১০২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তখন ঋণের পরিমাণ ছিল মাত্র ২২ হাজার কোটি টাকা। মন্দ ঋণ ছিল ১০ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০২৩ সালে জিডিপির পরিমাণ ৪৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা। মন্দ ঋণের হার হচ্ছে ৯ দশমিক ৯ শতাংশ। অর্থাৎ এটা কিন্তু হ্রাস পেয়েছে। সেটাকে বলার সময় উল্টো টাকার অঙ্ক বলে কিন্তু শতাংশ বলা হয় না। সেখানে শুভঙ্করের ফাঁকি দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। এইভাবে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবেন না।
জেএন/এমআর