প্রাণ ফিরেছে বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকতের শহর কক্সবাজারে। লাখো পর্যটকে ভরপুর এখন সমুদ্রসৈকত। সকালে পর্যটকেরা দলবেঁধে সমুদ্রসৈকতের কোমর সমান পানিতে নেমে গোসল করছেন। বিকেলে সৈকতে দাঁড়িয়ে পশ্চিমাকাশে অস্ত যাওয়া লাল সূর্য দেখা আর অন্য সময় পাহাড়-নদী-সাগর আর পাহাড়ি ঝরনা ঘুরে সময় পার করছেন পর্যটকেরা।
গত কয়েকদিনে কক্সবাজারে এসেছেন উল্লেখযোগ্যসংখ্যক পর্যটক। ফলে ভরপুর হয়ে আছে এখানকার হোটেল-মোটেল, গেস্ট ও রেস্টহাউসগুলো। পদচারণা বেড়েছে সৈকতের বালিয়াড়িতেও। পর্যটকদের অনেকে মেরিনড্রাইভ সড়ক হয়ে যাচ্ছেন হিমছড়ি-ইনানী। আবার অনেকে ট্রলার আর জাহাজে ছুটছেন প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন, সোনাদিয়া আর মহেশখালী।
হোটেল-মোটেল মালিকরা বলছেন, পর্যটকরা কক্সবাজার এলে কেবল শহরের সমুদ্রসৈকতেই ঘুরে বেড়ান না, পাশাপাশি ইনানীর পাথুরে সৈকত, হিমছড়ির পাহাড়ি ঝরণা ও দরিয়ানগর পর্যটনপল্লী, টেকনাফের মাথিনকূপ, কুদুমগুহা, নেচার পার্ক, নাফ নদীর জালিয়া দ্বীপ, মিয়ানমার সীমান্ত, প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন, ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক, রামুর বৌদ্ধপল্লীসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ভ্রমণে যান। এছাড়াও পর্যটকদের সমুদ্রদর্শনের জন্য সৈকতের লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্টে চেয়ার ও ছাতাগুলো সাজিয়ে বসানো হয়েছে। পর্যটকরা সমুদ্রদর্শনের জন্য চেয়ারে বসলে হকার কিংবা বখাটেরা যাতে উৎপাত না করে, সেদিকে বিশেষ নজরও রাখা হচ্ছে। পর্যটকের সঙ্গে ভালো আচরণ করার জন্য কর্মচারীদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
হোটেল মালিকেরা বলছেন, পর্যটকদের এই দৌড়ঝাঁপ ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে আসা আব্দুল বারেক ও শাওন জানান, বাচ্চাদের পরীক্ষা শেষ হয়েছে। ভাবলাম জাতীয় নির্বাচনের প্রভাব পড়ার আগেই না হয় বাচ্চাদের নিয়ে একটু কক্সবাজার থেকে ঘুরে আসি। এখানে এসে খুবই ভালো লাগছে। কোন ধরনের ঝামেলা ছাড়া আমরা বিভিন্ন পর্যটন স্পটে ঘুরে বেড়াতে পারছি। বিগত বছরগুলোতে অনেক টেনশনে থাকতে হতো কখন ঢাকা ফিরব, কোন ঝামেলায় পড়তে হবে না তো, এমন সব আশংকা লেগেই থাকতো। এখন সেরকম কোন অবস্থা দেখছি না।
হোটেল দি কক্স টুডের ব্যবস্থাপক আবু তালেব শাহ জানান, ছুটি কাটাতে আসা পর্যটকদের জন্য সৈকত তীরের ছোট-বড় সব হোটেল অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। এখন কক্ষ বুকিং না পেয়ে বহু পর্যটক দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
সৈকতের ছাতা ব্যবসায়ী মাহাবুবুর রহমান জানান, সৈকতের কলাতলী থেকে শৈবাল পয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটারে পর্যটকদের বালুচরে বসে সমুদ্র বিনোদন উপভোগের জন্য তাঁরা অন্তত তিন হাজার ছাতাচেয়ার বসিয়েছেন। কিন্তু পর্যটকের উপচে পড়া ভিড়ে অনেককে তাঁরা চেয়ার দিয়ে সন্তুষ্ট করতে পারছেন না।
ট্যুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমান জয়নিউজকে বলেন, ‘লাখো পর্যটক নিরাপদে এবং নিবিঘ্নে সৈকতে ঘুরতে পারছে, এতেই আমরা খুশি। পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা প্রতিটি পয়েন্টে সতর্ক রয়েছেন। আমরা চাই পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে এখানকার পর্যটনশিল্প বহুদূর এগিয়ে যাক।’