সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় অনুষ্ঠান শ্রী শ্রী জগন্নাথদেবের রথযাত্রা উৎসব আজ রোববার (৭ জুলাই)। সনাতনী রীতি অনুযায়ী, প্রতি বছর চন্দ্র আষাঢ়ের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে শুরু হয় জগন্নাথদেবের রথযাত্রা।
বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রাসহ নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানমালার মাধ্যমে আনন্দমুখর পরিবেশে ৯ দিনব্যাপী শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা মহোৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।
আগামী ১৫ জুলাই বিকেল ৩টায় উল্টো রথের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে এই উৎসব শেষ হবে।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, জগন্নাথদেব হলেন জগতের নাথ বা অধীশ্বর। জগৎ হচ্ছে বিশ্ব আর নাথ হচ্ছেন ঈশ্বর। তাই জগন্নাথ হচ্ছেন জগতের ঈশ্বর। তার অনুগ্রহ পেলে মানুষের মুক্তিলাভ হয়।
জীবরূপে তাকে আর জন্ম নিতে হয় না। এই বিশ্বাস থেকেই রথের ওপর জগন্নাথ দেবের প্রতিমূর্তি রেখে রথ নিয়ে যাত্রা করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
রথে বর্ণিত তিনজন দেবতা অধিষ্ঠিত থাকেন। ভক্তরা এই যানটিকে একটি নির্দিষ্ট দেবালয় বা মন্দির থেকে রশি দিয়ে টেনে নিয়ে আবার আগের স্থানে ফিরিয়ে আনেন। ভক্তদের এমনই বিশ্বাস যে, রথযাত্রার দিনে রথের রশি ধরে টানলে সব পাপ ক্ষয় হয়ে পুণ্য সঞ্চয় হয়। সবকিছুর মূলে ভক্তি।
পুরাণে আছে– ‘জগন্নাথ দেবের রথের দড়ি স্পর্শ করলে পুনর্জন্মের কষ্ট ভোগ করতে হয় না। অর্থাৎ জন্ম-মৃত্যুর আবর্তে আর আবর্তিত হতে হয় না। রথ দর্শন করে দড়ি ধরে টানলে ভক্তগণ পুণ্যলাভ করেন।’
মূলত রথযাত্রার সময় ভগবানই ভক্তের কাছে নেমে আসেন। এটিই আধ্যাত্মিক সত্য। সবাই একত্রে রথের রশি ধরে টানেন। এতেই পারমার্থিক কল্যাণ সাধিত হয়।
আর ভক্তদের পুণ্যলাভ করার সুযোগ করে দিতে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রাসহ নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানমালার মাধ্যমে আনন্দমুখর পরিবেশে ৯ দিনব্যাপী শ্রী শ্রী জগন্নাথদেবের রথযাত্রা মহোৎসবের আয়োজন করা হয় চট্টগ্রামে।
আজ নগরে বেলা ২টা থেকে তিনটি মন্দির থেকে লাখো ভক্ত–পূজারীর অংশগ্রহণে রথযাত্রা বের হবে। এ লক্ষ্যে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) রথযাত্রার রুট নির্ধারণ করেছে। বেলা ১১টার পর থেকেই ভক্তকুলের অপেক্ষার পালা শুরু হয়ে গেছে।
সড়কের আশে পাশে শ্রী শ্রী জগন্নাথদেবের আরাধনা শুরু হয়ে গেছে। ভক্তরা অধির আগ্রহে অপেক্ষায় আছে কখন সে কাঙ্কিত পূণ্যলাভের সুযোগ মিলবে।
জানা গেছে, তুলশীধামের রথযাত্রা যাবে বোস ব্রাদার্স থেকে রাইফেল ক্লাব, আমতল, নিউ মার্কেট মোড় (বামে মোড়), জিপিও, কোতোয়ালী মোড় (বামে মোড়), কোর্ট বিল্ডিং উঠার মুখ, লালদীঘি উত্তর পাড়, বক্সির বিট, আন্দরকিল্লা, জেএমসেন হল, চেরাগি পাহাড়, জামালখান মোড়, সার্সন রোড, কাজীর দেউড়ি, নেভাল এভিনিউ, লাভ লেন, বৌদ্ধ মন্দির, নন্দনকানন ১ নম্বর গলি ও বোস ব্রাদার্স (তুলসীধাম)।
রাধামাধব মন্দির (ইসকন) নন্দনকাননের রথযাত্রা যাবে ডিসি হিল, বৌদ্ধ মন্দির, হেমসেন লেন, চেরাগী পাহাড়, জেএমসেন হল, আন্দরকিল্লা, বক্সির বিট, লালদীঘির উত্তর পাড়, সোনালী ব্যাংক, কোতোয়ালী মোড়, জিপিও গ্যাপ, নিউ মার্কেট মোড়, আমতল, রাইফেল ক্লাব, পুলিশ প্লাজা (বোস ব্রাদার্স) ও নন্দনকানন ১ নম্বর গলি।
আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) রথযাত্রা যাবে প্রবর্তক মোড়, গোলপাহাড় মোড়, চট্টেশ্বরী মোড়, আলমাস, কাজীর দেউড়ি, আসকার দীঘির উত্তর পাড়, সার্সন রোডের মাথা, জামালখান মোড় (খাস্তগীর স্কুল), চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব, চেরাগী পাহাড়, জেএম সেন হল, আন্দরকিল্লা, বক্সির বিট, লালদীঘির উত্তর পাড়, সোনালী ব্যাংক, কোতোয়ালী মোড়, নিউ মার্কেট, আমতল, রাইফেল ক্লাব, সিনেমা প্যালেস ও হাজারী গলি (কেসি দে রোড)।
বেলা ২টা থেকে রথযাত্রার জন্য চট্টেশ্বরী মোড়, ওয়াসা মোড়, স্টেডিয়াম গোল চত্বর/রেডিসন ব্লু, নেভাল মোড়, নূর আহম্মদ সড়কের মাথা, এনায়েতবাজার মোড়, তিনপোলের মাথা, নিউমার্কেট, আলকরণ রোডের মুখ (জিপিও), কোতোয়ালীর মোড়, লালদীঘির উত্তরপাড়, আন্দরকিল্লা মোড়, গণি বেকারি, সার্সন রোডের মুখে রোড ব্লক স্থাপনের মাধ্যমে ডাইভারশন দেওয়া হবে।
ফলে রথযাত্রা অভিমুখে সব ধরনের যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। তাই সব ধরনের যানবাহনের চালক ও যাত্রীসাধারণসহ সংশ্লিষ্টদের রথযাত্রাকালীন সড়কগুলো এড়িয়ে বিকল্প সড়ক ব্যবহারের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
আগামী ১৫ জুলাই উল্টো রথের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে এ উৎসব শেষ হবে।
জেএন/পিআর