কোটাবিরোধীদের ধৈর্য ধরার অনুরোধ অ্যাটর্নি জেনারেলের

অনলাইন ডেস্ক

আদালতে বিচারাধীন বিষয়ে রাজপথে আন্দোলন না করে কোটা আন্দোলনকারীদের ধৈর্য ধরার অনুরোধ জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমনি উদ্দিন।

- Advertisement -

রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আদালত (হাইকোর্ট) একটি আদেশ (কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা) দিয়েছেন। সে আদেশের বিরুদ্ধে সরকার তো আপিল বিভাগে গিয়েছে। এই মুহুর্তে, আদালতের প্রতি যে আন্দোলনটা (কোটাবিরোধী), আমি মনে করি যে এটা না করাই উচিত হবে।’

- Advertisement -google news follower

সোমবার (০৮ জুলাই) দুপুরে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি একথা বলেন।

এক প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আমি সরকারের পক্ষ থেকে এই মামলাটা (হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন) করেছি। আমরা শুধু আইনগত বিষয়টা দেখছি। এটা (কোটা রাখা না রাখা) সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত। এইখানে আদালত কতটুকু হস্তক্ষেপ করতে পারে সেটাই আমরা আদালতের সামনে তুলে ধরেছি।’

- Advertisement -islamibank

২০১৮ সলে কোটা পদ্ধতি বাতিল করার আগ পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষণ করা হতো। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ছিল ৩০ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, জেলা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৫ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ১ শতাংশ কোটা। এই কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে ছয় বছর আগে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানের আন্দোলন গড়ে তোলেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশিরা।

সে সময় এ আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন নুরুল হক নুরসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

এ আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি পর্যালোচনা করতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের নেতৃত্বে ২০১৮ সালের ২ জুন একটি কমিটি করে সরকার। সব কাজ শেষে সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে কোনো কোটা না রেখে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের নিয়ম চালু করতে ২০১৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কাছে সুপারিশ জমা দেয় কমিটি। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পাওয়ার পর ৩ অক্টোবর তা মন্ত্রিসভার বৈঠকে তোলা হলে সেখানে কোটা বাতিলের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। পরদিন ৪ অক্টোবর কোটা পদ্ধতি বাতিল করে পরিপত্র জারি করেন জনপ্রশাসন সচিব।

পরিপত্রে বলা হয়, নবম গ্রেড (আগের প্রথম শ্রেণি) এবং দশম থেকে ১৩তম গ্রেডের (আগের দ্বিতীয় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হল। এখন থেকে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে।

২০২১ সালে কোটা পদ্ধতি বাতিলের এই পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি অহিদুল ইসলাম তুষারসহ সাতজন। রিটে প্রাথমিক শুনানির পর হাইকোর্ট ওই বছর ৭ ডিসেম্বর রুল জারি করেন। সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে কোটা পদ্ধতি বাতিল করা পরিপত্র কেন সেচ্ছাচারী ও আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয় রুলে।

মন্ত্রীপরিষদ সচিব, জনপ্রশাসন সচিব, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যানসহ পাঁচ বিবাদীকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। সে রুলে চূড়ান্ত শুনানির পর গত ৫ মে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্তকে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন উচ্চ আদালত। এ রায় স্থগিত চেয়ে সরকার আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করে।

গত ৯ জুন এ আবেদনে শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘হাইকোর্টের রায়ের পর সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা ফিরে আসায় নানা রকম অসুবিধা হচ্ছে। কোটা থাকবে কি থাকবে না, এটা সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়। সরকারের নীতিনির্ধারণী বিষয়ে আদালত হস্তক্ষেপ করতে পারেন না।’ অ্যাটর্নি জেনারেলেলের শুনানির পর অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ আন্দোলনের কথা তুললে, চেম্বার বিচারপতি তাঁকে আদালতে আন্দোলন টেনে না আনার কথা বলে সতর্ক করেন। আর হাইকোর্টের রায়ে হস্তক্ষেপ না করে আবেদনটি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন। সে ধারাবাহিকতায় গত ৪ জুলাই প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চে আবেদনটি শুনানির জন্য ওঠে।

অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন শুনানিতে চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলনের কথা তুলে ধরলে প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপক্ষকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপাতত হাইকোর্টের রায় যেভাবে আছে, সেভাবে থাকুক। রায় প্রকাশ হলে আপনারা নিয়মিত লিভুট আপিল করেন, আমরা শুনব। আন্দোলন হচ্ছে হোক। আন্দোলনের চাপ দিয়ে কি হাইকোর্টের রায়, সুপ্রিম কোর্টের রায় পরিবর্তন করবেন? রাজপথে আন্দোলন করে কি হাইকোর্টের রায় পরিবর্তন করবেন?

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, রায় প্রকাশ না হলে তো লিভটু আপিল করা যাবে না। রায় প্রকাশ হতে হতে তো অনেক দেরি। আপনারা (আপিল বিভাগ) যদি একটু বলে দিতেন, রায়টি যেন তাড়াতাড়ি প্রকাশ করা হয়।

তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, ঠিক আছে, আমার বলে দিবোনে। পরে আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানি মুলতবি করে নট টুডে বলে আদেশ দেন।

এ অবস্থায় সোমবার দুপুরে সাংবাদিকরা অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে গিয়ে কোটাবিরোধী আন্দোলন ও বিচারাধীন বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করেন।

জবাবে এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘উনাদের আমি বলবো, আদালতে যেটা বিচারাধীন, সে বিষয়টা রাজপথে (আন্দোলন) না করে, ধৈর্য ধরার অনুরোধ করব। উনারা (আন্দোলনকারীরা) যেন আন্দোলন না করেন। আমি ঠিক জানি না, আন্দোলনটা উনারা কেন করছেন। আমার মনে হয় আন্দোলন না করলেই ভালো হতো।’

হাইকোর্টের রায় পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও জানান রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা এ এম আমিন উদ্দিন।

জেএন/এমআর

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM