চট্টগ্রামে চালের দৈনিক চাহিদা ৮শ থেকে ৯শ মেট্রিক টন। চাহিদার তুলনায় বাজারে কোন সংকট না থাকলেও কোন কারণ ছাড়াই গেল কয়েকদিন ধরে চালের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।
শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম মহানগরীর বহদ্দারহাট, চকবাজার, ঝাউতলা বাজার, ফিরিঙ্গিবাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, পাইকারি বাজারে সব ধরনের চালে বস্তা প্রতি বেড়েছে ১শ থেকে ৩শ টাকা।
প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও। প্রতি কেজি চালেই ২ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত বেশি দিয়ে চাল কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। দাম বাড়ায় নাকাল সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যবিত্তের মোটা চালের দাম বাড়ায় ক্ষুব্ধ ভোক্তারা।
আর এজন্য পর্যাপ্ত তদারকির ঘাটতিকেই দুষছে ক্যাব। বলছে, দাম স্বাভাবিক রাখতে মাঠ পর্যায়ে ধান সংগ্রহ থেকে প্রক্রিয়াজাত করে চাল বিক্রি পর্যন্ত নজরদারি জরুরি।
পাহাড়তলির বিসমিলস্নাহ স্টোরের মালিক হাজী উকিল আহমদ সওদাগর বলেন, চাহিদার তুলনায় বাজারে চালের সরবরাহ কম। তাছাড়া চালের দাম কিছুটা বাড়িয়েছেন মিল মালিক ও আড়তদাররা। ফলে খুচরা বাজারে কেজি প্রতি ২ থেকে ৫ টাকা বেড়েছে।
অন্যান্য বাজারেও কেজিতে দুই টাকা বেড়ে প্রতি বস্তা মোটা সিদ্ধ চাল বিক্রি হচ্ছে বাইশশো টাকা। একইভাবে বাড়তি স্বর্ণা, পারিজা, পাইজাম, মিনিকেটসহ সব সিদ্ধ ও আতপ চাল। দাম বেড়েছে জিরা ও নাজির শাইলেও।
পাইকারদের দাবি, ধানের দাম বাড়ার অজুহাতে কুরবানির পর থেকে চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে মিল মালিকরা।
রাইসমিল মালিক, মোকাম মালিক ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাইকারি বাজারে মোটা চাল (স্বর্ণা ও চায়না ইরি) রোজায় ৪৫-৪৬ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছিল। এখন ২ টাকা বাড়িয়ে বর্তমানে পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ৪৭-৪৮ টাকায়।
মাঝারি মানের চালের (পাইজাম, বিআর-২৮, বিআর-২৯ ও বিআর-৪৯) কেজি ৫৪-৫৫ টাকা থেকে বেড়ে পাইকারিতে ৫৭-৫৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
চট্টগ্রামের মোটা আতপ চাল কেজিপ্রতি ৪৬ টাকা থেকে বেড়ে ৪৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মিনিকেট ও নাজিরশাইলের মতো সরু চালের কেজিপ্রতি দাম ৭০-৭৩ টাকা থেকে বেড়ে ৭৩-৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
চট্টগ্রাম নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজারে গিয়ে দেখা যায়, মোটা চাল (স্বর্ণা ও চায়না ইরি) খুচরায় বিক্রয় হচ্ছে ৫৬-৫৮ টাকা। মাঝারি মানের চালের (পাইজাম, বিআর-২৮, বিআর-২৯ ও বিআর-৪৯) কেজি ৫৯-৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আর মিনিকেট ও নাজিরশাইলের মতো সরু চালের কেজিপ্রতি ৭২-৮৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে।
রিয়াজউদ্দিন বাজারের আল ফারুক অ্যান্ড সন্সের স্বত্বাধিকারী সৈয়দুল হক বলেন, পাইকারি বাজারেও চালের দাম বেড়েছে। ফলে খুচরা বাজারেও বেড়েছে। খুচরা বাজারে চালের দাম পাইকারি পর্যায়ের দামের উপর নির্ভর করে।
মিলমালিক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, ধানের সরবরাহ কম থাকায় দামও কিছুটা বেশি। এতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়ছে।
চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের বি. বাড়িয়া অটোরাইস মিলের স্বত্বাধিকারী ফরিদ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা মূলত দিনাজপুর, ময়মনসিংহ থেকে ধান এনে এখানে ভাঙাই। ধানের দাম বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে চালের বাজারে।’
খাতুনগঞ্জের জেদ্দা অটো রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী আব্দুল গণি পেয়ার বলেন, ‘আমরা দিনাজপুর, কুষ্টিয়া ও হবিগঞ্জের মোকাম থেকে চাল সংগ্রহ করে থাকি। তারা বলছে, ধান নেই। তাই চাল নেই। বাড়তি দামে চাল কিনতে হচ্ছে।
জেএন/পিআর