৪০০ কোটি টাকার মালিক প্রধানমন্ত্রীর সেই পিয়ন জাহাঙ্গীর আলম এখন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। ঘুরে ঘুরে নিকটাত্মীয়দের বাসায় দাওয়াত খাচ্ছেন। তবে তা কেবল নিকটাত্মীয়দের বাসা। মিশছেনও কাছের মানুষদের সঙ্গে।
গত ৭ জুলাই যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগ নেতা আলামিন হাসিব নিজের ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন, তিনি সাক্ষাৎ করেছেন সাবেক মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগত সহকারী ও সাবেক নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আমাদের ভাই জাহাঙ্গীর আলম ভাইয়ের সাথে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ওয়াশিংটন ডিসি যুবলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম।
এছাড়াও ওয়াশিংটন ডিসি যুবলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলামের ফেসবুক থেকে জাহাঙ্গীর আলমের বিভিন্ন স্থানে দাওয়াতের প্রমাণ মিলছে। যেসব স্থানে জাহাঙ্গীর আলম যাচ্ছেন সেসব স্থানের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করা হচ্ছে।
জাহাঙ্গীর আলম নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার খিলপাড়া ইউনিয়নের নাহার খিল গ্রামের কেরানী বাড়ির মৃত রহমত উল্যাহর ছেলে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যুক্তরাষ্ট্রের এক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, জাহাঙ্গীর আলম দুই সপ্তাহ ধরে যুক্তরাষ্ট্রে সপরিবারে অবস্থান করছেন। তিনি ঘনিষ্ঠদের বাসায় দাওয়াত খাচ্ছেন এবং অল্প সংখ্যক মানুষের সঙ্গে দেখা করছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) সব ব্যাংকে জাহাঙ্গীর আলম ও তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের হিসাব খোলার ফরমসহ যাবতীয় তথ্য আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে পাঠাতে বলা হয়েছে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠানে উল্লিখিত ব্যক্তিবর্গ ও তাদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নামে কোনো হিসাব থাকলে সেসব হিসাবের লেনদেন মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২–এর ২৩ (১) (গ) ধারার আওতায় ৩০ দিনের জন্য স্থগিত রাখার নির্দেশনা দেওয়া হলো।
এর আগে সাম্প্রতিক চীন সফর নিয়ে রোববার সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার বাসায় কাজ করে গেছে, পিয়ন, সে এখন ৪০০ কোটি টাকার মালিক। হেলিকপ্টার ছাড়া চলে না! কী বলব, এটাই বাস্তব। আমি জানতে পেরে তার কার্ড সিজ করেছি, তাকে চাকরি থেকে বের করে দিয়েছি। যা করার আমি ব্যবস্থা নিয়েছি।’
জানা যায়, জাহাঙ্গীর আলম প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী পরিচয় দিয়ে নানা তদবির করে কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন। তিনি নোয়াখালী ও রাজধানী ঢাকায় বিপুল সম্পদ গড়ে তুলেছেন। সঙ্গে নিয়ে ঘুরতেন লাইসেন্সকৃত পিস্তল। রাজধানী ঢাকায় একাধিক প্লট-ফ্ল্যাটের মালিক হয়েছেন জাহাঙ্গীর। ধানমন্ডিতে স্ত্রীর নামে আড়াই হাজার বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন। এছাড়া নোয়াখালীর মাইজদী শহরের হরি নারায়ণপুরে তার আট তলা একটি বাড়ি রয়েছে। সেটিও তার স্ত্রীর নামে। সংসদ সদস্য হওয়ার জন্য তিনি নোয়াখালীতে বিপুল অর্থও খরচ করেছেন। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে বিশাল বহর নিয়ে তিনি সভা-সমাবেশ করতেন। এসব সভা-সমাবেশের জন্য লাখ লাখ টাকা খরচ করেছেন।
এ বিষয়ে কথা বলতে একাধিকবার জাহাঙ্গীর আলমের ব্যক্তিগত মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। হোয়াটসঅ্যাপে কল দেওয়া হলে তিনি কেটে দেন।
এদিকে সোমবার জাহাঙ্গীর আলমের সমর্থক গোষ্ঠী নামে এক ফেসবুক আইডি থেকে স্ট্যাটাস দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, আলহাজ্ব মো. জাহাঙ্গীর আলম ভাই উনি পিয়ন নয়, ওনি প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী ছিলেন। উনি হেলিকপ্টারে যাতায়াত করতেন এমন প্রমাণ কেউই দিতে পারবে না। উনার বিরুদ্ধে জাতীয় নির্বাচনের মত ভুয়া নিউজ করে লাভ নেই। এতে করে ওনার জনপ্রিয়তা আরও বাড়ছে। সাধারণ মানুষ এবং দলীয় নেতাকর্মীরা এখন সবই বুঝে। মনে রাখবেন ষড়যন্ত্রকারিরা ষড়যন্ত্র করে সাময়িক লাভবান হলেও ভবিষ্যতে তাদের ধ্বংস অনিবার্য।
জেএন/এমআর