প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মচারী থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত জাহাঙ্গীর আলমের অবশেষে তদন্ত শুরু হয়েছে। গতকাল প্রধানমন্ত্রী এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন যে, আমার একজন পিয়নও ৪০০ কোটি টাকার মালিক। সেই পিয়ন জাহাঙ্গীর আলম, তার স্ত্রী কামরুন নাহার এবং তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করার নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। সেইসঙ্গে তাদের এই হিসাব খোলার ফর্মসহ যাবতীয় তথ্য আগামী পাঁচদিনের মধ্যে পাঠাতে বলা হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) সব ব্যাংওক এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠিয়েছে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে উল্লেখিত ব্যক্তিবর্গ তাদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নামে কোনো হিসাব থাকলে সে সব লেনদেন মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ এর ২৩-গ ধারায় ৩০ দিনের জন্য স্থগিত রাখার নির্দেশ দেওয়া হল।
উল্লেখ্য যে, গত বছরের ৬ ডিসেম্বরে জাহাঙ্গীরকে গণভবনে এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয় এবং তার ব্যাপারে গোয়েন্দা তদন্ত শুরু হয়। কিন্তু তার আগেই জাহাঙ্গীর পালিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন বলে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
জাহাঙ্গীরের অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থের পরিমাণ পাঁচশ কোটি টাকার ওপর বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর তথাকথিত বিশেষ সহকারী হিসেবে থাকার সময় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের ওপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছিলেন এবং জাহাঙ্গীরকে সম্মান সমীহ করতো না-এমন আওয়ামী লীগের নেতা সংখ্যা খুব কম ছিল।
বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে যে, সেই সময় জাহাঙ্গীরের এতটাই প্রভাব ছিল যে জাহাঙ্গীরের বাবার মৃত্যুর পর ঢাকা মেডিকেল কলেজে মন্ত্রীদের ঢল নেমেছিল। ১০ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী চাটখিলে গিয়েছিলেন লাশ দাফন করতে। শুধু তাই নয়, জাহাঙ্গীর বিভিন্ন মন্ত্রীদেরকে ডেকে পাঠাতেন এবং জাহাঙ্গীরের বাড়িতে অনেক মন্ত্রী যাতায়াত ছিল। আওয়ামী লীগের নোয়াখালী অঞ্চলের একাধিক অনুষ্ঠানে জাহাঙ্গীরকে প্রধান অতিথি করা হতো। আবার তখন বিশেষ অতিথি হতেন আওয়ামী লীগের অনেক কেন্দ্রীয় নেতা।
আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা এই বাস্তবতা স্বীকার করে বলেছেন যে, জাহাঙ্গীরের তখন ক্ষমতা এতটাই ছিল যে, তারা অপমানজনক হলেও এটা মেনে নিতেন।
বিভিন্ন সময় দেখা গেছে যে, জাহাঙ্গীর প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিভিন্ন আওয়ামী লীগ নেতা এবং মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে সত্য, মিথ্যা নানা কথা বলতেন। অনেকে হয়তো প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতের জন্য জাহাঙ্গীরের কাছে ধর্না দিত। জাহাঙ্গীর তাদের কাছ থেকে উৎকোচ নিতো এবং প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে দিতো। গণভবনের পাস দেয়ার ক্ষেত্রেও জাহাঙ্গীর প্রভাব বিস্তার করতো। অনেক বিতর্কিত ব্যবসায়ীকে গণভবনে ঢুকিয়ে দিয়ে মোটা অঙ্কের আর্থিক লেনদেন করতো জাহাঙ্গীর। আর এ সমস্ত বিষয়গুলো যখন প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসে তখন প্রধানমন্ত্রী বিষয় তদন্তের জন্য নির্দেশ দেন এবং তদন্তের পর জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, জাহাঙ্গীরের এখন দেশে সম্পদের পরিমাণ খুবই কম। ঢাকায় তার কয়েকটি বাড়ি রয়েছে। নোয়াখালীতে তার প্রসাদসম বাড়ি রয়েছে। এছাড়া কিছু জমিজমা রয়েছে। তবে অধিকাংশ সম্পত্তি জাহাঙ্গীর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করেছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
জেএন/এমআর