আবু সাঈদের ঘরে চলছে মাতম, নিভে গেলো দরিদ্র পরিবারের আশার প্রদীপ

অনলাইন ডেস্ক

পুলিশের গুলিতে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবু সাঈদের বাড়িতে এখন চলছে শোকের মাতম। বেরোবির ১২ ব্যাচের ইংরেজি বিভাগের এই শিক্ষার্থীর বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার মদনখালি ইউনিয়নের বাবনপাড়া গ্রামে। স্বজনদের আহাজারিতে বাড়ি বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। ছোট বোন সুমির বুক ফাটা আর্তনাদ, ‘মোর ভাইয়োক মারি ফেলাইছে। হ্যামার শোক আশা ভরসা শেষ হয়া গেলো’।

- Advertisement -

মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বিকালে আবু সাঈদ নিহতের খবর টেলিভিশনের মাধ্যমে স্বজনরা জানতে পারেন। বিশেষ করে তার ছবি দেখে। এরপর থেকেই স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। খবর মুহূর্তের মধ্যে পুরো গ্রামসহ পীরগঞ্জ উপজেলায় ছড়িয়ে পড়ে।

- Advertisement -google news follower

বাবা মকবুল হোসেন ও মা মনোয়ারা বেগম ছেলের মৃত্যুতে পাথর হয়ে গেছেন। বাবা মা দুজনেই বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন বলে জানালেন ছোট বোন সুমি।

সাঈদের চাচাতো বোন মারুফা বেগম জানান, আবু সাঈদকে নিয়ে পরিবারের অনেক আশা ছিল। ছেলে লেখাপড়া শেষ করে চাকরি করে তাদের অভাবের সংসারকে আলোকিত করবে।

- Advertisement -islamibank

তিনি জানান, বাবা দিনমজুর হওয়ায় অভাব তাদের নিত্যসঙ্গী ছিল। অর্থের অভাবে লেখাপড়া একেবারে দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছিল। টিউশনি করে টাকার জোগাড় করে লেখাপড়া করেছেন।

আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন জানান, অভাবের কারণে তার ৯ ছেলেমেয়ের লেখাপড়া করাতে না পারলেও সাঈদ ছিল খুবই মেধাবী। স্থানীয় খালাসপীর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাস করার পর রংপুর সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসিতেও জিপিএ-৫ পেয়ে পাস করে। রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় ভালো ফল করে তার পছন্দের ইংরেজি বিষয়ে ভর্তি হয়। ১২তম ব্যাচের ইংরেজি বিভাগের অত্যন্ত মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল।

কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হওয়ার প্রথম থেকে আবু সাঈদ ছিলেন সামনের কাতারের যোদ্ধা। প্রতিটি মিছিলে মাথায় জাতীয় পতাকা লাগিয়ে হাতে বড় জাতীয় পতাকা নিয়ে মিছিলের অগ্রভাগে থাকতেন। তার সাহসিকতার কারণে কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম রূপকার এবং সমন্বয়ক ছিলেন।

মঙ্গলবার কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা নগরীতে মিছিল বের করে পাঁচ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন। এ সময় আবু সাঈদ তাদের সঙ্গে যোগ দেয়। এরপর ছাত্রলীগ ও পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাধে। পুলিশ শতাধিক রাউন্ড গুলি ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ আন্দোলনকারীদের হটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু আই সাঈদ একাই অবিচল দাঁড়িয়ে মোকাবিলার চেষ্টা করেন। পুলিশের সামনে বুক উঁচিয়ে দিলে লক্ষ্য গুলি করলে তার বুকে বিদ্ধ হলে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাৎক্ষণিকভাবে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

জেএন/এমআর

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM