কোটা সংস্কার আন্দোলনে গুলিতে নিহত রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ছাত্র আবু সাঈদের নামে গেট ও চত্বরের নামকরণ করা হয়েছে।
বুধবার (১৭ জুলাই) দুপুর আড়াইটায় ক্যাম্পাসে তার গায়েবানা জানাজার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ১ নম্বর গেটের নাম পরিবর্তন করে রাখেন ‘শহীদ আবু সাঈদ গেট’ এবং বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন পার্কের মোড়ের নাম রাখেন ‘শহীদ আবু সাঈদ চত্বর’।
এ বিষয়ে আবু তালেব নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের সহপাঠীকে আমরা হারিয়েছি। তাকে আর ফিরে পাবো না। কিন্তু তার নামে গেটের নাম রাখছি। যতদিন বিশ্ববিদ্যালয় থাকবে ততদিন আবু সাঈদ গেট নামে চিনবে সবাই।
সোহরাব হোসেন নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, যেই গেটের সামনে আমাদের ভাই রক্ত দিয়েছে, সেই গেটকে স্মরণীয় রাখতে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি তার নামে রাখবো।
নিহত আবু সাঈদ বোরোবির ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তিনি কোটাবিরোধী আন্দোলনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন।
বুধবার (১৭ জুলাই) সকাল সাড়ে ৯টায় রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার মদনখালী ইউনিয়নের বাবনপুর গ্রামের জাফরপাড়া মাদরাসা মাঠে তার জানাজা হয়। পরে পারিবারিক কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হন আবু সাঈদ।
এর আগে মঙ্গলবার রাত ২টার দিকে আবু সাঈদের মরদেহ তার গ্রামে এসে পৌঁছায়। মরদেহ গ্রামে পৌঁছালে সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। শোক আর কান্নায় এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে।
আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন পেশায় একজন দিনমজুর। অর্থাভাবে কোনো ছেলে-মেয়েকে লেখাপড়া করাতে পারেননি তিনি। আবু সাঈদ ছোট থেকেই ছিলেন মেধাবী। নয় ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন। তাকে ঘিরে আকাশসম স্বপ্ন ছিল দরিদ্র বাবা-মা ও ভাই-বোনদের। তাকে হারিয়ে মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে পরিবারটির। তিনি নিজ চেষ্টায় লেখাপড়া করে এতদূর পর্যন্ত গিয়েছিলেন। মেধা ও আচরণে গ্রামের সবার প্রিয় ছিলেন সাঈদ। এদিকে ছেলেকে হারিয়ে শোকে পাথর হয়ে গেছেন মা মনোয়ারা বেগম।
এর আগে ১৫ জুলাই দুপুরে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে শহরের লালবাগ এলাকা থেকে ক্যাম্পাসের দিকে যান। এরপর ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাধে। তখন পুলিশ শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট ছোড়ে। এতে নিহত হন আবু সাঈদ।
জেএন/এমআর