চট্টগ্রামের মিরসরাই পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের ফারুকীয়া রোডের বন্ধন ভবনের দ্বিতীয় তলার বি-১ ফ্ল্যাটের মেঝেতে পড়ে রয়েছে স্ত্রী সাজেদা আক্তারের রক্তাক্ত মরদেহ।
দরজার সামনে দাড়িয়ে রয়েছে স্বামী মো.মামুন চৌধুরী প্রকাশ খান সাহেব। তার মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না। শুধু ঘামছেন। ভেতরে গলাকাটা মরদেহ দেখে প্রশাসনকে অবহিত করেন প্রতিবেশী।
পরে থানা থেকে পুলিশের একটি টিম এসে ফ্ল্যাট থেকে এক নারীর গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) দুপুরের দিকে ঘটনাটি ঘটে জানিয়ে ঠিক এভাবেই ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন ওই ফ্ল্যাটের অস্থায়ী কেয়ারটেকার রোজিনা আক্তার রুমা।
সে জানায়, নিহত সাজেদা আক্তার মিরসরাই উপজেলার ১০নং মিঠানালা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের লাল মোহম্মদ চৌধুরী বাড়ির এম মামুন চৌধুরী ওরফে খান সাহেবের স্ত্রী। তাদের দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। দুই ছেলে প্রবাসে থাকেন। পাঁচ বছর ধরে স্বামীসহ তারা বন্ধন ভবনের দ্বিতীয় তলার বি-১ ফ্ল্যাটে ভাড়ায় থাকতেন।
তাদের সংসারে কখনো ঝগড়া বিবাদ হয়নি। কেন এবং কিভাবে এ ঘটনা ঘটলো বুঝতে পারছে না।
নিহতের স্বামী এম মামুন চৌধুরী (৭৫) বলেন, ‘সকালে আমার ছোট ছেলে আমজাদ হোসেন ও তার খালাত ভাই রাকিব গ্রামের বাড়িতে নির্মাণাধীন নতুন ঘর দেখতে যায়। আমি বাজার করার জন্য মিরসরাই পৌর বাজারে যাই। এ সময় বাসায় আমার স্ত্রী ও তার পরিচিত এক নারী ছিলেন।
বাজার করে বাসায় এসে স্ত্রীর কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে তার কক্ষে গিয়ে দেখি মেঝেতে দুই হাত ও দুই পা প্লাস্টিক দিয়ে বাঁধা অবস্থায় গলাকাটা মরদেহ পড়ে আছে।
এ সময় ঘর থেকে বের হতে চাইলে দেখি বাসার সামনে দিয়ে দরজা বন্ধ করে রাখা হয়েছে। পরে বাসার ভেতর থেকে চিৎকার করলে কেয়ারটেকার রুজিনা আক্তার রুমা দরজার লক খুলে দেন।
এদিকে স্থানীয়দের খবরে ঘটনাস্থলে পৌছে গলাকাটা অবস্থায় মেঝেতে পড়ে থাকা নারীর মরদেহটি উদ্ধার করে মিরসরাই থানা পুলিশ।
তবে কোনো কিছুতেই হত্যার রহস্য উদঘাটন করতে পারছিলেন না পুলিশ। নিহতের স্বামী মামুন চৌধুরী ও ছেলে আমজাদ হোসেন চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। কাজের লোককেও ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সবাই খুনের বিষয়টি অস্বিকার করেন।
পরে একটি মোটরসাইকেলের সূত্র ধরে পুলিশ অভিযান শুরু করে। মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে জোরারগঞ্জ এলাকা থেকে তারিফুল ইসলাম (৩০) নামে একজনকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হয়।
এরপর তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী জোরারগঞ্জ মৌলভী নজির আহম্মদ মাদরাসার একটি কক্ষ থেকে ব্যাগ জব্দ করার পর তল্লাশি চালিয়ে স্বর্ণালংকার, ছুরি ও রক্তমাখা জামাকাপড় উদ্ধার করে টিম মিরসরাই।
মরদেহ উদ্ধার ও হত্যাকাণ্ডে জড়িত একজনকে গ্রেফতারের তথ্য নিশ্চিত করেছেন মিরসরাই থানার পরিদর্শক (তদন্ত) দীপ্তেষ রায় জানান, মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
মূলত টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করার জন্যই বোনের শাশুড়িকে হত্যা করেছে তারিফুল ইসলাম। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, খুনের পর জামাকাপড় পরিবর্তন করে বেরিয়ে যান। পরে অন্যদের সঙ্গে ঘটনাস্থলে এসে সহমর্মিতাও জানান।
মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহীদুল ইসলাম জানান, তারিফুল ইসলাম নিহত নারীর বড় ছেলের স্ত্রীর ভাই। সে মিরসরাই সদর ইউনিয়নের পাত্তার পুকুর এলাকার দ্বীন মোহাম্মদের ছেলে। তার কাছ থেকে লুট করা ১০ ভরি স্বর্ণালংকার, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি ও রক্তমাখা জামাকাপড় উদ্ধার করা হয়েছে।
হত্যাকাণ্ডে আরও কেউ জড়িত কি না জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। হত্যার ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বললেন ওসি শহীদুল।
জেএন/পিআর