হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দেশি ও বিদেশি ষড়যন্ত্রে পা না দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) নওগাঁর পত্নীতলা ব্যাটালিয়নের লেফটেন্যান্ট কর্নেল হামিদ উদ্দিন।
তিনি বলেছেন, ‘হিন্দু, খ্রিস্ট্রান, বৌদ্ধ ধর্মের ভাইয়েরা আমাদের ভাই, আমি তাদের সংখ্যালঘু বলি না। আমরা ভাই-ভাই। আমার মুসলিম ভাইয়ের যা অধিকার, হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ ধর্মের ভাইদেরও একই অধিকার। কোথাও কোনো কমতি নেই। এই দেশটা আমাদের সবার।’
শনিবার (১০ আগস্ট) বিকেল ৩টার দিকে জয়পুরহাট জেলার সীমান্তবর্তী পাঁচবিবি উপজেলার দামদরপুর রাধা-গোবিন্দ মন্দির প্রাঙ্গণে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের সঙ্গে মতবিনিময় করে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় সেখানে পাশের কয়েকটি গ্রামের হিন্দু ধর্মালম্বী প্রায় ৩০০ পরিবারের লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল হামিদ উদ্দিন বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দিন কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা, সেটি বোঝা বড় কঠিন ব্যাপার। অনেক আগের ছবি দিয়ে মিথ্যা প্রচার করা হচ্ছে। এসব আপনারা মাথায় নেবেন না। দেশের এমন পরিস্থিতিতে কিছু লোক সংখ্যালঘুদেরকে বিপদে ফেলে দিতে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে।আপনারা দেখবেন আপনার এলাকায় কিছু হচ্ছে কি-না। বাইরের প্রপাগাণ্ডা মাথায় নেবেন না। আপনারা এখানকার আসল মানুষ। এখান থেকে আপনাদের যাওয়ার মানসিকতা কেন হবে? আপনারা থাকবেন, প্রয়োজনে অন্যরা চলে যাবে। এখানে আপনাদের উপর কেউ চোখ রাঙানি দিলে আমাদের বলবেন। আমরা ব্যবস্থা নেব।
তিনি আরও বলেন, আপনাদের ওপর ভর করে অনেকেই রাজনীতি করতে চায়। এইটা যেন আপনাদের জীবনের উপর দিয়ে না যায়। আপনারা নিরাপদে থাকেন। এটার আমাদের চাওয়া এবং কোনো ধরনের দেশি-আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে পা দেবেন না, এটিই আমার অনুরোধ।
এই মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য দেন, আয়মারসুলপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ মিল্টন, কেশবপুর মন্দির কমিটির সভাপতি নবীন চন্দ্র রায়, সমসাবাদ মন্দির কমিটির সভাপতি সুকুমার ঘোষ, সমসাবাদ উত্তরপাড়ার বাসিন্দা মানিক সরকার প্রমুখ।
এ সময় সমসাবাদ উত্তরপাড়ার বাসিন্দা মানিক সরকার বলেন, আমাদের গ্রামে গত দুইদিন কে বা কাহারা রাতের অন্ধকারে হামলার চেষ্টা করেছিল। তাদেরকে প্রতিরোধ করার জন্য আমরা প্রয়োজন মতো ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা ছাত্র ভাইদের সহযোগিতা কামনা করেছিলাম, তারা সহযোগিতা করেছে। আক্রমণকারীরা যেন আমাদের ওপর আক্রমণ না করতে পারে, সেটির ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানাই। স্বাধীন এই বাংলায় আমরা শান্ত-স্বাভাবিকভাবে থাকতে চাই। কোনো রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার হতে চাই না।
কেশবপুর মন্দির কমিটির সভাপতি নবীন চন্দ্র রায় বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়নি, তবে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা-আতঙ্ক আমাদের মধ্যে আছে। আমাদের গ্রামের মুসলমান ভাইয়েরা এসে অভয় দিয়ে গেছেন। আপনারা আমাদের পাশে থাকেন। স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা সবাই ভাই-ভাই। ঐক্যের প্রতীক হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান। এটা যেন আমাদের সারাজীবন থাকে এবং স্বাধীনভাবে বাস করতে পারি।আমরা এই জন্মভূমি ছেড়ে যাব কেন?
ইউপি চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ মিল্টন বলেন, আমরা আগামীতে যে বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে যাচ্ছি, যেখানে যেন আমাদেরকে না শুনতে হয় সংখ্যালঘু। যে বৈষম্য ছিল, আগামীর জন্য যারা দায়িত্ব পেয়েছেন তারা সকল প্রকার বৈষম্য দূর করে একটি স্বাধীন, সার্বভৌমত্ব রাষ্ট্র আমাদেরকে উপহার দিবেন।
জেএন/এমআর