উচ্চ পর্যায়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরেও বোন মুনিয়া হত্যার বিচার পাননি বলে অভিযোগ করেছেন মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান তানিয়া। তিনি বলেছেন, তারা আওয়ামী লীগ পরিবার, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হয়েও আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে বোন মোসারাত জাহান মুনিয়া হত্যার বিচার পাননি।
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন তিনি৷
সংবাদ সম্মেলনে মুনিয়ার বড় বোন লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘আমি জানতে পারি তৎকালীন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক তার বান্ধবী তৌফিকা করিমকে দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা আনভীরের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে মামলা প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন। আমি এসব ব্যাপারে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য একাধিকবার আবেদন করি এবং প্রায় ২৬ পৃষ্ঠার একটি চিঠি লিখে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করি। কিন্তু তিনি আমার সাথে সাক্ষাৎ দেননি।’
এ সময় ছাত্র আন্দোলনে হতাহত ও ভাঙচুরের ঘটনায় শেখ হাসিনার ভূমিকার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন তানিয়া, ‘ছাত্র গণহত্যার সময়েও তিনি ভবন এবং অবকাঠামোর ক্ষতি দেখতে যান, অথচ ছাত্রদের দেখতে যাওয়ার সময় তার হয়ে ওঠে না। একইভাবে তিনি খুনি আনভীর ও শাহ আলমের সাথে ঠিকই দেখা করেন। অথচ আমার সাথে একটিবার সাক্ষাতের সময় হয়ে ওঠেনি শেখ হাসিনার৷’
মুনিয়া হত্যার সংবাদ পাওয়ার পর গুলশান থানায় মামলা করতে গিয়েছিলেন নুসরাত জাহান তানিয়া। তখন থেকেই অভিযুক্তরা এই হত্যা ও ধর্ষণ মামলার ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্য পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকে কিনে ফেলতে চেয়েছিল বলে অভিযাগ করেন তিনি।
মুনিয়ার বোন বলেন, ‘তৎকালীন আইজিপি বেনজির (বেনজির আহমেদ) এবং গুলশান থানার ওসি সুদীপ কুমার আনভীরকে বাঁচিয়ে দেয়ার জন্য নির্লজ্জ ভূমিকা রেখেছিল। পরে গুলশান থানা আনভীরকে অব্যাহতি দিয়েই তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।’
সংবাদ সম্মেলনে নুসরাত জাহান তানিয়ার লিখিত বক্তব্যের তথ্যমতে, তিনি আওয়ামী পরিবারের একজন সন্তান। তার প্রয়াত বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং তিনি কুমিল্লায় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। তানিয়া বিশ্বাস করেন, শেখ হাসিনার প্রশ্রয় না পেলে আনভীররা এতটা বেপরোয়া হয়ে ওঠার সাহস পেতেন না।
পিবিআইতে মামলাটি গেলে সেখানেও অর্থ ঢেলে তৎকালীন পিবিআই প্রধান বনজ কুমারকে দিয়ে একটি একপেশে তদন্ত রিপোর্ট নিয়ে আসে বসুন্ধরা গ্রুপ- এমন অভিযোগ করে মুনিয়ার বোন বলেন, ‘ওই রিপোর্টেও আনভীরসহ সবাইকে অব্যাহতি দেয়া হয়। আমি নারাজি জানানোর পর সেটাও আদালতে খারিজ হয়ে যায়।’
‘সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হলো মুনিয়া গর্ভবতী ছিল, পিবিআই তাদের তদন্তেও বলেছে সেটা ছিল আনভীরেরই সন্তান। অথচ সেই আনভীরকে তারা স্যাম্পল টেস্ট করতে বলল না।’ বলেন তানিয়া।
মামলার অন্যান্য আসামি যেমন সাইফা মিম ও পিয়াসাকে গ্রেপ্তার করা হলেও আনভীরকে একটিবারের জন্য জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়নি বলে অভিযোগ করেন মুনিয়ার বড় বোন। বলেন, ‘বিচারের নামে কী রকম তামাশা হয়েছে! এত অন্যায় ও অবিচারের পরও আমি আনভীরদের হুমকি, টাকা ও প্রলোভনের কাছে বিক্রি হইনি। আমি হালও ছেড়ে দেইনি। আমি বিশ্বাস করি স্বৈরাচার হাসিনার পতনের পর এই স্বাধীন বাংলাদেশে আমি ন্যায়বিচার এখন প্রত্যাশা করতে পারি।’
এ সময় তিনি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূস ও আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের প্রতি মুনিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে ভূমিকা রাখতে অনুরোধ জানান।
তানিয়া হত্যার ঘটনা নিয়ে অনেক মিডিয়া সংবাদ প্রকাশ করলেও কেউ কেউ বিজ্ঞাপন হারানোর ভয়ে ধারাবাহিকভাবে সংবাদ প্রকাশের ঝুঁকি নেয়নি বলে মন্তব্য করেন মুনিয়ার বোন। তারপরও সাংবাদিকরা পাশে ছিলেন, তাই দেশবাসীকে মুনিয়া হত্যার বিরুদ্ধে সোচ্চার করানো গেছে বলে জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে মুনিয়া হত্যা মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম সারোয়ার হোসাইন, অ্যাডভোকেট মাসুদ সালাউদ্দিন, অ্যাডভোকেট মানিক চন্দ্র শর্মা উপস্থিত ছিলেন৷
জেএন/এমআর