ফেনীতে বন্যায় প্রাণিসম্পদে ক্ষতি ৩৯৬ কোটি টাকা

অনলাইন ডেস্ক

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় বড় ক্ষতির মুখে পড়েছে ফেনীর জনপদের মানুষজন। টানা বৃষ্টি ও ভারতের উজানের পানিতে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যারকবলে পড়া মানুষদের আর্তি ছিল প্রাণে বাঁচার। দুর্যোগে অনেকে গৃহপালিত পশু, হাঁস-মুরগি নিয়ে আবার কেউ ফেলে রেখেই নিরাপদ আশ্রয়ে গিয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছেন। বন্যায় প্লাবিত হয়েছে শত শত একর চারণভূমি। পানিতে তলিয়ে বিনষ্ট হয়েছে পশুপাখির দানাদার খাদ্য-ঘাস, খড়। এ অবস্থায় অস্তিত্ব সংকটে পড়েছেন কৃষক ও খামারিরা।

- Advertisement -

জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে, এবারের বন্যায় প্রাণিসম্পদ খাতে এখন পর্যন্ত ৩৯৬ কোটি ৯ লাখ ৯৫ হাজার ৪০৩ টাকার ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা হয়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে ছিল ফুলগাজী, পরশুরাম ও ফেনী সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়। জেলার ছয় উপজেলায় ৩৯টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় ৩৮ হাজার ৭৩১টি গরু, ৩৫৯টি মহিষ, ১৫ হাজার ৫৮৮টি ছাগল ও ৭৩৬টি ভেড়া মারা গেছে। এ ছাড়াও ২১ লাখ ৬৭ হাজার ৫১০টি মুরগি ও ১ লাখ ৮৯ হাজার ৪৭২টি হাঁস মারা গেছে। মৃত পশুপাখির মোট ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ৩০৮ কোটি ৩৬ লাখ ৩৯ হাজার ৮৩০ টাকা।

- Advertisement -google news follower

সূত্র জানায়, জেলায় ৪২ লাখ ৪৯ হাজার ৯৬৩টি গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। ১ হাজার ৯৯২টি গবাদিপশুর খামারের ১৩ কোটি ১৭ লাখ ৩৯ হাজার ২০০ টাকা এবং ১ হাজার ৬২৩টি হাঁস-মুরগির খামারের ১০ কোটি ৯৭ লাখ ৫ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়াও ৩ হাজার ৯৫০ টন পশুপাখির দানাদার খাবার বিনষ্ট হয়েছে যার বাজারমূল্য ২৩ কোটি ৪৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। জেলায় ৩ কোটি ৮১ লাখ টাকার খড়, ৩ কোটি ৮১ লাখ ৫০ হাজার টাকার পশুপাখির ঘাস বিনষ্ট হয়েছে। প্লাবিত হয়েছে ২৮৫ একর চারণভূমি।

ফুলগাজীর আলমগীর হোসেন নামে এক খামারি বলেন, বন্যার ১৫ দিন আগে খামারে মুরগি নিয়েছিলাম। কোনো কিছুই সরাতে পারিনি। দেড় হাজার মুরগি, সঙ্গে খাবারসহ অন্যান্য সব জিনিসপত্র পানিতে ভেসে গেছে। এ ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা কোনোভাবেই সম্ভব না। এখন যদি স্বল্প সুদে ক্ষুদ্র ঋণের সুযোগ দেওয়া হয় তাহলে অনেকে কিছুটা হলেও ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।

- Advertisement -islamibank

আবদুর রাজ্জাক নামে এক কৃষক বলেন, তিনটি গরু লালন-পালন করে কোনোমতে অভাবের সংসার সামলে নিচ্ছিলাম। হঠাৎ এ বন্যায় সবকিছু এলোমেলো করে দিয়ে গেছে। পরিবার নিয়ে একটি আশ্রয়কেন্দ্র গিয়ে নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে পারলেও গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি বন্যার পানিতেই রেখে যেতে হয়েছে। পানি নামার পর বাড়ি ফিরে এগুলোর আর কিছুই পাইনি।

এ ব্যাপারে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মোজাম্মেল হক বলেন, বন্যায় জেলার প্রাণিসম্পদ খাত বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে। এখন পর্যন্ত ৩৯৬ কোটি ৯ লাখ ৯৫ হাজার ৪০৩ টাকার ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা হয়েছে। অনেক এলাকা এখনো পানিতে ডুবে থাকায় সেখানে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

খামারি ও কৃষকদের সহায়তা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডা. মো. মোজাম্মেল হক বলেন, এ পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ওষুধ ও খাদ্য। জেলায় গত কয়েকদিনে ৫০০ কেজি খাদ্য বিতরণ করা হয়েছে। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে সমন্বয় করে আমরা খামারি ও কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। এ ছাড়া দাপ্তরিকভাবে কোনো ধরনের প্রণোদনা অথবা সহায়তা আসলে তা প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার জন্য আমরা কাজ করব।

জেএন/এমআর

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM