কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত কাজীপাড়া ও মিরপুর-১০ মেট্রো স্টেশন পুনরায় সংস্কার এবং চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কাজীপাড়া স্টেশনের সংস্কারের কাজ এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে এবং এটি চালু হওয়ার সম্ভাবনা সপ্তাহখানেকের মধ্যে ঘোষণা করা হতে পারে। একইভাবে, মিরপুর-১০ স্টেশনটির সংস্কারও দ্রুত গতিতে চলছে এবং কয়েক মাসের মধ্যে এটি যাত্রীদের জন্য খুলে দেওয়া হবে বলে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) জানিয়েছে।
গত ১৯ জুলাই হামলার পর আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল যে, ক্ষতিগ্রস্ত স্টেশন দুটির সংস্কার করতে কমপক্ষে এক বছর সময় লাগবে। সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তখন বলেছিলেন, ‘মেট্রোরেলের কাজীপাড়া ও মিরপুর ১০ স্টেশন ধ্বংসপ্রাপ্ত। এক বছরেও যন্ত্রপাতি এনে সচল করা সম্ভব হবে না।’ এছাড়া, সংস্কারের জন্য প্রায় ৩৫০ কোটি টাকার প্রয়োজন হতে পারে বলে জানানো হয়েছিল।
তবে, নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের পর উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান দায়িত্ব নেয়ার পর কর্মকর্তারা এখন বলছেন, স্টেশন সংস্কারে এত বিপুল অর্থের প্রয়োজন পড়বে না।
কোটা আন্দোলনের সময় ১৮ জুলাই মিরপুর-১০ স্টেশনের নিচে পুলিশের বক্সে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে, যার ফলে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরদিন মিরপুর-১০ এবং কাজীপাড়া স্টেশনে হামলা ও ভাঙচুর হয়। একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে ক্ষয়-ক্ষতির মূল্যায়ন করা হয়।
মিরপুর-১০ স্টেশন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানে ছয়টি ভেন্ডিং মেশিন এবং কাউন্টারগুলিতে ভাঙচুর হয়েছে এবং এক ডজনেরও বেশি স্বয়ংক্রিয় দরজা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কাজীপাড়া স্টেশনে কিছুটা কম ক্ষতি হয়েছে; সেখানে ভেন্ডিং মেশিন, কাউন্টার এবং কিছু স্বয়ংক্রিয় দরজা ভাঙচুর হয়েছে।
ডিএমটিসিএলের নবনিযুক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুর রউফ জানিয়েছেন, কাজীপাড়া স্টেশন সংস্কারে ১ কোটি টাকারও কম খরচ হবে, যা আগে ১০০ কোটি টাকা বলা হয়েছিল। মিরপুর-১০ স্টেশনের যন্ত্রপাতি আমদানির কারণে কিছুটা বেশি খরচ হবে, তবে প্রকৃত খরচ এখনও নির্ধারিত হয়নি।
রউফ বলেছেন, ‘আমরা স্থানীয়ভাবে যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করে দ্রুত কাজ করছি, এতে খরচ কমে গেছে।’ তিনি আশা প্রকাশ করেছেন— কাজীপাড়া স্টেশন এই মাসেই চালু হতে পারে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হচ্ছে, আগামী ২০ সেপ্টেম্বর থেকে শুক্রবারেও মেট্রোরেল চলবে। সরকারি ছুটির দিন বিকেল ৩টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত মেট্রোরেল চলবে। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে শুক্রবারে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ থাকার রীতি পরিবর্তিত হচ্ছে।
দুর্নীতিবিরোধী প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) সরকারের সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে। টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, ‘এ ঘটনার মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে, বিগত সরকারের সময় উন্নয়নের নামে কীভাবে দুর্নীতি হয়েছে। অন্যান্য প্রকল্পগুলোর হিসাবও পুনরায় নিরীক্ষণ করা উচিত।’
জেএন/এমআর