পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (স.) উপলক্ষ্যে লাখো মানুষের অংশ গ্রহণে বন্দর নগরী চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী জশনে জুলুস।
সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা ও জেলা থেকে জুলুসে অংশ নিতে এসেছেন অনেকে।
কেউ পায়ে হেঁটে, কেউ মোটরসাইকেলে আবার কেউ ট্রাক কিংবা পিকআপের ওপর চেপে জুলুসে অংশ নিতে ছুটছেন চট্টগ্রামের মুরাদপুরের দিকে।
ইয়া নবী সালাম আলাইকা মুখে ঐতিহ্যবাহী জশনে জুলুসে অংশ নিচ্ছে শিশু থেকে বৃদ্ধরাও। সকাল ১০টায় ষোলশহরস্থ জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া মাদরাসা সংলগ্ন আলমগীর খানকাহ থেকে জুলুস শুরু হয়।
নেতৃত্ব দেন দরবারে আলীয়া কাদেরিয়া ছিরিকোট শরীফের সাজ্জাদানশীন পীর আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ সাবির শাহ।
জুলুস উপলক্ষে বর্ণিল সাজে সেজেছে চট্টগ্রাম। বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে বসানো হয়েছে তোরণ। সাঁটানো হয়েছে ব্যানার-ফ্যাস্টুন। সড়কের দুপাশে বিশেষ পতাকাও পুঁতে দেওয়া হয়েছে।
বসেছে খাবারসহ বিভিন্ন আইটেমের অস্থায়ী দোকানও। বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে স্বেচ্ছাসেবীরা বিতরণ করছেন শরবত। পুরো এলাকায় বিপুল পরিমাণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত রয়েছেন। একই সঙ্গে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা কাজ করছেন।
বিবিরহাট, মুরাদপুর, ষোলশহর, দুই নম্বর গেট, জিইসি মোড় হয়ে পূনরায় একই রুটে জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলীয়া ময়দানে গিয়ে মিলিত হবার কথা রয়েছে। সেখানে মিলাদ মাহফিল ও যোহরের নামাজ শেষে মুনাজাতের মধ্য দিয়ে জুলুস সমাপ্ত হবে।
চট্টগ্রামের ভাটিয়ারীর মাদ্রাসা-এ মুহাম্মদিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া (আলিম)-এর সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ হুমায়ুন পারভেজ বলেন, ‘নবীর প্রেমে সিক্ত হয়ে এখানে লাখো জনতা অংশ নিয়েছেন। মানুষ জুলুসে এলে নিজের প্রশান্তি খুঁজে পায়।’
সীতাকুণ্ড থেকে জুলুসে অংশ নিতে সাইদুল ইসলাম নামে একজন বলেন, ‘সীতাকুণ্ড থেকে জুলুসে এসেছি। প্রতিবছরই আসি। এই দিনটির অপেক্ষায় থাকি। এটা আমাদের অন্যতম বড় ঈদ।’
পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোলাইমান বলেন, জুলুসের নিরাপত্তার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এদিকে, জুলুসকে কেন্দ্র করে নগরীতে বিশেষ ট্রাফিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে। ট্রাফিক বিভাগ থেকে দেয়া এক নির্দেশনায় জানানো হয়েছে— জুলুছ চলাকালে পাঁচলাইশ থানার জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসার মাঠ থেকে বিবিরহাট হয়ে মুরাদপুর, মুরাদপুর ট্রাফিক পুলিশ বক্স থেকে ডান দিকে মোড় নিয়ে ষোলশহর ২ নম্বর গেট, ষোলশহর ২ নম্বর গেট এলাকা থেকে জিইসি মোড়, লর্ডস ইন হোটেল থেকে ২ নম্বর গেট এলাকায় সড়ক বন্ধ রেখে সকল প্রকার যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
এছাড়া বিবিরহাট, মুরাদপুর, পাঁচলাইশ, হামজারবাগ, শোলকবহর, মির্জারপুল রোডের মুখ, বায়েজিদ বোস্তামী রোডের মুখ (শেরশাহ মোড়), বেবি সুপার মার্কেট, প্রবর্তক মোড়ের মুখ, জাকির হোসেন রোডের মুখ, গোলপাহাড় রোডের মুখ ও পুনাক মোড়ে রোড ব্লক স্থাপনের মাধ্যমে ডাইভারশন করা হবে। এসব সড়কে ওই সময়ে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
আনজুমানে রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় রাসুল করীম (স.) এর পৃথিবীতে আগমনের দিনটি স্মরণে প্রতি বছর ১২ই রবিউল চট্টগ্রামে এই জশনে জুলুসের আয়োজন হয়ে থাকে। এবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে ৫৩তম জুলুস। আয়োজকদের মতে, এ বছর প্রায় ৫০ লাখ মানুষ জুলুসে অংশ নিচ্ছে।
জেএন/পিআর