সারাবছর ধরে আমাদের যে প্রকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করা উচিত ইতোমধ্যে তা আমরা ব্যবহার করে ফেলেছি। ধরিত্রীর উপর আমাদের চাপ ক্রমশ মাত্রা ছাড়াচ্ছে, যার ফলাফল হতে পারে ভয়াবহ। বিদেশি একটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ইতোমধ্যে তুলে ধরা হয়েছে বিস্তারিত।
আয় কম, ব্যয় বেশি
বিশ্বের নব্বইটির বেশি সংগঠনের সমন্বয়ে তৈরি আন্তর্জাতিক থিংকট্যাংক ‘গ্লোবাল ফুটপ্রিন্ট নেটওয়ার্ক’ প্রতিবছর একদিনকে ‘আর্থ ওভারশুট ডে’ হিসেবে পালন করে। এই দিনটি সাধারণত সেদিন হয়, যেদিন পৃথিবী একবছরে যা পুর্নউৎপাদন করতে পারে তারচেয়ে বেশি প্রকৃতিক সম্পদ মানুষ খরচ করে ফেলে। এটা অনেকটা আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হওয়ার মতো ব্যাপার। চলতি বছর সেই দিনটি ছিল পহেলা আগস্ট।
পৃথিবী আরো বড় হতে হবে
আজকে পৃথিবীর মানুষ যে পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করছে তার যোগান দিতে কার্যত এক দশমিক সাতটি পৃথিবী দরকার। আর যদি আলাদা আলাদাভাবে অঞ্চলের কথা চিন্তা করেন, তাহলে জার্মানরা যেভাবে প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করে, সেভাবে গোটা বিশ্বের মানুষ ব্যবহার করলে তাদের চাহিদা মেটাতে প্রয়োজন হতো তিনটির বেশি পৃথিবী। মার্কিনিদের ক্ষেত্রে এটি চার দশমিক নয়টি পৃথিবী।
বিশ্বের বড় কার্বন ডাই-অক্সাইড উৎপাদক
আমাদের বাস্তুসংস্থান সংক্রান্ত ফুটপ্রিন্টের ৬০ শতাংশের বেশি আসছে জীবাশ্ম জ্বালানি এবং কাঠ পোড়ানোর মাধ্যমে। একেবারে নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে চীন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ভারত হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় কার্বন ডাই-অক্সাইড উৎপাদক।
হারিয়ে যাচ্ছে বন
গাছ থেকে কাঠ আসে যা কাগজ তৈরির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল। তাছাড়া গাছ মাটির ক্ষয় রোধে সহায়তা করা ছাড়াও ভূগর্ভস্থ পানির আধার পূর্ণ রাখে এবং প্রকৃতি থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড শুষে নিয়ে আমাদের জন্য অক্সিজেন ছাড়ে। তা সত্ত্বেও প্রতিবছর বিশ্ব ৩৩ লাখ হেক্টর বন হারিয়ে যাচ্ছে।
প্রয়োজন ১ দশমিক আট হেক্টর জমি
পরিবেশগত টেকসই পদ্ধতি বিবেচনায় আনলে পৃথিবীর একজন মানুষের সাধারণ চাহিদা মেটাতে ১ দশমিক আট হেক্টর জমির প্রয়োজন। কিন্তু গড়ে একজন জার্মান ব্যবহার করছেন ৫ দশমিক এক হেক্টর জমি।
অতিরিক্ত মাছ শিকার
আমরা সাগর থেকে যে হারে মাছ ধরছি তা উৎপাদনের গতির চেয়ে অনেক বেশি। চলতি বছরের এই সময়ের মধ্যেই পৃথিবীর এক তৃতীয়াংশ মাছের আধারে প্রজনন ক্ষমতার চেয়ে বেশি মাছ ধরা হয়ে গেছে। একদিকে যেমন বেশি মাছ ধরা হচ্ছে, অন্যদিকে কার্বনর ডাই-অক্সাইড নির্গমনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় সমুদ্রের পানিও ক্রমশ বিষাক্ত হয়ে যাচ্ছে যা সামুদ্রিক জীবের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
সংকট হবে পানির
জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির হিসেব অনুযায়ী, ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী পানি সংকটে ভুগবে। ভূগর্ভস্থ পানির পরিমাণ ক্রমশ কমে যাচ্ছে কিংবা নানা বিষাক্ত উপাদানের সংমিশ্রণে পানের অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে।