একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারণার শেষ মুহূর্তে জমজমাট রূপ নিয়েছে নগর। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলছে টানা প্রচারণা।
এদিকে আওয়ামী লীগ ও মহাজোট প্রার্থীদের নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। কখনো তিনি চট্টগ্রাম-৯ আসনের প্রার্থী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সঙ্গে, আবার কখনো চট্টগ্রাম-১০ আসনের প্রার্থী ডা. আফছারুল আমিনের সঙ্গে।
রাতেও দম ফেলার ফুসরত পাননি নগরপিতা। চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে চট্টগ্রাম-৬ আসনের প্রার্থী এবিএম ফজলে করিমের সুধী সমাবেশেও ছুটে যান তিনি। অবশ্য সকালেও চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে নগর আওয়ামী লীগের মতবিনিময় সভায় নেতৃত্ব দেন নগরপিতা।
সকাল সাড়ে ৯টায় ‘তারুণ্য’ নামে তরুণদের একটি সংগঠন আওয়ামী লীগের ৫ প্রার্থীকে সমর্থন জানিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন।
তারুণ্যের কর্মসূচি শেষ করে মেয়র ছুটে যান চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে। সেখানে প্রার্থীদের সঙ্গে সাংবাদিকদের মতবিনিম সভার আয়োজন করে মহানগর আওয়ামী লীগ।
মতবিনিময় সভায় মেয়র নাছির বলেন, বিএনপি-জামায়াত স্বাধীনতা বিশ্বাস করে না। তারা দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি চায় না। তারা দেশকে পেছনের দিকে নিয়ে যেতে চায়। উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে আগামী ৩০ ডিসেম্বর নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে চট্টগ্রামের ১৬টি আসনে আওয়ামী লীগকে জয়ী করার আহ্বান জানান তিনি।
মতবিনিময়র সভায় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম-৪ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী দিদারুল আলম, চট্টগ্রাম-৫ আসনের মহাজোট প্রার্থী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, চট্টগ্রাম-৮ আসনের মহাজোট প্রার্থী মঈনউদ্দিন খান বাদল, চট্টগ্রাম-৯ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এবং চট্টগ্রাম-১০ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী আফছারুল আমিন।
চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের মতবিনিময় সভা শেষে মেয়র ছুটে যান কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পেশাজীবী-সংস্কৃতিকর্মী ও জনতার সমাবেশে। সেখানে তিনি জামায়াত-বিএনপির ধ্বংসাত্মক কর্মকা-ের বিবরণ দিয়ে আগামী নির্বাচনেও নৌকার বিজয়ে পেশাজীবী-সংস্কৃতিকর্মীদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টার আহ্বান জানান।
শহীদ মিনারের কর্মসূচি শেষে নগরপিতা ফের ছুটে যান চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে। যেখানে সুধী সমাবেশের আয়োজন করে রাউজানবাসী। মূলত চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনের নৌকার কা-ারী এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী সমর্থনে এ আয়োজন করা হয়।
সুধী সমাবেশে নগরপিতা বলেন, দেশের সব নাগরিকের জন্য এ নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনের মাধ্যমে নির্ধারণ হবে দেশ কোন পথে যাবে; সামনের দিকে, নাকি পেছনের দিকে।
মেয়র আরো বলেন, দশম নির্বাচনে জ্বালাও পোড়াওকারী অপশক্তি দেশে অনির্বাচিত সরকার আনার সূক্ষ্ম অপচেষ্টা চালিয়েছিল। নির্বাচিত সরকারকে কোণঠাসা করার অপচেষ্টায় তারা ব্যর্থ হয়েছে। এখন নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার নানা কূটকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে।
সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য রাউজান এখন শান্তির দ্বীপে পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে মেয়র বলেন, গত ১০ বছরে রাউজানের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। সেই দায়বদ্ধতা থেকে আগামী নির্বাচনে রাউজানবাসী আবারো এই আসনটি বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দিবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
সুধী সমাবেশ শেষে মেয়র চলে যান নগরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে। যেখানে চট্টগ্রাম-৯ আসনের মহাজোট প্রার্থী কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের নির্বাচনি এজেন্টদের মতবিনিময় সভা চলছিল।
এরপর মেয়র ছুটে যান আন্দোলন-সংগ্রামের তীর্থস্থান নগরের দারুল ফজল মার্কেটে। সেখানে নগর শ্রমিকলীগের গণসংযোগে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবেই শ্রমিকবান্ধব। জননেত্রী শেখ হাসিনা সবসময় শ্রমিকদের পাশে ছিলেন। অপরদিকে জামায়াত-বিএনপি সরকার শ্রমিকদের বুকে গুলি চালিয়ে ইতিহাসের ন্যাক্কারজনক ঘটনার জন্ম দিয়েছিল। আগামী দিনে শ্রমিকবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে তিনি নৌকাকে বিজয়ী করার আহ্বান জানান।
রাতে নগরের মিমি সুপার মার্কেট এলাকায় মতবিনিময় সভার আয়োজন করেন মুক্তিযোদ্ধারা। সেখানে অংশ নেন নগরপিতা। তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। কেবলমাত্র আওয়ামী লীগই মুক্তিযোদ্ধাদের যথাযথ সম্মান দিয়েছে। বিএনপিতে মুক্তিযোদ্ধা থাকলেও তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে না। আসন্ন নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন নগরপিতা আ জ ম নাছির উদ্দীন।
রাত ১১টায় এই প্রতিবেদন তৈরির সময়ও কনকনে শীত উপেক্ষা করে মেয়র উপস্থিত ছিলেন নগরের দেওয়ানহাটে। যেখানে চট্টগ্রাম-৯ আসনের প্রার্থী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সমর্থনে আয়োজন করা হয় মহিলা সমাবেশে।
তথ্যচিত্রের সমাপনী
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন চত্বরে দু’দিনব্যাপী তথ্যচিত্র প্রদর্শনীর শেষ দিন ছিল বৃহস্পতিবার। ‘কেন আপনি নৌকায় ভোট দিবেন?’ শীর্ষক এ তথ্যচিত্র প্রদর্শনী দেখানো হয় নগরের ৪১টি ওয়ার্ডে। ১৫ মিনিট ৪ সেকেন্ডের এই তথ্যচিত্রে কন্ঠ দিয়েছেন স্বয়ং মেয়র। তথ্যচিত্রে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকা-ের চিত্র তুলে ধরা হয়। নগরপিতা ব্যক্তিগত উদ্যোগে এ তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন।
জয়নিউজ