চট্টগ্রামে দুটি জাহাজ কি নাশকতায় পুড়লো, উত্তর খুঁজতে তদন্ত কমিটি

অনলাইন ডেস্ক

চট্টগ্রামে পরপর দুটি জাহাজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সন্দেহের উদ্রেগ ঘটেছে। এ কারণেই ঘটনা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি হয়েছে বলে জানিয়েছেন নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন।

- Advertisement -

নৌপরিবহন উপদেষ্টা বলেন, ‘পরপর দুইটি ঘটনায় স্বাভাবিকভাবে মানুষের মনে একটা সন্দেহ থাকতে পারে। স্বাভাবিকভাবে আমরা যে সময়টাতে আছি, এটা তো একটু অস্থির সময়। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে চেষ্টা করছি এ অস্থিরতাটা কমাতে।’

- Advertisement -google news follower

রবিবার চট্টগ্রামে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি) কার্যালয়ে সংস্থাটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত হোসেন এসময় আরও বলেন, ‘ছোটখাট ঘটনা ঘটলেও আপনাদের মনে সন্দেহ জাগতে পারে, এটা অন্য কোনো ব্যাপার কি না।

- Advertisement -islamibank

সে সন্দেহ যাতে দূর হয় এবং প্রকৃত বিষয়টা বের করে আনতে পারি… (সেজন্য) একটা বেশ বড় এনকোয়ারি কমিটি, যেখানে সব ধরনের এক্সপার্টরা থাকবে।

সিকিউরিটি এক্সপার্ট থেকে শুরু করে যারা অয়েল ট্যাংকারে কাজ করেছেন এবং বিএসসির প্রতিনিধি নিয়ে ৯-১০ জনের কমিটি তৈরি করা হয়েছে।’

উপদেষ্টা জানান, অনুসন্ধান দলের সদস্যরা সাগরে গিয়ে জাহাজ দুটির অবস্থা পর্যবেক্ষণ করবেন। তারা আসবেন, অন দ্য স্পট জাহাজটাও তারা দেখবেন, আসলে বিষয়টা কী। মানুষ যেগুলো সন্দেহ করছে সে ধরনের কিছু আছে কি না।

সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘কী হয়েছে সেটা নিয়ে অনুমানভিত্তিক আমি কোনো কথা বলতে চাই না। ইনকোয়ারি হবে; শেষ হলে তার রেজাল্টগুলো আপনারা জানতে পারবেন। এ মুহূর্তে কিছু বললে এনকোয়ারি ইনফ্লুয়েন্সড হয়ে যাবে।’

তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দেওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পরপর দুইটি ঘটনা কেন ঘটেছে এটা কোনো পিওরলি অ্যাকসিডেন্ট নাকি আপনারা যেটা বলছেন সেটা, সে উত্তর পেতেই মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে।’

পরপর দুটি জাহাজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৪ জনের মৃত্যু হয়। দুটি জাহাজই রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন। মাত্র চারদিনের ব্যবধানে দুটি জাহাজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অনেকের মনেই সন্দেহ তৈরি করে— এগুলো দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা।

বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের তেলবাহী জাহাজ বাংলার জ্যোতিতে গত ৩০ সেপ্টেম্বর (সোমবার) প্রথম অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

ওইদিন সকালে বন্দরের ডলফিন জেটিতে পাইপলাইনের মাধ্যমে ইস্টার্ন রিফাইনারিতে ক্রুড অয়েল খালাসের সময় জাহাজ এমবি বাংলার জ্যোতির সামনের অংশে বিস্ফোরণের পর আগুন ছড়িয়ে পড়ে।

ওই সময় জাহাজটিতে ১১ হাজার ৭০০ টন ক্রুড অয়েল ছিল। এ ঘটনায় একজন ক্যাডেটসহ তিনজন নিহত হন।

ঘটনা তদন্তে পরেরদিন মঙ্গলবার সাত সদস্যের কমিটি গঠন করে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি)। ওই কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়।

বাংলার জ্যোতিতে অগ্নিকাণ্ডের পাঁচদিন পর গত শুক্রবার (৪ অক্টোবর) মধ্যরাতে এমটি বাংলার সৌরভ জাহাজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় জাহাজ থেকে নামার সময় পানিতে পড়ে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজন ক্রু মারা যান। এই জাহাজটিতেও ১১ হাজার ৫৫ টন ক্রুড অয়েল ছিল।

পরেরদিন শনিবার এই ঘটনায় ৮ সদস্যের পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। বিএসসির নির্বাহী পরিচালক (প্রযুক্তি) ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ ইউসুফকে সভাপতি এবং মহাব্যবস্থাপক (ডিপিও অ্যান্ড সিএসও) মঈন উদ্দিন আহাম্মদ মজুমদারকে সদস্য সচিব করা হয়েছে।

শুক্রবারের ঘটনার পর এ জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তার স্বার্থে ‘নাশকতা’ আছে কিনা সন্দেহ প্রকাশ করেন বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কমডোর মাহমুদুল মালেক।

রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) বহরে ১৯৮৭ সালে যুক্ত হয় ডেনমার্ক থেকে আনা দুটি তেলবাহী জাহাজ ‘বাংলার জ্যোতি’ ও ‘বাংলার সৌরভ’।

মূলত বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) আমদানি করা তেল গভীর সমুদ্র থেকে খালাস করে চট্টগ্রাম বন্দরের ডলফিন জেটিতে আনার কাজ করত ট্যাংকার দুটি।

সাধারণত একটি অয়েল ট্যাংকার ২৫ বছর পর্যন্ত ‘লাইফটাইম’ থাকলেও জাহাজ দুটি রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে ৩৭ বছর ধরে অপারেশনাল কার্যক্রম চালু রয়েছে।

যদিও এক বছর আগে জাহাজ দুটি স্ক্র্যাপ হিসেবে ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে তা থেকে সরে এসে পুনরায় জ্বালানি তেল পরিবহন শুরু করে বিএসসি।

জেএন/পিআর

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM