চট্টগ্রাম নগরীর ২নং গেট এলাকায় মো. শাহাদাত হোসেন নামে এক যুবকের দুই হাত স্টিলের পাইপের সঙ্গে বেঁধে তাকে গানের তালে তালে মারধর করে হত্যার ঘটনায় আরও দুজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৭।
রোববার রাতে নগরীর খুলশী থানা এলাকা থেকে মেহেদী হাসান সাগর (২৮) ও মো. শান্ত (২৮) নামের ওই দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়।
শাহাদাতের মৃত্যুর পর পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল, সাগর নামের এক যুবক ফোন করে তাকে বাসা থেকে বের করেছিল। গ্রেফতার মেহেদী হাসান সাগরই সেই যুবক বলে র্যাবের ভাষ্য।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে র্যাব বলেছে, শাহাদাতকে বাসা থেকে ডেকে এনে তার স্ত্রীর কাছ থেকে ‘মুক্তিপণ’ দাবি করার বিষয়টি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ‘স্বীকার করেছে’।
কিন্তু এর আগে ২৫ সেপ্টেম্বর এ হত্যা মামলায় তিনজনকে গ্রেফতারের পর পুলিশ বলেছিল, পরিবারের ওই বক্তব্য ‘ভিত্তিহীন’।
র্যাব-৭ এর সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মো. শরীফ-উল-আলম বলেন, রোববার রাতে নগরীর খুলশী থানার গরীবউল্লাহ শাহ মাজার এলাকা থেকে সাগরকে গ্রেফতার করেন তারা।
পরে তার দেওয়া তথ্যে খুলশী জামতলা এলাকা থেকে শান্তকে গ্রেফতার করা হয়। তারা দুইজন ‘এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি থানায় হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর গত ১৩ অগাস্ট রাতে শাহাদাতকে যখন মারধর করা হয়, সেসময় থানায় পুলিশ থাকলেও তাদের তেমন সক্রিয়তা ছিল না।
১৪ অগাস্ট প্রবর্তক মোড়ের অদূরে সিএসসিআর হাসপাতালের বিপরীতে বদনা শাহ মাজারের সামনের সড়কে রাস্তায় শাহাদাত হোসেনের লাশ পড়ে থাকতে দেখেন সেখানে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালনকারী রেড ক্রিসেন্টের সদস্যরা।
তারাই প্রথমে লাশ নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। পরে পুলিশ খবর পেয়ে মেডিকেলে যায় এবং পরবর্তী আইনি আনুষ্ঠানিকতা সারে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাশের ছবি দেখে পরিবারের সদস্যরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে শাহাদাতের পরিচয় শনাক্ত করেন।
পুলিশ বলছে, ১৩ অগাস্ট রাতে শাহাদাতকে মারধরের পর তার মৃত্যু হয়। ওই দিন রাতেই তার লাশ প্রবর্ত্তক মোড়ে কাছে বদনা শাহ মাজারের সামনে সড়কে ফেলে রেখে যাওয়া হয়েছিল।
সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক মানসিক ভারসাম্যহীন যুবককে এবং জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে সমালোচনা শুরু হয়।
এর মধ্যেই ২১ সেপ্টেম্বর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চট্টগ্রামে এক যুবককে বেঁধে গান গাইতে গাইতে পেটানোর ২০ সেকেন্ডের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। প
রে পুলিশ পরিবারের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়, ওই ভিডিও শাহাদাতকে হত্যার, গত ১৪ অগাস্ট যার লাশ উদ্ধার করা হয়েছিল।
ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর গত ২৩ সেপ্টেম্বর শাহাদাতের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে শাহাদাতের স্ত্রী শারমিনের বড় বোন হোসনে জানান, গত ১৩ অগাস্ট সন্ধ্যায় সাগর নামে এক যুবক টেলিফোন করে ‘কথা আছে’ বলে শাহাদাতকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যান।
তার ভাষ্য, সাগরের কাছ থেকে শাহাদাতের পাঁচ হাজার টাকা পাওনা ছিল। টাকা নিয়ে দুই জনের মধ্যে ‘ঝামেলা’ হয়েছিল। শাহাদাতের মৃত্যুর পর থেকে সাগরের আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
সাগরকে গ্রেফতারের পর র্যাব এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, সাগর গত ১৩ অগাস্ট শাহাদাতকে টেলিফোনে বাসা থেকে ডেকে বের করেছিলেন এবং তার স্ত্রীর কাছ থেকে মুক্তিপণ দাবি করেছিল বলে ‘স্বীকার করেছেন’।
পিটিয়ে হত্যার এ ঘটনায় গত ২৫ সেপ্টেম্বর তিন জনকে গ্রেফতারের কথা জানায় পাঁচলাইশ থানা পুলিশ। তারা হলেন- ফরহাদ আহমেদ চৌধুরী জুয়েল (৪২), আনিসুর রহমান ইফাত (১৯) এবং ১৬ বছর বয়সী কিশোর।
সেদিন পুলিশের এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘চট্টগ্রাম ছাত্র-জনতা ট্রাফিক গ্রুপ’ নামে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে তথ্য পেয়ে মারধরকারীদের শনাক্ত করা হয়।
পরিবারের অভিযোগের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করা হলে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, অভিযোগটি ভিত্তিহীন।
এ ধরনের কোনো সম্পৃক্ততা আমরা তদন্তে পাইনি। যদি সাগর ফোন করে থাকে তাহলে সেটি স্বাভাবিকভাবেই করেছিল বন্ধু হিসেবে বাসা থেকে বের হতে।”
সেই সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, শাহাদাতের কোনো নির্দিষ্ট পেশা ছিল না। তার বিরুদ্ধে নগরীর কোতোয়ালি থানায় অস্ত্র, ডাকাতির প্রস্তুতিসহ চারটি মামলা আছে। বিভিন্ন সময়ে সে গ্রেফতারও হয়েছিল।
জেএন/পিআর