সীমান্ত হত্যাকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি বন্ধ করতে ভারত সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। একই সঙ্গে আগের সব সীমান্ত হত্যার ঘটনার তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনার আহ্বান জানানো হয়েছে। বুধবার ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনে পাঠানো চিঠিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এসব কথা বলেছে।
৭ সেপ্টেম্বর ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার বাসিন্দা বাংলাদেশি নাগরিক কামাল হোসেন নিহতের ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে এ চিঠি পাঠানো হয়। ওই দিন সন্ধ্যায় কুমিল্লার গলিয়ারা দক্ষিণ ইউনিয়নের পাহাড়পুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হন কামাল হোসেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সন্ধ্যায় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার ব্যাপারে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের অব্যাহত আশ্বাসের পরও বিএসএফের হাতে এ ঘটনার পুনরাবৃত্তিতে বাংলাদেশ উদ্বেগ প্রকাশ করছে। বাংলাদেশ সরকার জোর দিয়ে বলেছে, সীমান্ত হত্যার এ ধরনের ঘটনা অনাকাঙ্খিত ও অযাচিত। এ ধরনের কর্মকাণ্ড দুই দেশের সীমান্তরক্ষীদের জন্য বাংলাদেশ-ভারত যৌথ নির্দেশিকা ১৯৭৫- এর লঙ্ঘন।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার ভারত সরকারকে এ ধরনের জঘন্য কর্মকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি বন্ধ করতে এবং সব সীমান্ত হত্যাকাণ্ডের তদন্ত পরিচালনা করার পাশাপাশি দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানায়।
এর আগে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যার ঘটনায় ভারতকে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছিল অন্তর্বর্তী সরকার। ৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনে চিঠি পাঠিয়ে এ প্রতিবাদ জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ১ সেপ্টেম্বর রাতে কুলাউড়া সীমান্ত দিয়ে মাকে নিয়ে ভারতের ত্রিপুরায় অভিবাসী ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার সময় ১৩ বছরের স্বর্ণা দাসকে গুলি করে হত্যা করে বিএসএফ।
এ ঘটনায় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, কিশোরী স্বর্ণা দাসকে বিএসএফ গুলি করে হত্যা করে। চিঠির মাধ্যমে ভারতকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানোর পাশাপাশি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। সীমান্তে এ ধরনের ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত ও অযৌক্তিক।
ভারতের পেনাল কোড কিংবা আন্তর্জাতিক কোনো আইনেই নিরস্ত্র নাগরিককে গুলি বা নির্যাতন করে মেরে ফেলার বিধান নেই। কেউ অবৈধভাবে সীমান্ত পারাপার করলে তাকে গ্রেপ্তার করে বিচার করা যেতে পারে। কিন্তু ভারত সীমান্ত ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে স্বীকৃত সব আন্তর্জাতিক ও দ্বিপক্ষীয় প্রটোকল অগ্রাহ্য করে সীমান্ত হত্যাকাণ্ড অব্যাহত রেখেছে।
স্বর্ণা দাস হত্যাকাণ্ড ১৯৭৫ সালে সীমান্ত নিয়ে বাংলাদেশ-ভারতের দ্বিপক্ষীয় প্রটোকলের স্পষ্ট লঙ্ঘন বলেও স্মরণ করিয়ে দিয়েছে ঢাকা। বিজ্ঞপ্তিতে এ ধরনের জঘন্য হত্যাকাণ্ডের যাতে পুনরাবৃত্তি না হয়, সে জন্য ভারতের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। একই সঙ্গে দিল্লির প্রতি সীমান্তের সব হত্যাকাণ্ড তদন্তের মাধ্যমে দায়ীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ।
জেএন/এমআর