• রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠতা জানান দিতে তৎপর ছিলেন সজল।
• কয়েক দফা যোগাযোগে টাকা দেওয়ার কথাও বলেন তিনি।
• পরিস্থিতি পাল্টে যাওয়ায় গা ঢাকা দিয়েছেন এই ব্যক্তি।
চট্টগ্রামের জেএম সেন হল পূজামণ্ডপে গান করার জন্য ‘চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমি’ নামের সংগঠনটির শিল্পীদের সঙ্গে কয়েক দফায় যোগাযোগ করেন পূজা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সজল দত্ত। তবে ঘটনার পর থেকে তিনি উধাও। পূজা উদযাপন পরিষদের কোনো নেতা ও পুলিশ তাকে খুঁজে পাচ্ছে না।
পূজা উদযাপন পরিষদের এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, ‘সজল দত্তের প্রিন্টিং ব্যবসা রয়েছে। সেই সূত্রে জামায়াত নেতাদের সঙ্গে তার সক্ষতা রয়েছে। ৫ আগস্টের পর থেকে সজল এ বিষয়ে সবাইকে জানান দিতে তৎপর ছিলেন। সেই চেষ্টা থেকেই চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমিকে মণ্ডপে গান করার জন্য আমন্ত্রণ জানা সজল। তবে ঘটনা অন্যদিকে মোড় নেওয়ায় তিনি গা ঢাকা দিয়েছেন।’
পুলিশের পক্ষ থেকেও একই ধরনের বক্তব্য পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলা তদন্ত করছেন এমন একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘পুরো বিষয়টিতে সজল দত্তের ব্যক্তিগত স্বার্থচিন্তা ছিল। চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির সেলিম জামানের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক আছে। তিনি বেশ কয়েকবার সেলিমকে টাকার বিনিময়ে পূজায় গান গাইতে বলেছিলেন। শিল্পীদের বলা হয়েছিল অসাম্প্রদায়িকতার দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য তিনি এটা করতে চান। পুলিশ এ ঘটনার পেছনে কোনো ষড়যন্ত্র আছে কি না তা খুঁজে দেখছে।’
বিষয়টি স্বীকার করে চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির সভাপতি সেলিম জামান বলেন, ‘পূজা উদযাপন পরিষদের সজল দত্ত প্রায় দশদিন ধরে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছিলেন। বৃহস্পতিবারও ফোন করে বলেন ‘আপনারা একটু আসেন। আপনাদের একটু ফ্লোর (সুযোগ) দেবো। কিছু দেশাত্মবোধক গান গাইবেন। সে আমন্ত্রণে গিয়ে আমাদের দলটি দুটি সম্প্রীতির গান করে। আমরা তো জোরপূর্বক কিছুই করিনি। দাওয়াত পেয়েই গিয়েছিলাম।’
প্রতিষ্ঠানটির প্রচার সেক্রেটারি মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, ‘চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমি হচ্ছে একটি সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও বিনোদনমূলক স্বতন্ত্র সংগঠন। সংগঠনটি বিয়েশাদি থেকে শুরু করে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হওয়ার মাধ্যমে সাংস্কৃতিক পারফরম্যান্স করে থাকে। চট্টগ্রামের জেএম সেন হলের পূজামণ্ডপে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির পরিবেশনাটি ছিল সেই রকমই একটি পরিবেশনা, যেটি ওই পূজা উদযাপন কমিটির নেতা সজল দত্ত বাবুর আমন্ত্রণ ও অনুরোধে মঞ্চে দুটি গান পরিবেশনা করা হয়। যে দুটি গান ছিল শুধু সম্প্রীতির বন্ধনকে সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে।’
উধাও সজল দত্ত
এদিকে, বৃহস্পতিবার রাত থেকেই পূজা উদযাপন পরিষদের নেতা সজল দত্তের খোঁজ মিলছে না। ঘটনার পর থেকে পুলিশ ও পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা তাকে খুঁজছেন। তবে শেষ পর্যন্ত তার হদিস পাওয়া যায়নি। তার মুঠোফোনটিও বন্ধ পাওয়া গেছে।
চট্টগ্রাম মহানগর পূজা কমিটির অর্থ সম্পাদক সুকান্ত মহাজন টুটুল বলেন, ‘আমরা শুনেছি, সজল দত্তের কাছে তারা গিয়ে গান গাওয়ার অনুরোধ করলে তিনি তাদের সুযোগ করে দেন। বিষয়টি যাচাই করার জন্য আমরাও তার খোঁজ করেছি। তিনি বাসায় তালা ঝুলিয়ে কোথায় চলে গেছেন তা জানতে পারিনি। এখন বিষয়টি পুলিশ দেখবে।’
সিএমপির উপ-কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) রইছ উদ্দিন বলেন, ‘মূলত পূজা উদযাপন পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক সজল দত্তের আহ্বানেই দলটি গান করেন। আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদের চেষ্টা করছি। তবে তাকে এখনো পাওয়া যায়নি।’
চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির দুঃখপ্রকাশ
পূজামণ্ডপে অনুষ্ঠানের মঞ্চে উঠে ইসলামি গান পরিবেশনের জন্য দুঃখপ্রকাশ করে ক্ষমা চেয়েছে চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমি। শুক্রবার (১১ অক্টোবর) রাতে প্রতিষ্ঠানটির প্রচার সেক্রেটারি মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ দুঃখপ্রকাশ করা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের জেএম সেন হলের পূজামণ্ডপে চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির শিল্পিদের গান পরিবেশনা নিয়ে এক ধরনের ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হয়েছে যা সামাজিক মাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম উঠে এসেছে।
উল্লেখ্য করা প্রয়োজন যে, চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমি হচ্ছে একটি সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও বিনোদনমূলক স্বতন্ত্র সংগঠন। সংগঠনটি বিয়েশাদি থেকে শুরু করে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হওয়ার মাধ্যমে সাংস্কৃতিক পারফরম্যান্স করে থাকে। চট্টগ্রামের জেএম সেন হলের পূজামণ্ডপে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির পরিবেশনাটি ছিল সেই রকমই একটি পরিবেশনা।
জেএন/এমআর