চট্টগ্রাম বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম অটোমেশন পদ্ধতিতে পরিচালনার উদ্যোগ অনেক বছর আগের। যার সফল দুটি উদাহরণ হলো টার্মিনাল অপারেটিং সিস্টেম ও অনলাইন ডেলিভারি অর্ডার (ডিও) ইস্যু। তারই ধারাবাহিকতায় এবার বন্দরে প্রবেশকারী পণ্যবাহী সকল গাড়ির ‘ডিজিটাল গেট ফি’ পুরোদমে চালুর উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। ২০২১ সালের ১১ জুলাই থেকে এটি চালুর চেষ্টা করা হলেও নানা কারণে তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। তবে এবার সেই প্রকল্প আলোর মুখ দেখছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ চাচ্ছে চলতি নভেম্বর মাসেই সকল সিএন্ডএফ এজেন্টদের প্রবেশকারী পরিবহন বন্দরের টস অনলাইন সফটওয়্যারের মাধ্যমে ‘ডিজিটাল গেট ফি’ পরিশোধ করেই বন্দরে প্রবেশ করুক। এ লক্ষ্যে ১ জুলাই বন্দরের পরিচালক (নিরাপত্তা) এর দপ্তরে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ট্রিম ট্রেড লিমিটেড, পারাবার শিপিং, হবিগঞ্জ এগ্রো লিমিটেড, জি শিপিং লাইন্স, অমর ইন্টারন্যাশনাল নামের পাঁচ সিএন্ডএফ এজেন্টকে ‘টেস্ট এন্ড ট্রায়াল’ এর জন্য নির্বাচন করা হয়। ওইসব সিএন্ডএফ’র গেট পাস ইস্যু ও যানবাহন প্রবেশ/বাহির ব্যবস্থাপনা ‘টস অনলাইন পেমেন্ট ফর গেট টিকেট’ অটোমেশন পদ্ধতিতে বাস্তবায়ন করা হয়।
পরবর্তীতে আরো ১৫ সিএন্ডএফ এজেন্ট (এফএফ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, মেসার্স সৈকত ট্রেডিং এজেন্সি, সিলভার সিন্ডিকেট, মেসার্স আলাউদ্দিন, মেসার্স কবির এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স তাসমিয়া এন্টারপ্রাইজ, মুন এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড, সিলভার লাইনার এজেন্সি, আবিদ এন্টারপ্রাইজ, আমিন এসোসিয়েটস, সাইদ এন্টারপ্রাইজ, আরবি ট্রেডার্স, সমির এসোসিয়েটস, ইরামিয়া এন্টারপ্রাইজ, তারেক ইন্টারন্যাশনাল) নির্বাচন করে এ বছরের অক্টোবর পর্যন্ত মোট ২০ সিএন্ডএফ এজেন্টের কার্যক্রম ‘টস অনলাইন পেমেন্ট ফর গেট টিকেট অটোমেশন’ পদ্ধতিতে পরিচালনা করা হয়। চলতি নভেম্বর মাসের মধ্যে সকল সিএন্ডএফ এজেন্টের কার্যক্রম এই অটোমেশন পদ্ধতিতে বাস্তবায়ন করা হবে।
অটোমেশন পদ্ধতিকে সাধুবাদ জানিয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমস এজেন্টস এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু বলেন, অনলাইন অটোমেশনকে আমরা সব সময় স্বাগত জানাই। এটি পুরোদমে বাস্তবায়ন করা গেলে পরিবহন সংক্রান্ত কাজ অনেক সহজ ও দ্রুত হবে। একই প্রসঙ্গে বাংলাদেশ কাভার্ডভ্যান ট্রাক প্রাইমমুভার পণ্যপরিবহন মালিক এসোসিয়েশনের মহাসচিব চৌধুরী জাফর আহম্মদ বলেন, বন্দরে গাড়ি প্রবেশে যানজট দূর ও গেট পাসের অতিরিক্ত ফি আদায় বন্ধে চট্টগ্রাম বন্দরের চালুকৃত এপসের মাধ্যমে গেট পাস ইস্যু একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এটি পূর্বের ম্যানুয়েল পদ্ধতির চেয়ে খুবই দ্রুত ও সহজ। ঘরে/অফিসে, যেকোনো জায়গায় বসে গেট পাস পাওয়া যায়। এর মাধ্যমে সময় এবং অতিরিক্ত ফি’র আদায়ের হয়রানি বন্ধ হবে।
তিনি আরো বলেন, বন্দরের এই প্রশংসনীয় উদ্যোগ সফল করতে হলে মাঠ পর্যায়ে বন্দরের বিভিন্ন গেটে দায়িত্বরত নিরাপত্তা কর্মীদের অনলাইন পেমেন্টের গেটপাস বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা রাখতে হবে। কারণ ইতিমধ্যে কয়েকটি অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেছে। অনলাইনে পেমেন্ট করে গেটপাস নেওয়ার পরও বন্দর গেটে দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তা কর্মীরা তা প্রত্যাখ্যান করে। পরে বন্দরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানানো হয়।
অনলাইন গেটপাস প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, অনলাইনে গেটপাস সংগ্রহের পদ্ধতি বন্দর অনেক আগেই চালু করেছে। তবে চালক ও হেলপারদের অনলাইনে পদ্ধতিতে গেটপাস নেওয়ার বিষয় ও পেমেন্ট দেওয়ার বিষয়টি পরিচিত করতে সময় লেগেছে। এখন সিএন্ডএফ এজেন্টদেরও তাদের নিয়োজিত গাড়িকে অনলাইনে গেটপাস নিতে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটি ২০টি সিএন্ডএফ এজেন্টের মাধ্যমে চালু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে নভেম্বরের মধ্যেই সব সিএন্ডএফের গাড়ির ইপেমেন্ট গেটপাস ইস্যুর পরিকল্পনা রয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষের।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ১১ জুলাই থেকে অনলাইনে ফি পরিশোধের পাশাপাশি প্রথাগত নিয়মে অর্থাৎ নগদ অর্থ পরিশোধের মাধ্যমেও মালবাহী গাড়ি প্রবেশের সুযোগ দেয়া হয়। ওই বছর আধুনিক এ প্রক্রিয়ার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে দু’মাসের বেশি সুযোগ দেয়া হয়েছিল। পরে ২ আগস্ট বন্দরের নিরাপত্তা বিভাগ থেকে চিঠি ইস্যু করে একই বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে কোনো গাড়ি অনলাইনে আবেদন ও ফি পরিশোধ না করে বন্দরে প্রবেশ করতে পারবে না বলেও ঘোষণা দিয়েছিল বন্দর কর্তৃপক্ষ। এটি এবছর থেকে আবারও বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালে চট্টগ্রাম বন্দরের কম্পিউটারাইজড কনটেইনার টার্মিনাল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিটিএমএস) উদ্বোধনের মাধ্যমে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করে চট্টগ্রাম বন্দর। বর্তমানে সিটিএমএসকে আপগ্রেডেশনের মাধ্যমে টার্মিনাল অপারেটিং সিস্টেম (টিওএস) করা হয়েছে।
টায়ার-২ সমমানের একটি ডাটা সেন্টার স্থাপন করার ফলে নিরবচ্ছিন্নভাবে অপারেশনাল অটোমেশন সেবা নিশ্চিত করে বন্দর। ২০২১ সালের ১ ডিসেম্বর স্বয়ংক্রিয় ডেলিভারি পদ্ধতিতে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য ছাড়ে অনলাইন ডেলিভারি অর্ডার (ডিও) পদ্ধতি চালু করা হয়। এরপর সহজে এবং দ্রুত সময়ে প্রয়োজনীয় তথ্য আদান প্রদান করতে চালু হয় ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার। অন্যান্য ডিজিটাল সেবায় সফল হলেও ‘ডিজিটাল গেট ফি‘ বাস্তবায়নে পুরোপুরি সফল হতে পারেনি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।