ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেস (ইসকন) নিষিদ্ধের দাবিতে আজ বুধবার (২৭ নভেম্বর) চট্টগ্রামে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। এতে নেতৃত্ব দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ এবং জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম। গতকাল মঙ্গলবার রঙ্গম সিনেমা এলাকায় সংঘর্ষে হত্যাকান্ডের শিকার অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফের জানাজা শেষে নগরীর টাইগার পাস মোড়ে শোক ও সম্প্রীতি সমাবেশ হয়। সবশেষ বিকেল ৩টার দিকে টাইগারপাস এলাকা ছাত্র-জনতার স্লোগানে উত্তাল রয়েছে চট্টগ্রাম। সেখানে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তারা মিছিল নিয়ে জিইসি মোড় হয়ে বহদ্দারহাট এলাকায় গিয়েছেন।
এর আগে সমাবেশে দেওয়া বক্তব্যে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আওয়ামী লীগের সহায়তায় ইসকন গত ১৬ বছর রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বেড়ে উঠেছে। এখন জঙ্গি সংগঠন হিসেবে বাংলাদেশে অশান্তি সৃষ্টি করছে। আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, ভারতের বুবু, ভারতের হাসিনা এই বাংলাদেশে তোমার আর ঠাঁই হবে না। ভারতে বসে যতই ষড়যন্ত্র করার চেষ্টা করা হয় আমরা বাংলাদেশের প্রত্যেকটি মানুষ সেই ষড়যন্ত্র রুখে দেব। আমাদের দেশে সব ধর্মের সহাবস্থান থাকবে। কিন্তু ধর্মের দোহাই দিয়ে উগ্রবাদী সংগঠন পরিচালনা করবে, সেসব উগ্রবাদী সংগঠনকে বাংলাদেশে কোনো জায়গা দেওয়া হবে না। গত কয়েক দিনের ঘটনায় আমরা অত্যন্ত চিন্তিত উদ্বিগ্ন এবং আতঙ্কিত।
সারজিস আলম বলেন, যে রক্তের বন্যা বসিয়ে শেখ হাসিনা এই দেশ ছেড়ে পালিয়েছে, যে রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে নতুন বাংলাদেশ এসেছে, সেই রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে এই চিন্ময়রা উসকানি দেয়। সেই রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে খুনি হাসিনারা উসকানি দেয়। সেই রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে জঙ্গি ইসকনরা উসকানি দেয়। সেই রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে ভারতের কিছু প্রেত্মারা উসকানি দেয়। আমরা স্পষ্ট করে সব প্রেত্মাদের বলে দিতে চাই, আমরা ১৬ বছরের স্বৈরাচার খুনি হাসিনাকে দেশ ছাড়া করেছি এবং ছোটোখাটো কিছু জঙ্গি ইসকনকে দেশছাড়া করা তো আমাদের জন্য হাতের ময়লা।
সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রামের সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি বলেন, আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, প্রশাসনের যেসব জায়গায় স্বৈরাচারের দোসরেরা বিরাজমান তাদের সমূলে নির্মূল করতে হবে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, ভারতীয় প্রেসক্রিপশনে বাংলাদেশ চলবে না। ভারতীয় কোনো আগ্রাসন বাংলাদেশে চলবে না। ভারতীয় কোনো দাদাগিরি বাংলাদেশে চলবে না। আমরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিশ্চিত করতে এক-ঐক্যবদ্ধ। কিন্তু যদি কেউ ধর্মের দোহাই দিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করে, তাহলে আমরা বাংলাদেশের ছাত্রজনতা তাদের প্রতিহত করতে একবারও ভাববো না।
এর আগে, গত সোমবার (২৫ নভেম্বর) ঢাকা শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দর থেকে সিএমপি’র কোতোয়ালী থানার একটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেফতার হন সনাতনী জাগরণ জোটের সমন্বয়ক ও হাটহাজারী পুন্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী। মঙ্গলবার তাকে জামিনের জন্য চট্টগ্রাম আদালতে তোলা হলে আদালত জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। একই দিন বিকেলে বিকেলে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে প্রিজন ভ্যানে করে কারাগারে নেয়ার সময় আদালত চত্ত্বর, লালদীঘি ও আশপাশের এলাকায় সনাতনীন জাগরণ মঞ্চের নেতৃবৃন্দরা বিক্ষোভ করেন। এসময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় বিক্ষোভকারীরা। দুপুর পর বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে আদালত এলাকায় মসজিদ-দোকানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায়। বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেলও ভাঙচুর করা হয়। এসময় সংঘর্ষে নির্মমভাবে খুন হন আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ।
আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তার প্রথম জানাজা চট্টগ্রাম আদালত এলাকায় অনুষ্ঠিত হয়। এরপর দ্বিতীয় জানাজা বেলা ১১টার দিকে নগরীর জমিয়তুল ফালাহ মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। এতে সর্বস্তরের জনসাধারণের ঢল নামে।
জেএন/এমআর