জাতীয় রাজনীতিতে বরাবরই আলাদা গুরুত্ব পেয়ে এসেছে চট্টগ্রাম। নতুন সরকারের নতুন মন্ত্রিসভায় স্থান পাচ্ছেন কে বা কারা? এই প্রশ্নটিই এখন ঘুরেফিরে মুখে মুখে। জয়নিউজের অনুসন্ধান বলছে, বৃহত্তর চট্টগ্রামে টেকনোক্র্যাট কোটায় ‘চমক’ রেখে কমপক্ষে চারজন সংসদ সদস্যের গাড়িতে উড়তে যাচ্ছে মন্ত্রিত্বের ‘জাতীয় পতাকা’! পড়ুন জয়নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক রুবেল দাশ’র বিশেষ প্রতিবেদন-
চট্টগ্রামের ১৬টি সংসদীয় আসনের সবকটিতেই বিজয় পেয়েছে মহাজোটের প্রার্থীরা। এবার জল্পনা, চট্টগ্রাম থেকে কে কে পাবেন মন্ত্রিত্ব পাচ্ছেন? অতীতে যারা মন্ত্রিত্ব করেছিলেন তারাই আবার মন্ত্রী হবেন, নাকি আসবে নতুন মুখ- চট্টগ্রামজুড়ে আলোচনায় এই ইস্যু।
২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর চট্টগ্রাম থেকে চারজনকে মন্ত্রী করা হয়। এর মধ্যে তিনজন পূর্ণমন্ত্রী এবং একজন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। পূর্ণমন্ত্রী হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, জাতীয় পার্টি নেতা ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও নুরুল ইসলাম বিএসসি। এর মধ্যে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, ব্যারিস্টার আনিসুল প্রথমে পানিসম্পদ মন্ত্রী এবং পরে বন ও পরিবেশ মন্ত্রির দায়িত্ব পান। অবশ্য টেকনোক্র্যাট কোটায় নুরুল ইসলাম প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। চট্টগ্রাম-১৩ আসন থেকে নির্বাচিত প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর ছেলে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ভূমি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। কোন প্রকার বিতর্ক ছাড়াই দায়িত্ব পালনের কারণে এবারও তারা স্ব-স্ব মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেতে পারেন।
তবে প্রবীণ মন্ত্রীদের ব্যাপারে হয়ত সিদ্ধান্ত বদলাতে পারে কেন্দ্র। সেক্ষেত্রে নুরুল ইসলাম বিএসসিকে এবার হয়ত মন্ত্রিসভায় নাও দেখা যেতে পারে। একাদশ সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৯ আসন ছেড়ে দেওয়ায় জাতীয় পার্টি নেতা জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে হয়তো মন্ত্রিত্ব দিয়ে মূল্যায়ন করতে পারে আওয়ামী লীগ।
২০১৪ সালের মতো ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনেও নিরঙ্কুষ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট। ফলে মন্ত্রিসভায় চট্টগ্রাম থেকে কে কে থাকছেন সেটা নিয়ে ইতিমধ্যেই গুঞ্জন সৃষ্টি হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি গুঞ্জন চট্টগ্রাম-৯ (বাকলিয়া-কোতোয়ালি) আসন থেকে নির্বাচিত ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে নিয়ে। অনেকেই বলছেন, ব্যারিস্টার হওয়াতে হয়ত আইন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেতে পারেন নওফেল। পূর্ণমন্ত্রী না হলেও নওফেলকে হয়ত আইন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দিতে পারেন প্রধানমন্ত্রী।
এছাড়াও এবার চট্টগ্রাম থেকে মন্ত্রিত্ব পাওয়ার দৌঁড়ে এগিয়ে আছেন চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসন থেকে নির্বাচিত ড. হাছান মাহমুদ, চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনের সাংসদ এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী ও চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনের সাংসদ এম এ লতিফ।
২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন ড. হাছান মাহমুদ। তবে ২০১৪ সালে তিনি মন্ত্রিত্ব পাননি। তবে সাংগঠনিকভাবে পালন করেছেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদকের দায়িত্ব। তবে দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ থাকায় এবার তিনি মন্ত্রিত্ব পাবেন বলে শোনা যাচ্ছে। রাউজানের সাংসদ ফজলে করিম চৌধুরী গত সরকারের মেয়াদে রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। সে হিসেবে এবার তাঁকে রেল প্রতিমন্ত্রী করা হবে বলে শোনা যাচ্ছে। এছাড়া ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ভালো যোগাযোগ ও চট্টগ্রাম বন্দরে প্রভাব থাকায় চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনের সাংসদ এম এ লতিফকে বাণিজ্য অথবা নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে বলে গুঞ্জন আছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন জয়নিউজকে বলেন, মন্ত্রিসভায় রদবদল হবে এটাই স্বাভাবিক। ২০০৮ সালে যে মন্ত্রিসভা ছিল ২০১৪ তে সেটা ছিল না। একইভাবে এবারও গতবারের মন্ত্রিসভা থেকে যোগ-বিয়োগ হতে পারে। এটা শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রীই জানেন। ততদিন অপেক্ষা, চলবে জল্পনা আর জনপ্রত্যাশা।