ভারতে গিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে মিথ্যা-ভিত্তিহীন বক্তব্য দিয়ে অপপ্রচার করায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন খুকুরানী বিশ্বাসের পরিবারের সদস্যসহ স্থানীয়রা। নড়াইলের ওই নারী ভারতীয় গণমাধ্যমে দাবি করেন, গত ৫ আগস্টের পর তাদের বাড়িতে পূজাসহ ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে।
গত বুধবার (৪ ডিসেম্বর) বিষয়টি ভাইরাল হয়। তবে ওই এলাকায় গিয়ে খুকুরানীর পরিবারে সদস্যসহ স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখানে এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি।
জানা গেছে, নড়াইল সদর উপজেলার বোড়ামারা (শিকদার পাড়া) গ্রামের অরবিন্দু বিশ্বাসের স্ত্রী খুকুরানী বিশ্বাস গত ২ ডিসেম্বর বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতে যান। এরই মধ্যে চট্টগ্রামের ইসকন নেতা চিন্ময়কে গ্রেফতারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে হামলা-মামলার ঘটনা ঘটে। যা ভারতীয় গণমাধ্যমে বেশ ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছে। এরই মাঝে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ঝড় তোলে খুকুরানী নামে ওই নারীর একটি বক্তব্য।
সেখানে তিনি বলেন, তার বাড়ি বাংলাদেশের নড়াইলে। হিন্দু ও ইসকনরা সমস্যায় আছে। বর্তমানে এখানে তারা ঠিকমত পূজা অর্চনা করতে পারছে না। শঙ্খ বা কাসা বাজালে তাদের বাধা দেওয়া হচ্ছে। তারা জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় আছেন বলেও দাবি করা হয়।
খুকুরানীর ছেলে অমলেন্দু বিশ্বাস বলেন, আমার মা ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটি আমি সবটুকু শুনেছি। সম্পূর্ণ মিথ্যা ভিত্তিহীন বক্তব্য দিয়েছেন। আমি ওই বক্তব্য দেখার পরে মায়ের সঙ্গে কথা বলেছি। মা জানিয়েছেন, তাকে ভারতীয় সাংবাদিকরা বলেছেন, এই কথা বললে বাংলাদেশের হিন্দু বা ইসকনদের ভালো হবে। তাকে ভুল বুঝিয়ে এবং প্ররোচিত করে তার কাছ থেকে এমন বক্তব্য নিয়েছে।
হরিচাদ বিশ্বাস বলেন, আমরা এখানে দীর্ঘদিন যাবৎ বসবাস করছি। কখনো কারো সঙ্গে কোনো বিষয় নিয়ে হামলা-মামলার ঘটনা ঘটেনি। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে এখানে বাস করছি।
কলেজ শিক্ষক শিকদার জাহাঙ্গীর আলম মিঠু বলেন, আমরা হিন্দু-মুসলিম সবাই এখানে সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে বসবাস করে আসছি। খুকুরানী আমাদের বৌদি হয়। তিনি একজন সামাজিক লোক। সবার সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক। তবে কী কারণে তিনি ভারতীয় মিডিয়ায় এমন বক্তব্য দিয়েছেন সেটা বোধগম্য নয়।
এদিকে ভারতে অবস্থানরত খুকুরানী বিশ্বাস মোবাইলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে দাবি করেন, ‘আমি যা বলেছি ভুল করে বলেছি। বাংলাদেশি হিসেবে আপনারা আমাকে ক্ষমা করে দেন। আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি।’
এ বিষয়ে নড়াইল সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘খুকুরানী নামে এক মহিলার ভিডিও বক্তব্য আমরা দেখেছি, বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে খোঁজখবর নিয়েছি। ওই এলাকায় এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি, যা ওই মহিলা বলেছেন। কেউ তাকে প্রভাবিত করে ওই বক্তব্য নিয়ে থাকতে পারে। আমরা এলাকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে সবাইকে নিয়ে কাজ করছি।’
জেএন/এমআর