বাজারে এক লিটারের বোতলজাত সয়াবিন কিনতে গিয়ে কয়েক দোকান ঘুরেও পাচ্ছেন না ক্রেতারা। পরে বাধ্য হয়ে খোলা সয়াবিন তেল কিনে বাড়ি ফিরেছেন অনেকে।
বাজার থেকে বোতলজাত সয়াবিন তেল রীতিমতো উধাও হয়ে গেছে। বিশেষ করে, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের এক থেকে দুই লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল নেই বললেই চলে।
ক্রেতারা বাজারে একাধিক দোকান খুঁজে দুই-একটি বোতলজাত সয়াবিন পেলেও দাম রাখা হচ্ছে বেশি। শুক্রবার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বাজার ও জনবহুল এলাকার বিভিন্ন দোকানে খোঁজ নিয়ে এ তথ্য জানা গেছে।
এদিকে রমজানের আগেই দাম বাড়ানোর পাঁয়তারার অংশ হিসেবে এই অপতৎপরতা, শুল্ক কমানোর পরও দুই মাসে আমদানি কমেছে ২০ শতাংশ, দামও কমেনি।
একাধিক বাজারের খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ভোজ্য তেল পরিশোধন কোম্পানিগুলো বোতলজাত সয়াবিন তেল সরবরাহ করছে না। এর মধ্যে দুই-একটি কোম্পানি করলেও তা চাহিদার তুলনায় খুবই কম।
নাম না প্রকাশের শর্তে কয়েকজন ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, বাজারে সরবরাহ কমিয়ে বোতলজাত সয়াবিন তেলের কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হচ্ছে। আগামী রমজানকে সামনে রেখে কোম্পানিগুলো সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর জন্য এটা করছে বলে তারা অভিযোগ করেছেন।
এদিকে ভোজ্য তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার শুল্ককর কমালেও এর কোনো ইতিবাচক প্রভাব পড়েনি বাজারে।
আমদানিকারকরা বলেছেন, বর্তমানে বিশ্ববাজারে ভোজ্য তেলের দাম বাড়তি। এ অবস্থায় তারা ভোজ্য তেলের দর সমন্বয়ের দাবি জানিয়েছেন।
কয়েকজন ক্রেতা অভিযোগ করে বলেন, কিছু কিছু দোকানে দুই-একটি কোম্পানির অল্প কিছু বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া গেলেও সেটি ক্রয় করতে গেলে এর সঙ্গে আটা, ময়দা কেনার শর্ত জুড়ে দিচ্ছে। ব্যবসায়ীদের দাবি বাজারে কোম্পানিটির আটা, ময়দার চাহিদা কম হওয়ায় বিক্রি বাড়াতে প্রতিষ্ঠান থেকেই এসব শর্ত জুড়ে দিচ্ছে। ফলে তাদের বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, খুচরা পর্যায়ে বর্তমানে এক লিটার খোলা সয়াবিন ১৬৫ থেকে ১৬৮ টাকা, এক লিটারের খোলা পাম অয়েল ১৫৭ থেকে ১৫৯ টাকা ও এক লিটারের সুপার পাম অয়েল ১৬২ থেকে ১৬৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যদিও বাজারে এরচেয়ে বেশি দামে তা বিক্রি হতে দেখা গেছে।
ভোক্তারা অভিযোগ করেছেন, যে দুই-একটি দোকানে বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে, তারা নির্ধারিত দরের চেয়ে অনেক বেশিতে তা বিক্রি করছেন।
টিসিবির হিসেবে, এক লিটারের বোতলজাত সয়াবিন ১৬৭ থেকে ১৭০ টাকা, দুই লিটারের বোতলজাত সয়াবিন ৩৩০ থেকে ৩৪০ টাকা ও পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন ৮১৫ থেকে ৮১৮ টাকা বিক্রি হওয়ার কথা।
ক্যাবের সিনিয়র সহসভাপতি এফ এম নাজির হোসেইন বলেছেন, বিশ্ববাজারে দাম বৃদ্ধির অজুহাতে এখন দেশে ভোজ্য তেলের দাম বাড়ানোর কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু বর্তমানে বাজারে যে তেল বিক্রি হচ্ছে তা আগে আমদানি করা।
তিনি বলেন, ভোক্তাদের জিম্মি করে ভোজ্য তেলের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা করা হচ্ছে।
অতচ দেশের বাজারে ভোজ্য তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে দুই দফায় আমদানি শুল্ক কর কমিয়েছে সরকার। প্রথম দফায় ১৭ অক্টোবর ও দ্বিতীয় দফায় ১৯ নভেম্বর শুল্ককর কমিয়ে তা ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। এতে প্রতি কেজি অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেলে শুল্ককর কমেছে ১০ থেকে ১১ টাকা।
এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য বলছে, চলতি বছরের অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেল আমদানি হয়েছে ৩ লাখ ৬৮ হাজার টন।
গত বছরের একই সময়ে আমদানি হয়েছিল ৪ লাখ ৬০ হাজার টন। সে হিসেবে আমদানি কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ। শুল্ককর কমানোর ফলে ভোজ্য তেলের আমদানি বাড়ার কথা, উলটো আমদানি আরও কমেছে।
আমদানিকারকরা জানিয়েছে, বর্তমানে বিশ্ববাজারে ভোজ্য তেলের দাম বেড়েছে। এ পরিস্থিতিতে শুল্ক না কমালে বাজারে ভোজ্য তেলের দাম বেড়ে যেত। কিন্তু শুল্ক কমানোর ফলে কোম্পানিগুলো আগের দরেই ভোজ্য তেল বিক্রি করছে। সূত্র-ইত্তেফাক
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, শুল্ক কমানোর পরও কেন ভোজ্য তেলের দাম কমছে না-এ বিষয়ে জানতে সম্প্রতি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি)।
বৈঠকে ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্য তেলের মূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি জানিয়ে যৌক্তিক দর সমন্বয়ের দাবি জানিয়েছেন।
জেএন/পিআর