২৩ বছরের বেশি সময় ধরে সিরিয়া শাসন করেছেন বাশার আল-আসাদ। তাকে সমর্থন দিয়ে আসছিল ইরান ও রাশিয়া।
তবে গত ২৭ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) অভিযানে কার্যত আসাদ যুগের অবসান হলো।
রোববার (৮ ডিসেম্বর) সিরিয়ার বিদ্রোহীরা ঘোষণা দেয়, ‘স্বৈরশাসক’ প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন এবং সিরিয়া এখন মুক্ত।
বার্তাসংস্থা রয়টার্স সিরিয়ার দুইজন সিনিয়র কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট আসাদ অজানা গন্তব্যের উদ্দেশে রাজধানী দামেস্ক ছেড়েছেন।
এরপর সিরিয়ান প্রধানমন্ত্রী জানান, তিনি বিদ্রোহীদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে রাজি। সিরিয়ার প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মেদ ঘাজি জালালি বলেন, তিনি সিরিয়া ছেড়ে যাবেন না এবং বিদ্রোহীদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে রাজি। তিনি বলেন, জনগণ যাকেই বেছে নেবে আমরা তাকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়া এবং ইরান বাশার আল-আসাদ সরকারকে সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছিল। বাশার আল-আসাদ ২০০০ সাল থেকে সিরিয়ার ক্ষমতায় রয়েছেন। এর আগে তার বাবা হাফেজ আল-আসাদ ২৯ বছর দেশটি শাসন করেছিলেন।
মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ড. সাইমন ফ্রাঙ্কেল প্র্যাট বলেছেন, আসাদ সরকার বছরের পর বছর ধরে বিদেশি সমর্থনের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করেছে এবং সফলভাবে টিকে গেছে।
ইসরায়েলের কঠোর আক্রমণের ফলে হিজবুল্লাহর বিশাল পতন এবং ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ক্রমশ কমে আসা রাশিয়ার সম্পদ ও সরে যাওয়া মনোযোগ আসাদকে একা করে দিয়েছে, যা এইচটিএসের জন্য চমকপ্রদ আক্রমণ চালিয়ে পুনরায় অঞ্চল দখল করার উপযুক্ত মুহূর্ত তৈরি করে।
তিনি আরও বলেন, যুদ্ধ আবারও ফুঁসে ওঠার কারণ দুটো। একটি হলো, উত্তর সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ অস্থিরতার পুরোপুরি সমাধান না হওয়া এবং অন্যটি হলো আসাদ সরকার যেসব বিদেশি সমর্থনের উপর নির্ভর করেছিল তার ক্ষয় বা পতন।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিরিয়া এক বৈশ্বিক দাবা বোর্ডে পরিণত হয়েছে, যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তিগুলো তাদের কৌশলগত লক্ষ্য অর্জনের জন্য মিত্রদের সাহায্য করার ভান ধরে আসছে। তুরস্ক, সৌদি আরব এবং মার্কিন সমর্থিত বিকেন্দ্রীভূত সশস্ত্র বিরোধী দলগুলো আসাদকে চ্যালেঞ্জ করছিল এতোদিন।
সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের নতুন করে আক্রমণ শুরুর পর তাদের লক্ষ্য করে হামলা শুরু করেছিল রাশিয়ার যুদ্ধবিমানগুলো। এরপর ইরান থেকেও যোদ্ধা পাঠানো হয় বলে খবর চাউর হয়। তবে শেষমেশ আসাদ সরকারের রক্ষা হলো না।
এমন পরিস্থিতিতে বাশার আল-আসাদের সহযোগী ইরান সমর্থিত লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ সিরিয়ার নির্দিষ্ট কিছু এলাকা থেকে তাদের সেনাদের সরিয়ে নিচ্ছে। হিজবুল্লাহর ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র বার্তাসংস্থা এএফপিকে জানিয়েছে, তারা হোমস ও দামেস্ক শহর থেকে সৈন্যদের প্রত্যাহার করছে।
রয়টার্স জানিয়েছে, লেবানন সীমান্তের কাছে সিরিয়ার পশ্চিমাঞ্চলীয় কুসেইর শহর থেকেও হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা সরে যাচ্ছে।
দ্যা সেন্টার ফর স্ট্রাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ এর মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক কর্মসূচির সিনিয়র ফেলো নাতাশা হল বিবিসি রেডিও ফাইভ লাইভ’কে বলেছেন, এটাকে সত্যিকার অর্থেই মনে হচ্ছে যে সিরিয়ায় ৫৪ বছরের স্বৈরশাসনের চূড়ান্ত মুহূর্ত।
সিরিয়ায় আসাদ পরিবারের শাসন শুরু হয়েছিল সত্তরের দশকের শুরু থেকে। হল বলেন, প্রেসিডেন্ট আসাদ দামেস্ক ছেড়ে গেছেন বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।
নাতাশা হল বলেন, মূলত আসাদের দুই ঘনিষ্ঠ সহযোগী রাশিয়া ও ইরান অন্য ঘটনায় দুর্বল ও মনোযোগ হারানোর কারণেই তার এ পরিণতি হলো।
রাশিয়া কয়েক বছর ধরে ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত আর ইরান সমর্থিত দুই গোষ্ঠী হামাস ও হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের হামলায় বিপর্যস্ত।
জেএন/পিআর