দেশের বির্তর্কিত শিল্পগ্রুপ এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড ও এস আলম পাওয়ার প্লান্ট লিমিটেডসহ ৬টি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে আজ মঙ্গলবার নোটিশ টাঙিয়ে দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
গ্রুপটির মানব সম্পদ ও প্রশাসন প্রধান মোহাম্মদ বোরহান উদ্দিন স্বাক্ষরিত নোটিশে উল্লেখ করা হয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে অনিবার্য কারণবশত বুধবার থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কারখানাগুলো বন্ধ থাকবে। তবে কারখানার নিরাপত্তা, সরবরাহ ও জরুরি বিভাগ খোলা থাকবে।
বন্ধ কারখানাগুলো হলো এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ, এস আলম পাওয়ার প্ল্যান্ট লিমিটেড, এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লিমিটেড, এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লিমিটেড–নফ, এস আলম পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেড ও ইনফিনিটি সি আর স্ট্রিপস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।
এর মধ্যে কর্ণফুলীর নদী তীরবর্তী চরলক্ষ্যা ইউনিয়নের ইছানগর এলাকায় অবস্থিত তিনটি, কর্ণফুলী উপজেলার কালারপুলের ২টি এবং বাঁশখালী উপজেলায় একটি কারখানা রয়েছে গ্রুপটির।
এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের ডিজিএম রফিকুল ইসলাম বলেন, কারখানা বন্ধের নোটিশ পেয়েছি এই বিষয়ে অফিসিয়ালি সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।
এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লিমিটেডের উৎপাদন ব্যবস্থাপক নাজিম উদ্দীন বলেন, ‘আমাদের কারখানায় সবকিছু স্বাভাবিক চললেও আকস্মিক ছুটির নোটিশ দেওয়া হলো। কোন কারণে সাধারণ ছুটি দিয়ে দিল, জানি না। আমরা এ পরিস্থিতিতে আকাশ থেকে পড়লাম।
এদিকে গ্রুপটির মোট ছয়টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য হঠাৎ করে বন্ধ ঘোষণা করায় শ্রমিকরা একযোগে বিক্ষোভ শুরু করে। একপর্যায়ে শ্রমিকদের তোপের মুখে অফিস কর্মকর্তারা অফিস কক্ষ ছাড়তে বাধ্য হয়।
শ্রমিকরা জানান, কোন নোটিশ বা পূর্ব ঘোষণা ছাড়া হঠাৎ করে দুপুর বেলায় অফিস কর্তৃপক্ষ কারখানার সকল ধরনের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেন, কারখানা কর্তৃপক্ষের হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত শ্রমিকরা মেনে নিতে পারছে না।
অনেকেই ক্ষোভের সাথে বলতে থাকেন, তারা দীর্ঘদিন ধরে এস আলমের বিভিন্ন কারখানায় কম বেতনে চাকরি করে আসছে। হঠাৎ করে কোম্পানির বন্ধ করার ঘোষণায় মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে।
কয়েকজন বিলাপ করে বলতে শোনা যায়, কাল থেকে মা, বা, বৌ, বাচ্চাদের নিয়ে কোথায় যাব? কি খাওয়াবো? স্বাধীনতা কেড়ে নিলো রুজি রোজগার!
আব্দুল হক নামে বিক্ষুদ্ধ এক শ্রমিক দাবি করেন অবিলম্বে কারখানা খোলা রাখার। দাবি না মানলে শ্রমিকদের নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনে যাওয়ার হুশিয়ারি দেন তিনি।
এ বিষয়ে এস আলম গ্রুপের প্রধান কার্যালয়ের দুই কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণমাধ্যমকে জানান, কাঁচামালের সংকট দেখা গিয়েছে। ব্যাংকের সহযোগিতা না পাওয়ায় আমদানিও করা যাচ্ছে না।
ফলে কারখানা চালু করার কোন সুযোগ নেই। এ জন্য বাধ্য হয়ে কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সাময়িকভাবে কারখানা বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে। এ ছয়টি কারখানায় অন্তত ১২ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করতেন বলে তাঁরা জানান।
উল্লেখ্য : এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। ২০১৭ সালে গ্রুপটি ইসলামী ব্যাংক দখল করে নেয়। এরপর আরও একাধিক ব্যাংক ও বিমা দখল করে নামে-বেনামে ব্যাংকগুলো থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা তুলে নেয় গ্রুপটি।
এরমধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক উল্লেখযোগ্য।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এসব ব্যাংককে এস আলম–মুক্ত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।পাশাপাশি গ্রুপের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামেও ঋণ অনুমোদন করা হয়।
জেএন/পিআর