২২ বছরের বেশি সময় ধরে আটকে আছে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, ফার্মাসিস্ট ও মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্টদের পদমর্যাদা ও বেতন স্কেল বৃদ্ধির প্রক্রিয়া। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদা ও বেতন স্কেল বাড়ানোর পর থেকেই তারা এ দাবি করে আসছেন। এ সময়ে ডিপ্লোমাধারী অন্য পেশাজীবীদের দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদা প্রদান করা হলেও টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। এমন পরিস্থিতিতে আজ বৃহস্পতিবার টেকনোলজিস্টদের চাকরি ১০ম গ্রেডে উন্নীতকরণসহ সার্বিক বিষয় পর্যালোচনায় আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
জানা গেছে, ২০০২ সালে বিডিএইচটিএ এবং বিডিপিএর পক্ষ থেকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীকে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মতো দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদা ও বেতন স্কেল বৃদ্ধির আবেদন জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সেই বছরের ১৭ জানুয়ারি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে তৎকালীন সংস্থাপন (বর্তমানে জনপ্রশাসন) সচিবকে নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই সময় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও তাদের চাকরি দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদা ও বেতন স্কেল উন্নীত করার প্রস্তাব করে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনায় এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের আলোকে ২০০২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, ফার্মাসিস্ট ও মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্টদের পদমর্যাদা এবং উচ্চতর বেতন স্কেল প্রদানের দাবি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মতামত দিতে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি করা হয়।
গঠিত কমিটির ৭ম সভা শেষে ২০০৩ সালের নভেম্বরে ডিপ্লোমাধারীদের পদমর্যাদা ও বেতন স্কেল বৃদ্ধির জন্য সুপারিশ করা হয়। সেই সুপারিশের আলোকে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সচিব সফররাজ হোসেন একই বছরের ডিসেম্বর মাসে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, ফার্মাসিস্ট ও মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্টদের দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড পদমর্যাদা প্রদানসহ বেতন স্কেল উন্নীত করার প্রস্তাব প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির বিবেচনার জন্য সারসংক্ষেপ পাঠান।
এরপর ২০০৫ সালের প্রথম দিকে প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটিতে ওই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয় এবং সভা থেকে সুপারিশ আকারে জানানো হয় যে, বিষয়টি প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির কার্যপরিধির বাইরে। এটি বেতন বৈষম্য দূরীকরণ সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার কমিটিতে পাঠাতে হবে। বিষয়টি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সংস্থাপন মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়।
তবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সুপারিশ দীর্ঘ ২০ বছরেও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। ডিপ্লোমাধারী ও শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি আদায়ে বিগত সরকারের সময় বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করলেও তা আমলে নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
সম্প্রতি ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর টেকনোলজিস্টরা পুনরায় তাদের দাবি আদায়ে সোচ্চার হন। বিষয়টি আমলে নিয়ে আজ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে স্বাস্থ্য বিভাগের সচিবের সভাপতিত্বে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভা আহ্বান করা হয়েছে। সভায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উপস্থিত থাকতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ আব্দুল হাই গত ৩১ ডিসেম্বর এক চিঠিতে জানিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি গাজী সাইফুল ইসলাম বলেন, দেশের অন্য সব ডিপ্লোমাধারীর চাকরি দশম গ্রেডের হলেও শুধু তাদের চাকরি একাদশ গ্রেডে রয়ে গেছে। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার ডিপ্লোমা কৃষিবিদ, ডিপ্লোমা নার্স সবাই দশম গ্রেড পদমর্যাদা ও বেতন স্কেল ভোগ করেছেন। সমশিক্ষাগত যোগ্যতা থাকার পরেও মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, ফার্মাসিস্ট ও মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্টরা আগের অবস্থানে রয়ে গেছেন, যা তাদের প্রতি অবিচার।
বাংলাদেশ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক মহাসচিব মো. সেলিম মোল্লা বলেন, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, ফার্মাসিস্ট ও মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্টদের মর্যাদা বৃদ্ধির দাবি যৌক্তিক। শুধু রাজনৈতিক বিবেচনায় বিগত সরকারের সময়ে এই যৌক্তিক দাবিটি বাস্তবায়িত হয়নি।
তিনি বলেন, তাদের পদমর্যাদার ও বেতন স্কেল বৃদ্ধির কার্যক্রম প্রায় চূড়ান্ত হয় বিএনপি সরকারের আমলে। কিন্তু আদেশ জারির পূর্বেই তাদের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ সরকার তাদের দাবিটি বাস্তবায়নে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি, যার ফলে আমরা বৈষম্যের শিকার হয়েছি। তিনি অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবিটি দ্রুত বাস্তবায়নের আহ্বান জানান।
জেএন/এমআর