চট্টগ্রামের রাজনীতির নওজোয়ান নওফেল। মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। চট্টলবীর মহিউদ্দিন চৌধুরীর পুত্র এই নওফেল। যিনি রাজনীতিতে আসলেন, দেখলেন এবং জয় করলেন। ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েই সরকারের মন্ত্রী পরিষদে স্থান করে নিয়েছেন। পেয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রীর দায়িত্ব।
সাবেক মেয়র এবং মহানগর আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের সভাপতি প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর বড় ছেলে নওফেল। যাঁর রাজনৈতিক যাত্রা শুরু চট্টগ্রাম মহানগর থেকে, যুবলীগের রাজনীতি থেকে।
১৯৮৩ সালের ২৬ জুন চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ব্যারিস্টার নওফেল। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীকে ২ লাখ ২৩ হাজার ৬১৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ডা. শাহাদাত হোসেন পান ১৭ হাজার ৬৪২ ভোট। যেখানে মোট ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৯০ হাজার ১৩১ জন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত ইচ্ছাতেই মহিউদ্দীনপুত্র নওফেল আওয়ামী লীগের মতো দেশের সবচেয়ে প্রাচীন রাজনৈতিক সংগঠনের নীতিনির্ধারণী কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক পদে আছেন। ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে টানা সাড়ে ১৬ বছর চট্টগ্রামের মেয়র ছিলেন তাঁরা বাবা মহিউদ্দিন চৌধুরী।
মহিউদ্দিনপুত্র নওফেলের উপমন্ত্রী হওয়ার খবরে উচ্ছ্বসিত চট্টগ্রামের তরুণ প্রজন্ম। তাঁরা বলছেন, এবারের সংসদে তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিত্ব করবেন ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। বিশেষ করে শিক্ষা উপমন্ত্রী হওয়ার খবরে খুশি হয়েছেন দেশের অনেকে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ২০১০ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বাবার পক্ষে কাজ করে আলোচনায় আসেন তিনি। বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় লন্ডন স্কুল অব ইকনোমিক্স থেকে স্নাতক করা নওফেল পরবর্তীতে লন্ডন থেকে পাস করেন ব্যারিস্টারি। ১/১১ সময়ে লন্ডনে অবস্থানরত বিদেশি আইনজীবী ও অর্থনীতিবিদদের একত্রিত করে শেখ হাসিনা মুক্তি আন্দোলনের মাধ্যমে দেশের বাইরে জনমত তৈরিতে ভূমিকা রাখেন।
মাত্র ৩৩ বছর বয়সে আওয়ামী লীগের মতো ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয় নওফেলকে। তিনি তাঁর যোগ্যতা, মেধা এবং রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দিয়ে দায়িত্বটি পালন করছেন। আমরা খেয়াল করেছি, দলে দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে নানা গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সভা সেমিনারে দলের প্রতিনিধিত্ব করছেন এই তরুণ নেতা।
মহিউদ্দিন চৌধুরী দীর্ঘ ১৬ বছর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ছিলেন চট্টগ্রামের রাজনীতির কালজয়ী এক চরিত্র। বাবার নানা উন্নয়নকাজে পেছন থেকে পরামর্শকের ভুমিকা পালন করেছেন নওফেল। দলে দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে দলীয় কর্মসূচিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেন তিনি।
মহিউদ্দিনপুত্র মহিবুল হাসান নওফেল শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ায় খুশি হয়েছেন দেশের শিক্ষা সংশ্লিষ্টরাও। বিশেষ করে সরকারের বিগত সময়ে শিক্ষাখাতে যে সমালোচনার দায় নিতে হয়েছে, তা থেকে কাটিয়ে উঠাই হবে এই মন্ত্রণালয়ের প্রধান ও প্রথম কাজ। এই চ্যালেঞ্জের জন্যনেত্রী শেখ হাসিনা বেছে নিয়েছেন নওফেলকে। যাঁর দূরদৃষ্টির প্রশংসা না করে উপায় নেই। শুধু দেশবাসী বা চট্টগ্রামবাসীই নয়, কনিষ্ঠ এই মন্ত্রীকে মন্ত্রিসভায় পেয়ে আওয়ামী লীগেও এসেছে চাঙ্গাভাব। বয়সে তরুণ হওয়ায় ভবিষ্যতের নেতা হিসেবে নওফেলকে সম্ভাবনাময় হিসেবে বিবেচনা করছে দল। তাছাড়া আইনের ছাত্র এই তরুণ নেতা সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড এবং কথাবার্তায়ও যথেষ্ট স্মার্ট। রাজনীতির বাইরেও ঢাকা বারের আইনজীবী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিরও সদস্য এবং বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল বিজয় টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
সবকিছু ছাপিয়ে আলোচনার আকর্ষণীয় দিক হলো, সদ্য পিতা হারানো নওফেল ভোটের মাঠে রাজনৈতিক অভিভাবক হিসেবে কাছে পেয়েছেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনকে। নিন্দুকের মুখে ছাই দিয়ে নওফেল ভোটের মাঠে মেয়রকে অভিভাবক করে এগিয়েছেন। মেয়রও যোগ্য অভিভাবকের মতো বুকে টেনে নিয়েছেন নওফেলকে। এই ইস্পাতদৃঢ় ঐক্য নিয়ে এসেছে বিজয়। সেই বিজয়ে ভর করে নওফেল তাক লাগিয়েছে উপমন্ত্রী হয়ে। ভবিষ্যতের সব চ্যালেঞ্জ সফলভাবে জয় করবে নওফেল, এই প্রত্যাশা সবার।
লেখক: সম্পাদক, জয়নিউজ