চট্টগ্রামের রাজনীতির চিরতরুণ ও চিরসবুজ নেতা সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। চট্টলার প্রখ্যাত নেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ও নুর নাহার জামানের সন্তান এই জাবেদ। ভূমি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত এই মন্ত্রী ১৯৬৯ সালে দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারা থানার সম্ভ্রান্ত মুসলিম বংশে জন্ম। যাঁর পিতা দেশের একজন গর্বিত মুক্তিযোদ্ধা এবং দুঃসময়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতির কাণ্ডারি।
তাঁর বাবা আখতারুজ্জামান চৌধুরী ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন প্রবীণ সদস্য। যিনি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য পদে দীর্ঘদিন সুনাম ও গণমানুষের আস্থার মণিকোটার একজন ছিলেন। সাইফুজ্জামান চৌধুরী মূলত বাবার মাধ্যমে রাজনীতিতে সক্রিয় হন। কারণ তিনি বেড়ে উঠেছেন বাবার চট্টগ্রামের আনোয়ারা আসনের আলো-বাতাসে। যেখানে তিনি নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন। বাবাকে হারানোর পর ওই আসনে উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। এরপর দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের পর জাবেদকে করা হয় ভূমি প্রতিমন্ত্রী।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আসনে বিজয়ী হন নৌকার প্রার্থী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। তিনি পান ২ লাখ ৪৩ হাজার ৪১৫ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামী ফ্রন্টের মোমবাতি প্রতীকের এম এ মতিন পান ৩ হাজার ৭৯৪ ভোট। বিএনপির প্রার্থী সরওয়ার জামাল নিজাম পান ৩ হাজার ১৫৩ ভোট। এখানে মোট ভোটার ছিল ৩ লাখ ১০ হাজার ৪৬৬ জন।
বাংলাদেশের ভাগ্য ভালো যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রসিদ্ধ একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষিত এই তরুণ জাবেদ প্রতিমন্ত্রী হিসেবে আমূল পরিবর্তন এনেছেন। তাঁর পরিচালনায় র্যাপিড একশন ও হঠাৎ সফর বাংলাদেশের বহু ভূমি অফিসে রীতিমতো ভূমিকম্প ঘটিয়ে আলোচনা ও সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন একাধিক। দক্ষ, স্বচ্ছ এবং জনবান্ধব ভূমি ব্যবস্থাপনা- এই ছিল তাঁর টার্গেট। আপাতদৃষ্টিতে সফল এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অত্যন্ত স্নেহভাজন এই মন্ত্রী দক্ষ, আধুনিক ও টেকসই ভূমি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ভূমির সর্বোত্তম ব্যবহার এবং ভূমি সংক্রান্ত জনবান্ধব সেবা নিশ্চিত করতে সফল হয়েছেন।
সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদ চলছে, এর আগে দ্বিতীয় মেয়াদে চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপক উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। অবহেলিত কর্ণফুলী ও আনোয়ারা জনপদে সরকারের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে ভূমিপ্রতিমন্ত্রীর চেষ্টায়। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার কর্ণফুলী ও আনোয়ারা বেশ গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। বঙ্গোপসাগর উপকূলে অবস্থিত এ এলাকায় রাষ্ট্রপরিচালিত সার-কারখানা, সিইউএফএল, কাফকো, কেইপিজেডসহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে। নির্মিত হচ্ছে কর্ণফুলী টানেল। কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিতব্য টানেলের মুখ বেরিয়ে যাবে আনোয়ার উপজেলায়। টানেলের সুড়ঙ্গপথ হয়ে চট্টগ্রামে চলাচল করবে সব ধরনের যানবাহন। বদলে যাবে নগরের পাশে থাকা গ্রাম।
বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। কৃষি হচ্ছে এ দেশের জাতীয় আয়ের অন্যতম উৎস এবং প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষের জীবিকার অবলম্বন। তাই এ দেশে ভূমি সম্পদের গুরুত্ব অপরিসীম। মৌলিক প্রাকৃতিক সম্পদসমূহের মধ্যে ভূমি হচ্ছে অন্যতম প্রাকৃতিক সম্পদ যা মানুষের আবাসন, নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য, শিল্পে কাঁচামাল ইত্যাদি সরবরাহের মূল উৎস। কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং ভূমির অপরিকল্পিত ব্যবহারের কারণে আমাদের এ গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ভূমি সংক্রান্ত কার্যাদি সম্পাদনের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রণালয় গঠন করা হয়। ভূমি সংক্রান্ত যাবতীয় সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে বর্তমানে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর, ভূমি সংস্কার বোর্ড, ভূমি আপিল বোর্ড, ভূমি প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং হিসাব নিয়ন্ত্রক (রাজস্ব) দপ্তর ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করছে।
উন্নয়নের বৈপ্লবিক পরিবর্তনে বদলে দিচ্ছেন বর্তমান সরকারের ভূমিপ্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপি। জানা যায়, তিনি দুই মেয়াদে আনোয়ারায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার উন্নয়ন করেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে বেড়িবাঁধের জন্য আরো ২৮০ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করেছেন। দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর ঘিরে বন্দরের অদূরেই চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার গহিরা এলাকায় বিশেষ অর্থনৈতিক জোন গড়তে ৭৭৪ একর জমি ব্যবহারের জন্য গত সেপ্টেম্বরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যদিয়ে শিল্পায়ন, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে সম্ভাবনার একটি নতুন দ্বার উন্মোচন হয়েছে। বিশেষ অর্থনৈতিক জোন প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ৫৩ হাজার ৪২০ জন লোকের কর্মসংস্থানের পথ সুগম হবে বলে আশাপ্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আনোয়ারা অর্থনেতিক জোনের অবকাঠামো নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৪২০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। ইতোমধ্যে এই অর্থনৈতিক জোনের জন্য ২৯১ একর খাস জমির দলিল সম্পাদন করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। কর্নফুলী উপজেলা নির্মাণে প্রাথমিকভাবে বরাদ্দ ৫০০ কোটি টাকা। সেখানে ৩৭১টি শিল্প-কারখানা স্থাপন করা সম্ভব হবে। এরমধ্যে ২৫০টিই জাহাজ নির্মাণ শিল্পের জন্য বরাদ্দ থাকবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আনোয়ারায় অর্থনৈতিক জোনের প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ৫৩ হাজার ৪২০ জন লোকের কর্মসংস্থান হবে।
সরকারের ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়ে ২০১০ সালে বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল আইনবিধি করা হয়। এ আইনবিধির আওতায় আগামী ১৫ বছরে দেশে একশ’ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কোটি মানুষের কর্মসংস্থান এবং প্রতিবছর ৪০ বিলিয়ন ডলারের পণ্যসামগ্রী রফতানির সুযোগ সৃষ্টি করতে চায় সরকার। আমাদের চট্টলসন্তান জাবেদ সাহেব মন্ত্রী হয়ে দায়িত্ব নেওয়ার পর ভূমি মন্ত্রণালয় পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের একটি সফল মন্ত্রণালয়ে, যেটি যুগোপযোগী পরিকল্পনা ও নীতির মাধ্যমে বাংলাদেশের ভূমির সুষ্ঠ ও সর্বোত্তম ব্যবহার সুনিশ্চিত করার দায়িত্ব পালন করে এসেছে।
সাইফুজ্জামান চৌধুরী ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের নির্বাহী কমিটি এবং দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিল্প প্রতিষ্ঠান আরামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান। তিনি চট্টগ্রাম চেম্বার অব কর্মাস এন্ড ইন্ডাস্ট্রির তিনবারের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ছিলেন।
এদিকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার খবরে রোববার জাবেদের নিজ এলাকায় আনন্দ র্যালি ও মিষ্টি বিতরণ হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণে দুর্নীতি বন্ধে তাঁর বিগত সময়ের সাহসী অভিযানের প্রশংসা এখানকার মানুষের মুখে মুখে। তাঁদের মতে,
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে সততা ও সাহসিকতার পুরস্কার পেয়েছেন সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। তাঁকে ভূমি প্রতিমন্ত্রী থেকে ভূমিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়াই এর প্রমাণ। এ পুরস্কার জাবেদের জন্য যেমন গর্বের, তেমনি গর্বের চট্টগ্রামবাসীর জন্যও।
লেখক: সম্পাদক, জয়নিউজবিডি