অবিশ্বাস্য! অবিশ্বাস্য এক ম্যাচই বটে। প্রথম মিনিটে আতলেতিকো মাদ্রিদের গোল, এরপর ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের পেনাল্টি মিস এবং শেষে টাইব্রেকারের মহানাটকে হুলিয়ান আলভারেজের গোল বাতিল হওয়া। সব মিলিয়ে আজ আতলেতিকোর মাঠে মঞ্চস্থ হয়েছে মনে রাখার মতো এক লড়াই।
আর চ্যাম্পিয়নস লিগের ধ্রুপদি এই লড়াইয়ে আতলেতিকোকে ৪-২ গোলে হারিয়ে শেষ আটে গেছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন রিয়াল। এর আগে নির্ধারিত সময়ের খেলায় রিয়ালকে আতলেতিকো ১-০ গোলে হারালেও দুই লেগ মিলিয়ে ম্যাচ সমতায় ছিল ২-২ গোলে।
টাইব্রেকারে কিলিয়ান এমবাপ্পে, জুড বেলিংহাম, ফেদেরিকো ভালভের্দে এবং আন্তোনিও রুদিগার লক্ষ্যভেদ করলেও মিস করেছেন লুকাস ভাসকেজ। অন্য দিকে আতলেতিকোর হয়ে আলেক্সান্দার সোরলথ, আনহেল কোরয়ো গোল করলেও মিস করেছেন আলভারজে ও মার্কোস লরেন্তে। এর মধ্যে আলভারেজের গোল বাতির হয়েছে অদ্ভু কারণে। ডান পায়ে শট নেওয়ার আগ মুহূর্তে খানিকটা নিয়ন্ত্রণ হারান আর্জেন্টাইন তারকা, এর ফলে তাঁর বাঁ পাটাও লেগে যায় বলে। আর ‘ডাবল টাচ’ হওয়ায় বল জালে জড়ালেও বাতিল হয় সেই গোল। আর এটিই শেষ পর্যন্ত গড়ে দিয়েছে ম্যাচের পার্থক্য।
রিয়ালের নাটকীয় এই জয় ভিনিসিয়ুসকে ট্র্যাজিক হিরো হওয়া থেকেও বাঁচিয়ে দিয়েছে। চ্যাম্পিয়নস লিগে ভিনিসিয়ুস জুনিয়র বরাবরই বড় ম্যাচের তারকা। সেমিফাইনাল-ফাইনালে এগিয়ে এসে দলের দায়িত্ব নিতে দেখা গেছে তাঁকে। আজকের ম্যাচটা শেষ ষোলোর হলেও গুরুত্ব একটুও কম ছিল না। তবে এবারের চিত্রনাট্যটা লেখা হয়েছে ভিন্নভাবে। যেখানে লেখা ছিল না ভিনির নায়ক হওয়ার কথা। এমনকি পেনাল্টি মিস করার কারণে হতে পারতেন ভিলেনও। কিন্তু সতীর্থরা এবং ভাগ্য তাঁকে বাঁচিয়ে দিয়েছে।
আতলেতিকোর মাঠে প্রথম লেগের লিড হারাতে এক মিনিটও লাগেনি রিয়ালের। ম্যাচ শুরু হতে না হতেই দারুণ এক আক্রমণ থেকে গোল করেন কনর গ্যালাগার। চ্যাম্পিয়নস লিগে এটি আতলেতিকোর সবচেয়ে দ্রুততম গোল। আর রিয়ালের জন্য এটি ২০১০ সালের পর চ্যাম্পিয়নস লিগে তাদের হজম করা দ্রুততম গোল। এই গোলের পর রিয়াল রীতিমতো ঝাঁপিয়ে পড়ে আতলেতিকোর ওপর। আতলেতিকোও অবশ্য ছেড়ে কথা বলেনি।
দারুণ প্রেসিংয়ে পাল্টা জবাব দেয় তারাও। দুই দলের এমন আক্রমণাত্মক মনোভাবের কারণেই রোমাঞ্চকর হয়ে ওঠে দ্বৈরথ।
তবে রিয়ালের আক্রমণগুলো আতলেতিকোর বক্সে এসে বারবার খেই হারাচ্ছিল। অন্য দিকে পাল্টা আক্রমণে আতলেতিকোও চেষ্টা করছিল সুযোগ তৈরির। ২৫ মিনিটে দুর্দান্ত গোলকিপিংয়ে রিয়ালকে বাঁচান থিবো কোর্তোয়া। ৩৫ মিনিটে আরও একবার গোলের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল আতলেতিকো। তবে এবারও অল্পের জন্য হতাশ হতে হয় স্বাগতিকদের। একটু পর ফের আলভারেজকে হতাশ করেন কোর্তোয়া।
বিরতির পরও রিয়ালকে চেপে ধরে আতলেতিকো। শুরুর দিকেই একাধিক সুযোগ তৈরি করে তারা। যদিও গোল পাওয়া হয়নি। সুযোগ পেয়েছে রিয়ালও। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে তারাও। তবে ৬৮ মিনিটে ম্যাচের দৃশ্যপট বদলে দেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। প্রতি-আক্রমণ থেকে আতলেতিকোর দুই ডিফেন্ডারকে নাকাল করে ঢুকে পড়েন আতলেতিকো বক্সে। উপায় না দেখে ফাউল করেই তাঁকে থামাতে হয় লেংলেকে। তবে নাটক তখনো আরও বাকি। পেনাল্টিটা মিসই করে বসেন ভিনিসিয়ুস। শট নিয়ে বল পাঠান অনেক বাইরে দিয়ে।
রিয়াল সুযোগ মিস করায় সমতাতেই এগিয়ে চলে ম্যাচ। দুই দলই বেশ কিছু সুযোগ পেয়েছিল এগিয়ে যাওয়ার। কিন্তু নির্ধারিত সময়রে পর অতিরিক্ত সময়েও কোনো দল আর গোল পায়নি। যে কারণে ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে, যেখানে বাজিমাত করে রিয়াল।
জেএন/এমআর