শান্তিতে নোবেলের জন্য মনোনীত হলেন ইমরান খান

অনলাইন ডেস্ক

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন পুরস্কার নোবেলের জন্য মনোনীত হয়েছেন। পাকিস্তানে মানবাধিকার এবং গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে বিশেষ ভূমিকা রাখার জন্য ২০২৫ সালের নোবেল শান্তি ক্যাটাগরিতে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তাকে।

- Advertisement -

নরওয়ের রাজনৈতিক দল পার্টিয়েট সেন্ট্রামের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা এক বার্তায় নিশ্চিত করেছে এ তথ্য। জানা গেছে পাকিস্তান ওয়ার্ল্ড অ্যালায়েন্স (পিডব্লিউএ) নামের একটি অ্যাডভোকেসি গ্রুপের প্রচেষ্টায় ২০২৫ সালের শান্তিতে নোবেলের সম্ভ্যাব প্রার্থীদের তালিকায় ওঠানো সম্ভব হয়েছে ইমরান খানের নাম। পিডব্লিউএ পার্টিয়েট সেন্টরামের একটি অঙ্গসংগঠন।

- Advertisement -google news follower

এক্সে পোস্ট করা বার্তায় বলা হয়েছে, “আমরা আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে পিডব্লিউএ এমন একজনকে ২০২৫ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দিয়েছে, যিনি এই পুরস্কারের জন্য হকদার। তিনি পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। পাকিস্তানে মানবাধিকার ও গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে যে অবদান তিনি রেখেছেন, তা আমলে নিয়েই আমরা তার নাম সুপারিশ করেছি।”

শক্তিশালী বিস্ফোরক ডিনামাইটের আবিষ্কারক ও সুইডিশ রসায়নবিদ আলফ্রেড বের্নহার্ড নোবেল ১৮৯৬ সালে মারা যান। মৃত্যুর আগে তার সমুদয় সম্পত্তি দান করার পাশাপাশি উইল করে গিয়েছিলেন যে প্রতি বছর যারা পদার্থ, রসায়ন, চিকিৎসা, সাহিত্য ও শান্তিতে বিশেষ অবদান রাখতে পারবেন, তাদেরকে যেন এই সম্পত্তি থেকে প্রাপ্ত অর্থ থেকে পুরস্কৃত করা হয়। ১৯৬৯ সাল থেকে আগের ৫টির পাশাপাশি নতুন ক্যাটাগরি হিসেবে যুক্ত হয়েছে অর্থনীতি।

- Advertisement -islamibank

১৯০১ সাল থেকে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা শুরু হয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ছেদ পড়লেও তারপর থেকে প্রতি বছরই এ ৬ বিভাগে বিশেষ অবদান রাখা ব্যক্তিদের নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হচ্ছে।

শুরু থেকেই পদার্থ, রসায়ন, সাহিত্য, অর্থনীতিতে নোবেল প্রদান করছে সুইডেনের রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি। অন্যদিকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রদান করে আসছে নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি। প্রতি বছর শান্তিতে নোবেল মনোনীতদের যে তালিকা হয়, সেই তালিকার নাম সুপারিশ করে নরওয়ের পার্লামেন্ট ও রাজনৈতিক দলগুলো।

ইমরান খান অবশ্য এর আগেও একবার শান্তিতে নোবেলের জন্য মনোনীতি হয়েছিলেন। ২০১৯ সালে প্রথমবার নোবেলের জন্য মনোনীতি হন তিনি। সে সময় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ইমরান।

তবে পাকিস্তানের বিগত অন্যান্য প্রধানমন্ত্রীর মতো ইমরানকেও মেয়াদ পূর্ণ করার আগেই বিদায় নিতে হয়েছে। ২০২২ সালের এপ্রিলে পার্লামেন্টে বিরোধী এমপিদের অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হন তিনি।

ক্ষমতা হারানোর পরপরই একের পর এক মামলা হতে থাকে ইমরানের বিরুদ্ধে। ২০২৩ সালের আগস্টে তাকে কারাবন্দি করা হয়। বিভিন্ন মামলায় তাকে ১৪ বছর কারাবাসের সাজা দিয়েছেন আদালত। বর্তমানে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের আদিয়ালা কারাগারে আছেন তিনি।

প্লেবয় থেকে রাজনৈতিক নেতা

১৯৫২ সালে পাকিস্তানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর লাহোরে একটি সম্ভ্রান্ত পশতু পরিবারে জন্ম নেন ইমরান খান। ইকরামুল্লাহ খান নিয়াজি-শওকত খানম দম্পতির একমাত্র পুত্র সন্তান তিনি। ইমরান খান ছাড়াও চার কন্যা রয়েছে এই দম্পতির।

পাকিস্তানে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করার পর যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান তিনি। ভর্তি হন বিশ্ববিখ্যাত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতিতে ডিগ্রি নিয়েছেন তিনি।

তার ক্রিকেট ক্যারিয়ারের উত্থানও এই সময়ই। ইংল্যান্ডের কাউন্টি ক্রিকেটে খেলতেন তিনি। সেই সুবাদে পাকিস্তানের জাতীয় দলেও নিয়মিত হন এবং সেই ধারাবাহিকতায় একসময় জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়কও বনে যান।

গত শতকের সত্তরের দশকের মাঝামাঝি ও শেষের দিকে লন্ডনে তিনি পরিচিত ছিলেন প্লেবয় হিসেবে। ১৯৯৫ সালে যুক্তরাজ্যের ধনকুবের জেমস গোল্ডস্মিথের মেয়ে জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন তিনি। সুলাইমান ইসা ও কাসিম নামে এই দম্পতির দুই সন্তানও রয়েছেন।

২০০৪ সালে তাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। তারপর টিভি সাংবাদিক রেহাম খানকে বিয়ে করলেও অল্প সময়ের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে তাদের। ইমরানের বর্তমান স্ত্রীর নাম বুশরা বিবি।

১৯৯৬ সালে পিটিআই প্রতিষ্ঠার পর থেকে পুরোপুরি রাজনীতিতে সক্রিয় হন তিনি। তবে রাজনীতিতে তার প্রকৃত উত্থান শুরু হয় ২০১১ সাল থেকে। ওই বছর দুর্নীতি, বিদ্যুৎ ঘাটতি, শিক্ষা ব্যবস্থার বিভিন্ন সংকট এবং বেকারত্বের বিরুদ্ধে টানা আন্দোলন শুরু করেন তিনি, যা দেশটির তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়। মূলত পাকিস্তানের গণতন্ত্র ও উন্নয়নকামী তরুণ প্রজন্মের জনপ্রিয়তার ওপর ভর করেই ২০১৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হন ইমরান।

পাকিস্তান ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয় করেছে মাত্র একবার, ১৯৯২ সালে। সেই ক্রিকেট টিমের অধিনায়ক ছিলেন ইমরান খান। গত বছর রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন, পাকিস্তানকে একটি কল্যাণমূলক ইসলামি রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন নিয়ে রাজনীতিতে এসেছিলেন তিনি।

জেএন/এমআর

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM