আগামী ডিসেম্বরের আগেই জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) নেতারা।
গতকাল রোববার বিএনপির ডাকে এক চা-চক্র অনুষ্ঠানে নির্বাচন ইস্যুতে বিএনপির দাবির প্রতি একমত পোষণ করেন তারা।
বিকেল ৪টায় বনানীর হোটেল সেরিনায় বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে বাম নেতাদের এই চা-চক্র বৈঠক হয়।
অনুষ্ঠানে সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সভাপতি শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, কেন্দ্রীয় নেতা মিহির ঘোষ, বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ, কেন্দ্রীয় নেতা রাজেকুজ্জামান রতন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির পক্ষে লিয়াজোঁ কমিটির প্রধান আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু উপস্থিত ছিলেন।
চা-চক্রে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা না করায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাম নেতারা। সংস্কার বিষয়ে বিএনপি, সিপিবি ও বাসদের মধ্যে খুব বেশি প্রার্থক্য নেই বলেও মনে করেন তারা।
তারা বলেন, সংস্কার একটা বড় কাজ। এটা করার দায়িত্ব নির্বাচিত সরকারের। এটা তারাই করবে। অনির্বাচিত সরকার তো করতে পারে না।
অনানুষ্ঠানিক এই বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে সংস্কার বাস্তবায়নের জন্যই যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের পক্ষে মত দেন বাম নেতারা। তারা বলেন, নানান বিষয়ে মতপার্থক্য থাকবে। তবে সিদ্ধান্ত নেবে জনগণ।
জনগণকেই যদি এই সংস্কারে সম্পৃক্ত করা না যায়, তাহলে এসব উদ্যোগ বালুর বাঁধের মতো ভেঙে যাবে। যেটা এখন যে প্রক্রিয়ায় হচ্ছে, তা দীর্ঘস্থায়ী ফল আসবে না। এজন্য দরকার জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা।
সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকার উন্নয়নের দোহাই দিয়ে ক্ষমতায় চিরস্থায়ীভাবে থাকার চেষ্টা করেছিল।
তারা জনগণের মতামতকে তোয়াক্কা করেনি। এখন যদি কেউ অন্য কোনো নামে অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় থাকতে চায়, তাহলে তারাও ওই একই কাতারে পড়বেন।
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, আমরা এবং আমাদের জোট বলে এসেছি, এই বাংলাদেশে জরুরিভাবে একটা নির্বাচিত সরকার দরকার। কারণ, অনির্বাচিত সরকারের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত হলে শঙ্কাটা আরও ঘনীভূত হবে।
৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর ওই দিনই আমরা বিবৃতিতে বলেছিলাম, পূর্ণ গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে হবে।
আমরা অনেকদিন আগেই বলেছি, ডিসেম্বর কেন, ডিসেম্বরের অনেক আগেই সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য, অবাধ নির্বাচনের জন্য যা যা সংস্কার করা দরকার, ওটা করে নির্বাচন করা সম্ভব।
বিএনপি বলছে, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন। আমরা মনে করি, ডিসেম্বরের আগেই বাংলাদেশে নির্বাচন হওয়া সম্ভব। আমাদের প্রধান এজেন্ডা হলো দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করা।
বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, আমরা নির্বাচন চাই। এজন্য আমরা মাঠে তো আছি। নির্বাচনের নামে অনেকে কালক্ষেপণ করছে, তাতে দেশে একটা সংকট বাড়বে। আশা করি, অন্যরাও মাঠে নামবে।
জাতীয় সনদ তৈরির বিষয়ে একমত গণঅধিকার পরিষদ: একই স্থানে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে পৃথক বৈঠকে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন এবং রাষ্ট্রীয় সংস্কারে সব দল ও মতের ঐকমত্যের ভিত্তিতে জাতীয় সনদ তৈরির বিষয়েও একমত হয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের নেতারা।
তারা মনে করছেন, যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হবে, সেসব সংস্কার আগামী ডিসেম্বরের আগে করা সম্ভব। আর যেগুলো করা সম্ভব হবে না, সেগুলো জাতীয় সনদ আকারে সব দলের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি থাকবে।
যারাই ক্ষমতায় আসবে, তারা ওইসব সংস্কার বাস্তবায়ন করবে। তবে এই সংস্কারকে কেন্দ্র করে নির্বাচন পেছানোর কোনো অজুহাত তারা মানবেন না।
বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও মাহফুজ আলমের পদত্যাগ দাবি করে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, তারা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করলে গণঅধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে কর্মসূচি নেওয়া হবে।
বৈঠকে জুলাই হত্যার বিচারে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে নেতারা বলেন, আগামী নির্বাচনের আগে এই বিচার সম্পন্ন করতে হবে।
গণহত্যার বিচার ত্বরান্বিত করতে সবাইকে সোচ্চার হতে কর্মসূচি পালনেরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বৈঠক থেকে।
বৈঠকে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানসহ অন্যরা।
জেএন/পিআর