রুটি ফুরিয়ে যাবে, প্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হয়ে আসবে, কিন্তু বন্ধু? অনন্তযৌবনা! যদি বন্ধুটি হয় ফারুক ইকবালের মতো কেউ। কবি ওমর খৈয়াম রাগ করুক, চট্টগ্রামের ফারুক ইকবাল এমনই। এক আড্ডাতেই ‘গোপন-প্রিয়ার চকিত চাহনি’ দিয়ে মন জয় করে নেওয়া ফারুক ইকবালের ক্যারিয়ার শুরু চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী পত্রিকা পূর্বকোণ দিয়ে। এরপর নতুন ধারার ভোরের কাগজ, তারপর দেশের প্রথম অনলাইন সংবাদ পোর্টাল বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম, তারপর যায়যায়দিনের ব্যুরো চিফ এবং বিগবাজেটের কালের কণ্ঠ। মাঝে স্বল্প যাত্রা বিরতী। থিতু হয়েছেন বাংলাদেশের খবর পত্রিকায়।
বলা হয়, যাঁরা পাহাড়ের হাতছানি উপেক্ষা করতে পারে না, তারা সুযোগ পেলেই ছুটে যায় পাহাড়ের কাছে। ফারুক ইকবাল চট্টগ্রামের সাংবাদিকদের কাছে পাহাড়ের মতোই। চিরতারুণ্য ফারুক ইকবাল সাংবাদিকতার প্রতি অমোঘ এক টান অনুভব করেন।
আমাদের দেশে মফস্বল/জেলাভিত্তিক সাংবাদিকতায় দুটো বড় প্রবণতা আছে। এক. সৃজনশীল, ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো, আবেগী মোনাজাত উদ্দীনীয় ধারা; দুই. আখের গোছানো করপোরেট বেনিয়াপনা সাংবাদিকতা। সাংবাদিক ফারুক ইকবাল নিঃসন্দেহে ‘এক নম্বর’ ধারার সাংবাদিক। তাই তাঁর প্রতি অনেকেরই শ্রদ্ধাভাজনেষু আন্তরিক পক্ষপাত। সাংবাদিক হিসেবে বটেই, প্রেমিক হিসেবেও স্মার্টনেসের অবস্থানে তিনি চট্টগ্রামে এককথায় একমেবাদ্বিতীয়ম্।
সেই ৮৬ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারি পূর্বকোণ পত্রিকায় শিক্ষানবিশ রিপোর্টার হিসেবে যাত্রা শুরু। মেধা ও সৃজনশীলতার সমন্বয়ে হয়েছিলেন প্রতিষ্ঠানটির চিফ রিপোর্টার। ওই সময় পিটিএস মেশিন চালু হওয়ায় কম্পিউটারের সাহায্যে সংবাদের শিরোনাম দেওয়া হতো। তখনকার অত্যন্ত ঝকঝকে আট পৃষ্টার পত্রিকাটি পাঠকমহলে অন্যান্য স্থানীয় পত্রিকার চেয়ে এগিয়ে যায়।
নিজের রিপোর্টিং জীবনের স্মৃতি হাতড়ে জয়নিউজকে বলেন, ‘সহকর্মীর বিয়ের দাওয়াতে যোগ দিতে ট্রেনের একই বগিতে যাচ্ছিলাম ভোরের কাগজের শহিদুল ইসলাম বাচ্চু, বর্তমানে পূর্বকোণের বার্তা সম্পাদক ও প্রেস ক্লাবের সভাপতি কলিম সরওয়ারসহ অনেকে। শ্রীমঙ্গলের শায়েস্তাগঞ্চের মাগুছড়া এলাকার পৌঁছানোর পর কর্তৃপক্ষ জানালেন, সিলেটের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন ট্রেন যোগাযোগ। স্টেশনে নেমে জানতে পারি ভয়াবহ গ্যাস বিস্ফোরণ হয়েছে, ফলে ট্রেন বন্ধ। আগুনের তীব্র উত্তাপে চারদিকে উষ্ণ হয়ে উঠে। মন পড়ে থাকল ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়ার। বিয়ে শেষে বন্ধুরা চলে গেলেও আমি টাকাপয়সা ধার-কর্জ করে থেকে গেলাম। স্থানীয় সাংবাদিকদের সহায়তায় পুরো ঘটনা নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করি। এটি নিয়ে পূর্বকোণে ব্যানার লিডে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। প্রতিবেদন নিয়ে পুরো দেশে তোলপাড় শুরু হয়’।
ফারুক ইকবালের আছে নানা গুণ। বিরতিহীন পানাহার, তুমুল আড্ডাবাজি, কমিটেড সাংবাদিকতা, বহুবল্লভীয় প্রেম; সব মাধ্যমে সমান উজ্জ্বল উপস্থিতি তাঁর। তিনি সবার প্রিয় ফারুক ভাই!