বাংলাদেশের সাতটি পরিত্যক্ত বিমানবন্দর পুনরায় চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।
এ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশ, যাত্রী পরিবহন সক্ষমতা বৃদ্ধি, সড়ক ও রেলপথের চাপ হ্রাস এবং আঞ্চলিক অর্থনীতি চাঙা করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।
এই উদ্যোগে সর্বপ্রথম চালু হতে যাচ্ছে বগুড়া বিমানবন্দর, যেটি চলতি বছরের জুলাই মাসেই চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে।
বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া জানিয়েছেন, পরিত্যক্ত বিমানবন্দরগুলো ধাপে ধাপে সচল করা হবে। যে বিমানবন্দরের অবকাঠামো ও প্রস্তুতি আগে সম্পন্ন হবে, সেটিই আগে চালু করা হবে।
সাতটি পরিত্যক্ত বিমানবন্দর হলো— বগুড়া, লালমনিরহাট, শমসেরনগর, ঈশ্বরদী, ঠাকুরগাঁও, কুমিল্লা এবং তেজগাঁও।
এর মধ্যে লালমনিরহাট ও মৌলভীবাজারের শমসেরনগর বিমানবন্দর চালুর বিষয়ে কারিগরি পরিদর্শন করেছে বেবিচকের একটি চার সদস্যের টিম। তাদের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বগুড়া বিমানবন্দর চালুর পথে
বগুড়া বিমানবন্দর পুনরায় চালু করার সব ধরনের প্রস্তুতি চলছে। যদিও পুরোপুরি বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হতে এক থেকে দেড় বছর সময় লাগতে পারে। তবে বিমানবন্দরটি প্রাথমিকভাবে ছোট আকারে চালু করে পর্যায়ক্রমে সম্প্রসারণ করা হবে।
লালমনিরহাট বিমানবন্দর: বিশাল সম্ভাবনার দ্বারপ্রান্তে
লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক এইচএম রকিব হায়দারের এক চিঠিতে বলা হয়েছে, ব্রিটিশ আমলে ১৯৩১ সালে নির্মিত ৪ কিলোমিটার রানওয়ে-সংবলিত এই বিমানবন্দরটি একসময় দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম বিমানবন্দর হিসেবে বিবেচিত হতো।
বিশাল হ্যাঙ্গার, টারমাক, ট্যাক্সিওয়ে-সহ পূর্ণাঙ্গ অবকাঠামো থাকা সত্ত্বেও এটি দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত। চালু করতে ভূমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হবে না।
লালমনিরহাট ও আশপাশের জেলার আর্থ-সামাজিক অবস্থা উন্নয়নে এই বিমানবন্দর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। পাশাপাশি ভারতের পূর্বাঞ্চল, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হবে, যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
শমসেরনগর বিমানবন্দর: ইতিহাসের সাক্ষী, ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জে অবস্থিত শমসেরনগর বিমানবন্দরটি ১৯৪২ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নির্মিত হয়েছিল। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হলেও এটি এখনো পূর্ণ মাত্রায় বাণিজ্যিকভাবে চালু হয়নি। বর্তমান রানওয়ে ৬০০০ ফুট দীর্ঘ এবং ৭৫ ফুট প্রশস্ত।
সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের যাত্রীচাপ কমাতে এবং মৌলভীবাজার ও পার্শ্ববর্তী জেলার মানুষের যাতায়াত সহজ করতে এই বিমানবন্দর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
আন্তর্জাতিক সম্ভাবনা ও ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লালমনিরহাট বিমানবন্দর ভারতের ‘চিকেনস নেক’-এর কাছাকাছি হওয়ায় অতীতে ভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গির কারণে এটি চালু হয়নি। তবে বর্তমান সরকারের দৃঢ় অবস্থানে তা আর প্রতিবন্ধক হবে না।
বাংলাদেশ-ভারত-নেপাল-ভুটান—এই চার দেশের সংযোগস্থল হয়ে উঠতে পারে লালমনিরহাট, যা আঞ্চলিক বাণিজ্যের হাব হিসেবে বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে।
বিমান পরিবহন খাতের বিশ্লেষক কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, এই বিমানবন্দরটি চালু হলে শুধু বাংলাদেশের নয়, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গেও আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য নতুন মাত্রা পাবে। নেপাল ও ভুটান এর ব্যবহারেও আগ্রহ দেখিয়েছে।
জেএন/পিআর