রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার,দায় কার?

তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য আমদানিকৃত কয়লা ইটভাটায় বিক্রি!

ডায়মন্ড সিমেন্ট কারখানা সংলগ্ন মাঠেই আছে ১৫ হাজার টন কয়লা

অপরাধ ডেস্ক :

অনুমোদনের শর্তে বিনা শুল্কে আমদানিকৃত কয়লা কেবল কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ উৎপাদন কাজে ব্যবহার করার কথা থাকলেও শুল্কমুক্ত কয়লা এখন উচ্চ মূল্যে বিক্রি হচ্ছে চট্টগ্রামের ইটভাটায়। এতে রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।

- Advertisement -

এমন অভিযোগ উঠেছে সরকার অনুমোদিত কয়লা আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান পার্কার বাংলাদেশ লিমিটেডের বিরুদ্ধে।

- Advertisement -google news follower

প্রতিষ্ঠানটির মার্কেটিং ম্যানেজার শাহীন আমদানিকৃত কয়লাগুলো নষ্ট হয়ে গেছে এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহারের অনুপোযোগী উল্লেখ করে খোলাবাজারে বিক্রির কথা স্বীকার করলেও শুল্ক ফাঁকি দেয়ার বিষয়টি তিনি বরাবরই অস্বীকার করে গেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফ্যাসিস্ট সরকারের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রী নসরুল হামিদের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রাম উইমেন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি মনোয়ারা হাকিম আলীর সন্তান আলী রিয়াদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান পার্কার বাংলাদেশ লিমিটেড

- Advertisement -islamibank

আওয়ামী লীগ সরকারের দূর্ণীতিগ্রস্থ আমলাদের সাথে আঁতাত করে ২০২৩ সালের ১০ জুলাই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরিণ বাণিজ্য ১ শাখার একপত্রে ৪৯ লাখ ৬০ হাজার ২৭২ ডলার মূল্যের কয়লা বিনা শুল্কে আমদানির অনুমোদন পেয়ে যায় পার্কার বাংলাদেশ।

অনুমোদনের শর্তে বলা হয়েছে আমদানিকৃত কয়লা কেবল কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ উৎপাদনে নিয়োজিত কাজে ব্যবহার করতে হবে।

এই পত্রের ক্ষমতা বলে বিনা শুল্কে প্রায় ৫৩ হাজার ৯১৬ মেট্রিক টন কয়লা আমদানি করে প্রতিষ্ঠানটি। পরবর্তীতে আমদানিকৃত শুল্কমুক্ত কয়লাগুলো খোলা বাজারে বিক্রির মাধ্যমে সরকারের বিপুল পরিমান রাজস্ব আত্মসাৎ করার অভিযোগ ওঠে।

তার এ কাজে পার্কার বাংলাদেশ ও চট্টগ্রামের অপর এক শিল্প প্রতিষ্ঠান ডায়মন্ড সিমেন্টের কতিপয় অসৎ কর্মকর্তা এবং পতিত সরকারের কতিপয় দোসররা তাকে সহযোগীতা করে গেছেন।

জানা যায়, আমদানিকৃত কয়লার মধ্যে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলায় অবস্থিত ডায়মন্ড সিমেন্ট কারখানা সংলগ্ন মাঠে ১৫ হাজার টন, গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলা সদরে ডায়মন্ড সিমেন্টের মালিকানাধীন জায়গায় ২৮ হাজার ৯১৬ টন ও যশোরে প্রায় ১০ হাজার টন কয়লা মজুদ করে।

মজুদকৃত কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে না দিয়ে উচ্চ দামে বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রি করে দেন। এতে সরকার প্রাপ্য ভ্যাট ট্যাক্স থেকে বঞ্চিত হয়।

ইটভাটায় কয়লা বিক্রি করার বিষয়টি স্বীকার করে জমজম এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. গিয়াস উদ্দীন বলেন, এগুলো বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য আনা হয়েছে কিনা তা আমার জানা নেই। আমি পার্কার বাংলাদেশ লিমিটেড থেকে কয়লা কিনেছি। এগুলোর মালিক এখন আমি। ফলে আমি ইটভাটা নাকি অন্য কাজের জন্য বিক্রি করবো,সম্পূর্ণ আমার ইচ্ছে।

ভ্যাট চালান আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, লোকালে ২/১ গাড়ি করে মাল বিক্রি হয়। আমাদের ভ্যাট চালান বা শুল্ক পরিশোধের কোন কাগজপত্র সরবরাহ করেনি পার্কার বাংলাদেশ।তাপবিদ্যুৎ, আমদানি, কয়লা, ইটভাটা, বিক্রি

সম্প্রতি সরেজমিনে কর্ণফুলী উপজেলার ডায়মন্ড সিমেন্ট ফ্যাক্টরি সংলগ্ন কয়লার ডিপোতে গিয়ে দেখা যায়, ডায়মন্ড সিমেন্টের জমির ওপর কয়লা রাখা হয়েছে, আবার তার পাশেই ডায়মন্ড সিমেন্টের মালিকানাধীন একটি ইটভাটায় এসব কয়লা ব্যবহার হচ্ছে।

এই রাজস্ব ফাঁকির চক্রের সাথে ডায়মন্ড সিমেন্ট জড়িত আছে কিনা জানতে চাইলে ডায়মন্ড সিমেন্টের উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) মো. হাকিম আলী বলেন, আমরা পার্কার বাংলাদেশকে জায়গাটা ভাড়া দিয়েছি, এখানে রাজস্ব ফাঁকির কোন বিষয় আছে কিনা আমাদের জানা নেই।

বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য আনা কয়লা আপনাদের ইটভাটায় ব্যবহার করছেন, এটা অপরাধ কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের ইটভাটার পাশে যেহেতু কয়লা বিক্রি করছে আর আমাদেরও যেহেতু দরকার তাই দুরে না গিয়ে কাছে থেকেই কিনে নিয়েছি। তবে ভ্যাট বা শুল্ক পরিশোধের কোন কাগজ আমাদের দেয়া হয়নি।

তবে পতিত সরকারে তৎকালীন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রী নসরুল হামিদের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত পার্কার বাংলাদেশ লিমিটেড এর চেয়ারম্যান ও ইন্ট্রাকো সিএনজির এমডি আলী রিয়াদ ৫ আগস্টের পর বিদেশে পালিয়ে যাওয়ায় তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

একটি সূত্র জানিয়েছেন, পার্কার বাংলাদেশ লিমিটেড এর চেয়ারম্যান ও ইন্ট্রাকো সিএনজির এমডি আলী রিয়াদ আওয়ামী লীগ সরকার থেকে বিভিন্ন অনৈতিক সুবিধা নিয়েছেন এবং সরকারকে সুবিধা দিয়েছেন।

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ