চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতুর ওপরে পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনের ধাক্কায় একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। এতে শিশুসহ তিনজন নিহত এবং পাঁচজন আহত হয়েছেন।
এর মধ্যে নিহত ২ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- দুই বছরের শিশু আয়েশা এবং উত্তর গোমদন্ডী ২নং ওয়ার্ড বাংলা পাড়ার মুহাম্মদ আবুল মনসুরের একমাত্র ছেলে মুহাম্মদ তুষার(২৯)।
নিহত শিশু আয়েশা রাঙ্গুনিয়া উপজেলার মরিয়মনগরের বাসিন্দা সাজ্জাদ নূর মিঠু ও জুবাইদা ফেরদৌস ইসরার সন্তান। তারা অটোরিকশার যাত্রী ছিলেন। দুর্ঘটনার পর শিশু আয়েশাকে কোলে নিয়ে তার বাবা সাজ্জাদের আহাজারির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সিএনজিটি সিগন্যাল না মেনেই সেতুর ওপরে উঠে গিয়েছিল।
বৃহস্পতিবার (৫ জুন) রাত সাড়ে ১০টার দিকে সেতুর বোয়ালখালী অংশে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলেন- বোয়ালখালী থানার আহলা দরবার শরিফ এলাকার বাবুল আহমেদের ছেলে আরিফ উদ্দিন বাপ্পি (৩৪), আসিফ উদ্দিন (৩০), মেয়ে আসমা আহমেদ (২৫), স্ত্রী আঞ্জুম আরা বেগম (৫৫) এবং তৌহিদ (৩৬)। আহত পাঁচজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে।
জানা গেছে, পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনটি কক্সবাজার থেকে ছেড়ে এসেছে ৭টা ৪৫ মিনিটের দিকে। ট্রেনটি বোয়ালখালী অংশ থেকে শহরের দিকে ব্রিজ পার হয়ে আসার সময় সিগন্যাল দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সিগন্যাল না মেনেই সেতুর ওপরে উঠে যায় একটি অটোরিকশা। দ্রুত গতিতে আসা ওই ট্রেনের সাথে তখন সংঘর্ষ হয়।
চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আফতাব উদ্দিন বলেন, ট্রেনের সঙ্গে কয়েকটি সিএনজি অটোরিকশাসহ বেশ কয়েকটি গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে এক শিশুসহ তিন জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। কয়েকজনকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নিহতদের মধ্যে তুষার নামে এক অটোরিকশাচালক রয়েছে। তার বাড়ি বোয়ালখালী উপজেলায়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কালুরঘাট ফায়ার স্টেশনের ফায়ার ফাইটার আমিনুল ইসলাম। রাতে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে স্টেশন থেকে এম্বুলেন্সসহ দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে। হতাহতদের উদ্ধার কাজ চলমান রয়েছে।
চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (আইসি) নুরুল আলম আশেক জানান, গুরুতর আহত পাঁচজনকে হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সুবক্তগীন বলেন, ‘ট্রেনের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে বেশ কিছু যানবাহন দূর্ঘটনায় পড়েছে। সেতুতে ট্রেন ওঠার পর অপর প্রান্ত থেকে কোন যানবাহন চলাচলের কথা নয়। একে ট্রেন চালকের কোন দোষ থাকার কথা নয়। তারপরও এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়ার পর দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা আনিসুর রহমানকে প্রধান করে একটি চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অপর তিন সদস্য হলেন পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় মেডিকেল অফিসার (ডিএমও), বিভাগীয় প্রকৌশলী-১ (ডিইএন-১) ও বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলী (ডিএমই লোকো)। কমিটি ৬ জুনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, দুর্ঘটনার পর মানুষের আক্রোশ থেকে বাচতে ট্রেনের চালক (লোকোমাস্টার) ও গার্ড পালিয়ে যায়। তাছাড়া ট্রেনের ইঞ্জিনের নিচে বেশ কয়েকটি যানবাহন ঢুকে যাওয়ায় রিলিফ ইঞ্জিন পাঠানো হয়েছে। বিকল্প ইঞ্জিন দিয়েই ট্রেনটিকে প্রথমে চট্টগ্রাম স্টেশনে এনে এরপর ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ব্রিটিশ আমলে নির্মিত কালুঘাট সেতুটি ১৯৫৮ সালে সব ধরনের যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয় তৎকালীন পাকিস্তান সরকার। সংকীর্ণ এই সেতু দিয়ে একসঙ্গে দুই দিকে যানবাহন চলাচল করতে পারে না। এক দিকের যানবাহন আটকে রেখে অন্য পাশের গাড়ি ছাড়া হয়।
জেএন/এমআর