কয়েক দিন ধরে টানা বৃষ্টি। কখনো মুষলধারে, কখনো ঝিরিঝিরি। কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে দিয়ে হওয়া এই টানা বৃষ্টিতে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের কিছু এলাকায় পানি জমে বেড়েছে কর্মব্যস্ত মানুষের দুর্ভোগ আর দুর্দশা।
চট্টগ্রাম নগরে কয়েক দিনের বৃষ্টিতে কিছু এলাকায় হালকা-পাতলা জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। যেসব এলাকার রাস্তাঘাট একটু খারাপ, পানি-কাঁদায় সেসব সড়ক দিয়ে চলাচল দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। পালিশ করা জুতা পরে বের হলে বাসায় ফিরে তা চেনা দায়।
তাছাড়া বৃষ্টিতে অফিসগামী লোকজন এবং রিকশা-ভ্যানচালক, দিনমজুরদের মতো খেটে খাওয়ারা পড়েছে সবচেয়ে বেশি বিপাকে। বাসা থেকে আকাশ পরিষ্কার দেখে ছাতা বা রেইন কোট ছাড়া বের হয়ে রাস্তায় অনেককেই বৃষ্টির দৌড়ানি খেতে হচ্ছে। ভিজতে হচ্ছে অফিস থেকে ফেরার পথেও।
এদিকে তেমন যাত্রী পাচ্ছেন না রিকশাচালকরা। অফিসগামী লোকজন বৃষ্টি থেকে বাঁচতে কম দূরত্বের পথ যেতেও বাসে চড়ে বসছেন।
ফলে আয় কমে রিকশাচালকদের মুখ ফিকে। অনেকে আবার বৃষ্টিতে ভিজে অসুস্থ হওয়ার শঙ্কায় বেকার দিন কাটাচ্ছেন। কাজে বেরোতে পারছেন না দিনমজুররাও।
সরেজমিনে চট্টগ্রাম শহরের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক পরিদর্শণ করে দেখা যায়, শহরের প্রধান সড়কগুলোতেও গণপরিবহনের সংখ্যা একেবারেই নগন্য। বাধ্য হয়ে অনেকে বাড়তি ভাড়া দিয়ে রিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে গন্তব্যে পৌছাতে দেখা যাচ্ছে। কোথাও কোথাও আবার জলজট এবং রিকশা-সিএনজির জটলা দেখা গেছে।
নগরীর জামালখান এলাকার গৃহিণী মজুমদার লাকী সকাল ১১টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগী দেখার উদ্দ্যেশে ঘর থেকে বের হয়েছিলেন।
বাসা থেকে বের হয়েই পড়েছেন বৃষ্টির কবলে। রাস্তার পাশের একটি দোকানের ছাউনিতে দাড়িয়েও যেন অনেকখানি ভিজে গেছেন। পাশে গিয়ে কথা হয় তার সাথে।
তিনি আক্ষেপের সাথে বলছেন, এমন দুর্দশার সময় একটা রিকশা কিংবা সিএনজিও পাচ্ছি না। যাও দুই একটা যেতে ইচ্ছে প্রকাশ করছে তারা ভাড়া চাইছে দ্বিগুনেরও বেশি।
একই সময় কথা হয় নগরের আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকার বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মোনাফ জোয়ারদারের সাথে। তিনিও বললেন বৃষ্টির কারণে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। গাড়ির জন্য অনেক্ষন অপেক্ষা করেও না পেয়ে বাড়তি রিকশাভাড়া দিয়ে পানি মারিয়ে অফিস যেতে হচ্ছে।
এদিকে নগরীর চকবাজার, মেহেদীবাগ, কাপাসগোলাসহ আশপাশের গলিগুলোতে হাঁটুপানি জমে গেছে। এতে ওই এলাকার স্কুলগামী শিক্ষার্থী, অফিসযাত্রী ও দোকানদাররা পড়েছেন চরম দুরবস্থায়। তবে কিছুটা স্বস্তির খবর হলো—নগরের দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতার পরিচিত এলাকা মুরাদপুর, শোলকবহর ও বহদ্দার হাটে এবার তুলনামূলকভাবে পানি জমতে দেখা যায়নি।
এর আগে গত মঙ্গলবার (৮ জুলাই) সকাল থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় চট্টগ্রামে ভারী বর্ষণ শুরু হয়েছে, যা এখনো চলমান। এই বৃষ্টি আরও এক দিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।
এর ফলে জেলার পাহাড়ি এলাকায় ধস এবং নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সেই সঙ্গে ভারী বর্ষণজনিত কারণে চট্টগ্রাম মহানগরীর কোথাও কোথাও অস্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা তৈরি হতে পারে। ৪৪-৮৮ মিমি/২৪ ঘণ্টা) থেকে অতি ভারী (>৮৮ মিমি/২৪ ঘণ্টা) বর্ষণ হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, আজ সারাদিন থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা তবে বৃহস্পতিবার থেকে আবহাওয়ার কিছুটা উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে।
জেএন/পিআর