মেশিন স্বল্পতার কারণে ব্যাহত হচ্ছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে হৃদরোগীদের ইকো সেবা। পুরো হাসপাতালে মাত্র একটি ইকোকার্ডিওগ্রাফি মেশিন থাকায় বিপাকে পড়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। রোগীদের সেবা দিতে তারা হিমশিম খাচ্ছে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, উচ্চ কম্পাংকের শব্দতরঙ্গ বা আলট্রা সাউন্ডের প্রতিধ্বনি ব্যবহার করে হৃৎপেশীর সঞ্চালন, ভাল্ব ও প্রকোষ্ঠের বর্তমান অবস্থা এবং হৃদপিণ্ডের সংকোচন ও সম্প্রসারণের মাধ্যমে রক্তপ্রবাহ পর্যবেক্ষণ করা হয় ইকোকার্ডিওগ্রাফি পরীক্ষায়। সাধারণভাবে এটি ‘ইকো’ নামেও পরিচিত। এ পরীক্ষার খরচ কিছু বেশি। হৃদরোগীর বর্তমান অবস্থা বুঝে করণীয় নির্ধারণে এ পরীক্ষা করা হয়। এছাড়া হৃদপিণ্ডের ভাল্বের জটিলতায় ভুগছেন এমন রোগীর অগ্রগতি নির্ণয় কিংবা অস্ত্রোপচার পরবর্তী রোগীর অবস্থা বুঝতেও পরীক্ষাটি করা হয়।
হৃদরোগীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ এ পরীক্ষা করতে চমেক হাসপাতালে তিনটি ইকোকার্ডিওগ্রাফি মেশিন ছিল। কিন্তু দুইটি মেশিন অনেক আগেই বিকল হয়ে গেছে। এখন একটি মেশিন দিয়েই রোগীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে। এতে রোগীরা পড়েছেন ভোগান্তিতে।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, হাসপাতালে দৈনিক ৫৫-৬০ জন রোগীর ইকো পরীক্ষা করা হয়। এরমধ্যে হৃদরোগ বিভাগের রোগী থাকে ৩৫-৪০ জন। বাকিরা অন্যান্য বিভাগ থেকে রেফারেন্স নিয়ে আসে। কিন্তু মাত্র একটি মেশিন থাকায় অনেকেই চমেক হাসপাতালে ইকো পরীক্ষা করাতে পারে না। অনেকের সিরিয়াল পড়ে ১৫-২০ দিন কিংবা একমাস পর। ফলে অনেকে বেসরকারি হাসপাতালে ইকো পরীক্ষা করাতে বাধ্য হয়। কিন্তু সেখানে খরচ পড়ে বেশি।
নগরের বেটারিগলির বাসিন্দা টিটু দাশ জয়নিউজকে বলেন, কিছুদিন আগে আমার বুকে ব্যথা অনুভব করায় চিকিৎসা নিতে চমেক হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের আউটডোরে যাই। সেখানে ডাক্তার আমাকে ইকো পরীক্ষা করাতে বলেন। কিন্তু ইকো করাতে গেলে সেখানে জানানো হয় আমার সিরিয়াল একমাস পরে। এর আগে অনেকেই সিরিয়াল দিয়ে আছেন। পরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ১ হাজার ৪০০ টাকা দিয়ে ইকো করাই। অথচ চমেক হাসপাতালে করালে মাত্র ২০০ টাকা খরচ পড়ত।
ইকো মেশিনের স্বল্পতার বিষয়টি স্বীকার করে হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. রিজোয়ান রেহান জয়নিউজকে বলেন, যখন তিনটি মেশিন ছিল, তখন আমরা সবাইকে ভালোভাবে সেবা দিতে পারতাম। কিন্তু এখন ইকো মেশিন মাত্র একটি। এ মেশিন দিয়েই দৈনিক ৬০ জন রোগীর ইকো করাতে হচ্ছে। লাগাতার ২০টির বেশি ইকো করলে মেশিনটি গরম হয়ে যায়। তাই কিছুক্ষণ বন্ধ রাখতে হয়। ফলে চাইলেও সব রোগীকে সেবা দেওয়া সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে আমরা কার্ডিওলজি বিভাগের সিরিয়াস রোগীদের প্রাধান্য দিই। ফলে অন্যান্য বিভাগের রোগীদের একটু অপেক্ষা করতে হয়। নতুন মেশিন চলে আসলে এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চমেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আখতারুল ইসলাম জয়নিউজকে বলেন, ইকো মেশিনের স্বল্পতার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানানো হয়েছে। শীঘ্রই নতুন ইকো মেশিন চলে আসবে। তখন আরো বেশি রোগীকে আমরা ইকো সেবা দিতে পারব।