স্পন্সর প্রতিষ্ঠান অর্থায়ন বন্ধ:

স্মার্ট স্কুল বাস সার্ভিস চালু রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা জেলা প্রশাসনের

অর্থসংকটে হিমশিম খাচ্ছে বিআরটিসি

অনলাইন ডেস্ক

চট্টগ্রাম শহরে শিক্ষার্থীদের জন্য চালু হওয়া দেশের প্রথম ‘স্মার্ট স্কুল বাস’ সেবাটি অর্থসংকটের কারণে পরিচালনা কঠিন হলেও শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে চ্যালেঞ্জ নিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।

- Advertisement -

বাসগুলো পরিচালনা বন্ধ করার কোনো পরিকল্পনা নেই জানিয়ে জেলা প্রশাসন থেকে বলা হয়, স্মার্ট স্কুল বাস সার্ভিসটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেড অর্থায়ন বন্ধ করে দেওয়ায় সেবাটির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে এটা সত্য।

- Advertisement -google news follower

তবে শিক্ষার্থীদের সুবিধার্তে এ সেবাটি চালু রাখার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আর্থিক সংকট কাটাতে নতুন স্পন্সর প্রতিষ্ঠান জোগাড়ের চেষ্টার পাশাপাশি এ সার্ভিসের সুবিধা নেওয়া ২২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথেও ভাড়া আদায়ের বিষয়ে আলোচনা চলছে জানায় জেলা প্রশাসন।

জানা গেছে, ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) যৌথভাবে এই সেবাটি চালু করে।

- Advertisement -islamibank

বর্তমানে ৭৮ জন যাত্রীর ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ১০টি ডাবল ডেকার বাসের মাধ্যমে শহরের বাহাদ্দারহাট, মুরাদপুর, নিউ মার্কেট, চকবাজার, চেরাগি পাহাড় ও কোতোয়ালিসহ গুরুত্বপূর্ণ ১০টি রুটে প্রতিদিন স্কুল শিক্ষার্থীদের আনা-নেওয়া করা হয়।

জিপিএস ট্র্যাকার, জিআইএস প্রযুক্তি, ডিজিটাল হাজিরা ডিভাইস ও আইপি ক্যামেরা স্থাপন করে এসব বাসকে ‘স্মার্ট’ স্কুল বাস নামকরণ করা হয়।

শিক্ষার্থীরা বাসে উঠলেই অভিভাবকদের মোবাইলে তাৎক্ষণিক বার্তা পৌঁছে যায় এবং বাসের চলাচল তারা রিয়েল টাইমে ট্র্যাক করতে পারেন।

ব্যক্তিগত পরিবহন না থাকা পরিবারগুলোর মধ্যে স্মার্ট বাস সেবাটি বিশেষভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠে এবং এই সেবা শিক্ষার্থীদের নিরাপদ যাতায়াতের পাশাপাশি শহরের ট্রাফিক জট কমাতেও ভূমিকা রাখছে বলে প্রশংসিত হয়েছে।

তাছাড়া স্মার্ট বাস সার্ভিস পরিচালনা, এ ধারণার জন্য ‘স্মার্ট জেলা উদ্ভাবন চ্যালেঞ্জ-২০২৩’ এর আওতায় প্রথম পুরস্কার পেয়েছিল চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।

জানা গেছে, বিশেষ এই উদ্যোগ পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের খরচের জন্য জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেড দুই বছরের একটি চুক্তির আওতায় পৃষ্ঠপোষকতা করতে সম্মত হয়।

প্রতিষ্ঠানটি মোট ১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় এবং ২০২৪ সালে ৭২ লাখ টাকা পরিশোধও করে। তবে সম্প্রতি চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেডের ডেপুটি হেড অব ফ্যাসিলিটিজ অ্যান্ড এস্টেট মো. গোলাম মক্তাদির জানান, চলমান অর্থনৈতিক সংকটের কারণে ২০২৫ সালের বাকি অর্থ অনুদান দেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব হবে না।

হঠাৎ করে স্পন্সর প্রতিষ্ঠান অর্থায়ন বন্ধ করে দেওয়ায় স্মার্ট স্কুল বাসের বিপুল পরিচালন ব্যয় নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে জেলা প্রশাসন ও বিআরটিসি।

বাসে ভাড়া সংগ্রহের জন্য ফেয়ার বক্স বসানো হলেও শিক্ষার্থীদের স্বেচ্ছায় দেওয়া ৫ টাকার অনুদান ছিল অনিয়মিত। ফলে সেবাটি প্রায় পুরোপুরি পৃষ্ঠপোষকতার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।

পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান অর্থায়ন বন্ধ করার পর বিআরটিসি নিজস্ব তহবিল থেকে খরচ বহন করছে। গত ছয় মাসে প্রতিষ্ঠানটি ৪২ লাখ টাকা ভর্তুকি দিয়েছে, যা এখন প্রায় শেষের পথে।

বিআরটিসি’র চট্টগ্রাম বাস ডিপোর অপারেশন ম্যানেজার মো. জুলফিকার আলী বলেন, “২০২৪ সালে আমরা সকল শিক্ষার্থীর নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করেছি।

কিন্তু ২০২৫ সালে এসে আমরা চরম অর্থসংকটে পড়েছি। চালক ও সহকারীদের সাত মাস ধরে বেতন দেওয়া সম্ভব হয়নি। প্রতিদিনের জ্বালানির খরচ চালানোর মতো টাকাও নেই।” “আর্থিক সহায়তা ছাড়া এই সেবা আর বেশি দিন চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।”

এদিকে বাস সেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে তৈরি হয়েছে উদ্বেগ। গুঞ্জন উঠে শিক্ষার্থীদের কাছে জনপ্রিয় এই বাস সার্ভিস আর্থিক সংকটে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

তবে এ বিষয়টা নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের এখনই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই জানিয়ে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. শরিফ উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, স্মার্ট বার্স সার্ভিসের জ্বালানি খরচ মেটাতে নতুন স্পন্সর সৃষ্টির জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চেষ্টা চলছে।

পাশাপাশি সেবাটি চালু রাখার জন্য ইতিমধ্যে বাসগুলো ব্যবহারকারী ২২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বৈঠক করেছে জেলা প্রশাসন। প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সাথে আলোচনায় উল্লেখ হয়, শিক্ষার্থীরা তাদের বেতনের সঙ্গে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাসের ভাড়া পরিশোধ করবে।

জেএন/পিআর

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ